শাবি : প্রশাসনিক ভবনে তালা, হল ত্যাগের নির্দেশ অমান্য করছে শিক্ষার্থীরা

শাবি : প্রশাসনিক ভবনে তালা, হল ত্যাগের নির্দেশ অমান্য করছে শিক্ষার্থীরা

শাবি : প্রশাসনিক ভবনে তালা, হল ত্যাগের নির্দেশ অমান্য করছে শিক্ষার্থীরা

 শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল ছাড়ার কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রত্যাখান করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।

উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের একটি আবাসিক হলে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশী হামলার পটভূমিতে এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।কয়েকশো ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভনের কাছে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর রোববার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আবার সোমবার দুপুরের মধ্যে আবাসিক হলগুলো ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মেনে ছাত্র-ছাত্রীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল থেকেই বিক্ষোভ করছেন।

বিক্ষোভকারীরা আবাসিক হলগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। অব্যাহত বিক্ষোভ থেকে এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক ভবনগুলোতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।বিক্ষোভকারী একজন ছাত্রী নাম পরিচয় প্রকাশ না শর্তে বলেছেন, আন্দোলনের অংশ হিসাবে তারা হল ছেড়ে দেয়ার কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রত্যাখান করেছেন।সেজন্য তারা প্রশাসনিক ভবনগুলোতে তালা লাগিয়েছেন বলে ঐ শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন।

"প্রশাসনিক ভবনগুলোতে তালা দিয়েছি। যেহেতু শিক্ষাভবনে এখন ভর্তি কার্যক্রম চলছে, সেই কার্যক্রমে আমরা ব্যঘাত ঘটাচ্ছি না। আমরা অন্য প্রশাসনিক ভনে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তালা দিয়েছি। আমাদের ওপর হামলার প্রতিবাদেই এই আন্দোলন।"

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীরা দুর্ব্যবহার করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের হলে প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন গত বৃহস্পতিবার।দু'দিন আগে সেই আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্য শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।

সেই হামলার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।এরপর গত রোববার বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে এবং রাবার বুলেট ছুৎড়লে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।

উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে সোমবার দুপুরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল।কিন্তু কয়েকশো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখে এখন বিশ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

তাদের একজন শিক্ষার্থী তাদের এমন দাবির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলছিলেন, "আমরা নিরস্ত্র ছিলাম। আমরা শিন্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু উপাচার্য ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থাতেই আমরাদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে। সেজন্য আমরা এখন ভিসির পদত্যাগ দাবি করেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।"বিক্ষোভে পুলিশের হামলার ব্যাপারে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার কারণে পুলিশ এধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।

কিন্তু বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে বিনা উস্কানিতে এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।এই হামলার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা চলছে।ঘটনার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, তারা শিক্ষার্থীদের ওপর বল প্রয়োগ করে নয়, আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তাদের সেই চেষ্টা হবে, শিক্ষার্থীরা যাতে এখন আপাতত হল ছেড়ে দেয়।"শিক্ষার্থীদের সব দাবি সব মেনে নেয়া হয়েছে। যে হলে প্রভোস্টের পদত্যাগ তারা চয়েছিল। সেই প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন।"

এখন শিক্ষার্থীরা যে উপাচার্যেরই পদত্যাগ চাইছেন - সে ব্যাপারে অধ্যাপক আহমেদ বলেন, "তারা এখন যে দাবি করছে, তাতে আমাদের বক্তব্য নাই। এখন কী কারণে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ চাইছে হঠাৎ করে। তারা চাইতেই পারে।"

উপাচার্য অধ্যাপক আহমেদ আরও বলেন, "তবে অনেক শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে চলে গেছে। এখন যারা আন্দোলন করছে, তাদের সাথে বহিরাগত অনেকে যোগ দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে তারা হলে আটকে রেখেছে।"আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাউকে জোর করে হলে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।তারা বলেন, যে শিক্ষার্থীরা হলে ছেড়ে যেতে ছেয়েছে, তাদের তারা কোন বাধা দেননি।

যদিও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচারর্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আর বল প্রয়োগ না করার কথা বলছেন।কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।

সূত্র : বিবিসি