ইবি ফটকের কৃষ্ণচূড়া গাছ কর্তন, লাল গালিচার বিদায়

ইবি ফটকের কৃষ্ণচূড়া গাছ কর্তন, লাল গালিচার বিদায়

ইবি ফটকের কৃষ্ণচূড়া গাছ কর্তন, লাল গালিচার বিদায়

কুঠার, করাত দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে একটি গাছে। চারপাশে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একদল ছাত্র-ছাত্রী। তাঁদের চোখেমুখে স্বজন হারানোর ছাপ। কারো চাহনিতে মেনে নিতে না পারার আক্ষেপ। কুঠার হাতে থাকা মানুষটিকে দেখেও মনে হচ্ছে যেন কারো কবর খনন করছেন তিনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটকের কৃষ্ণচূড়া গাছটি কাটার সময় শনিবার সকালে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা গাছটির বিদায় দেখতে জড়ো হন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। অনেকেই মুঠোফোনে গাছটির শাখা-প্রশাখা কর্তনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। বছর খানেক আগে জীবনাবসান ঘটে গাছটির। এরপর থেকে পাতাহীন রিক্ত শাখা-প্রশাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গাছটি।

বসন্তে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভায় রঙিন হয়ে উঠত প্রধান ফটক। ভেতরে প্রবেশ করা বিদ্যার্থীদের জন্য যেন এটি পরিণত হয়েছিল লাল গালিচায়। বিস্তৃত শাখা-প্রশাখা মেলে আগলে রেখেছিল ফটক প্রাঙ্গনকে। যা এখন শুধুই ইতিহাস। গাছটির ফুল দেখে অনেকেরই ভাষ্য ছিল, অন্য কোথাও এত ফুল সমৃদ্ধ কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখেননি তারা। ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে গাছটির প্রেমে পড়ার কথাও জানান শিক্ষার্থীদের অনেকে। হাজারো শিক্ষার্থীর সেলফি ও ছবিতে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়ার গাছটি এখন শুধুই ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অবহেলা অযত্নে মৃত্যু হয়েছে গাছটির। তারা একই স্থানে আবারো একটি নতুন কৃষ্ণচূড়া রোপনের দাবি জানান।

সকালে গাছটি কাটা শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছ কাটার কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন অনেকে। গাছটিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে আবেগী ক্যাপশন দেন তারা। এসব পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা গাছটির বিদায়ে আবেগমাখা নানা মন্তব্য করেন। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী ফেসবুক লাইভে আবেগপ্রবণ ধারাভাষ্যের সাথে গাছটি কাটার দৃশ্য প্রচার করেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুকিয়ে যাওয়া ডাল-পালা ভেঙ্গে দূর্ঘটনার আশঙ্কায় গাছটি কাটা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গাছটির মৃত্যুতে আমরাও মর্মাহত। একই স্থানে খুব দ্রুতই আরেকটি কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো হবে এবং সঠিক পরিচর্যা করা হবে যেন পূর্বের গাছটির অভাব পূরণ হয়।’