দুর্দান্ত জয়ের পর করুণ পরাজয় কেন?

দুর্দান্ত জয়ের পর করুণ পরাজয় কেন?

ছবি: সংগৃহীত

ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ও ১১৭ রানে হারল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ এ ড্র হলো। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ সিরিজ হারেনি।

তবে প্রথম ম্যাচে জয়ের পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যে আশা দেখিয়েছে, দ্বিতীয় ম্যাচে সমর্থকদের বাস্তবতায় ফিরিয়ে এনেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

নিউজিল্যান্ড প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে শুরু থেকেই এম ভাবে খেলেছে বাংলাদেশ কোনো সেশনেই নিউজিল্যান্ডের সাথে সুবিধা করতে পারেনি।

প্রথম ইনিংসে টসে হেরে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৫২১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর বাংলাদেশ দেড় দিনের মধ্যে দুইবার অলআউট হয়ে গেল- ১২৬ ও ২৭৮ রানে। আজকের দিনের ১৩ ওভার বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে।

এই ম্যাচ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান রস টেইলরের ক্যারিয়ার শেষ হলো। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন টম লাথাম, নিউজিল্যান্ডের এই টেস্ট দলের অধিনায়ক ২৫২ রান করেছেন এবং ৬টি ক্যাচ নিয়েছেন।

সিরিজ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন ডেভন কনওয়ে। সিরিজের সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় আছেন টম লাথাম, ডেভন কনওয়ে এবং লিটন দাস।

উইকেট শিকারীদের তালিকায় নয় উইকেট নিয়ে যৌথভাবে ১ নাম্বারে আছেন ট্রেন্ট বোল্ট ও এবাদত হোসেন, কাইল জেমিসন আটটি উইকেট নিয়েছেন।

দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের এমন ভরাডুবি কেন
প্রথম টেস্ট ম্যাচে মাউন্ট মঙ্গুইয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে সাড়া ফেলে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জয় বেশ কঠিন একটি কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মুমিনুল হকও ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, যদি ম্যাচের আগে বলতেন যে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ জিতবেন সেক্ষেত্রে অনেকে হেসে উড়িয়ে দিত।

প্রথম টেস্টের মোমেন্টাম থেকে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলের খেলায় এত পরিবর্তনের একটা বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে উইকেটকে।

ক্রাইস্টচার্চের উইকেটে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যথাযথ ব্যবহার করতে পারেননি সুযোগ।

বিশেষত বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় নিউজিল্যান্ডের পেস বোলারদের সুইং ও বাউন্স দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা উইকেটের মান অনুযায়ী গতি ও সুইং কাজে লাগাতে পারেনি।

নিউজিল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক টম লাথামও আজকের ম্যাচ শেষে বলেছেন, দুই ম্যাচে দুই দলের পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে পেস বোলাররা।
'পেস বোলাররা এগিয়ে এসেছে। অধিনায়ক হিসেবে এটাই চাইছিলাম।'

দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ১৯টি উইকেট নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের পেস বোলাররা, একটি উইকেট নিয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা রস টেইলর।

আরেকটু প্রতিরোধ গড়তে পারত বাংলাদেশ
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শুরেুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।

১১ রানে চার উইকেট হারানোর পর আর এই ইনিংসে ইতিবাচক কিছু করতে পারেনি।

ইয়াসির আলী ৫৫ ও নুরুল হাসান সোহান ৪১ রান তুলে আউট হন।

১২৬ রান করে বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ছোট ছোট আকারে প্রতিরোধ গড়তে থাকে কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান তুলনামূলক সহজ বলেই ভুল শট খেলে আউট হন।

যেমন সাদমান ইসলাম কাইল জেমিসনের লেগসাইডে পায়ের বাইরের বল ব্যাট দিয়ে টোকা দিয়ে উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।

নাজমুল হোসেন শান্ত লেগসাইডের শর্ট বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ফাইন লেগে, এই শটের জন্যই সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট।

অধিনায়ক মুমিনুল হকও অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল খোঁচা মেরে স্লিপের হাতে পাঠান।

আর নুরুল হাসান সোহান লিটন দাসের সাথে বেশ ভালো একটি জুটির মধ্যেই একটি বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন, যা ম্যাচের ওই পরিস্থিতিতে বেমানান ছিল।

তবে লিটন দাস আজ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন দিনাজপুরের এই ক্রিকেটার।

গত ১০ টেস্টের ৮টিতেই ৫০ বা তার চেয়ে বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন লিটন দাস, যার মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি আছে।
সূত্র : বিবিসি