বন্ধ স্কুল-কলেজ, চলবে বাণিজ্য মেলা, বইমেলা, বিপিএল

বন্ধ স্কুল-কলেজ, চলবে বাণিজ্য মেলা, বইমেলা, বিপিএল

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে শুক্রবার নতুন ছয় দফা বিধি-নিষেধ সম্বলিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা এসব বিধি-নিষেধ কীভাবে কার্যকর হবে, শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বাংলাদেশে মাস খানেক যাবত করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১০ই জানুয়ারি ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঐ নির্দেশনার দুই সপ্তাহের মধ্যে আরোপ করা হলো নতুন ছয় দফা বিধি-নিষেধ।

কী আছে নতুন বিধি-নিষেধে?

শুক্রবারে জারি করা ছয় দফা বিধি-নিষেধ অনুযায়ী:

২১শে জানুয়ারি থেকে ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

স্কুল, কলেজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যে কোনো সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে একশো জনের বেশি জনসমাগম করা যাবে না। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে টিকা সনদ অথবা আগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআর টেস্টের রিপোর্ট সাথে রাখতে হবে।

সব অফিস, শিল্প কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে।

বাসার বাইরে সব জায়গায় বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

নির্দেশনাগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা, তা স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদারক করবে।

যেভাবে কার্যকর হবে বিধি-নিষেধ

বাংলাদেশে প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার পর গত সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়।

আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা লক্ষ্য করেছি স্কুলের সংক্রমণ হার বেড়ে যাচ্ছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত হচ্ছে এবং তারা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এটা আশঙ্কাজনক।"

"সে কারণে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে তাঁর সম্মতি সাপেক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দুই সপ্তাহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।"

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পাশাপাশি যে কোনো ধরণের অনুষ্ঠানে একশো জনের বেশি জনসমাগম করতে পারবে না বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মেলা, বইমেলা ও বিপিএল কীভাবে চলবে?

ঢাকায় বাণিজ্য মেলা চলছে, শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, আগামী মাসে একুশে বইমেলাও শুরু হবার কথা রয়েছে।

এই অনুষ্ঠানগুলোতে জনসমাগম কীভাবে একো জনের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব -এমন প্রশ্নও ওঠে সংবাদ সম্মেলনে।

এই প্রশ্নের উত্তরে মি. মালেক বলেন, "খেলা যেহেতু স্টেডিয়ামে হয়, সেখানে তো একশোর বেশি লোক যেতে পারবে না - এমন বলা যায় না।"

"তবে সেখানেও টিকার সনদ অথবা পিসিআর টেস্টের সনদ নিয়ে যেতে হবে, এছাড়া সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। মেলার ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।"

তিনি জানান, বইমেলা কীভাবে পরিচালিত হবে, সেবিষয়ে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সব পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, রেস্টুরেন্টেও টিকা সনদ বা পিসিআর টেস্ট সনদ নিয়ে যেতে হবে।

যেসব এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেসব এলাকার মানুষকে বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান মি. মালেক।

"যেসব জায়গায় সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে সংক্রমণ বাড়ার কারণ হল সেসব জায়গায় মানুষ বিধি-নিষেধ মানছে না। সেসব জায়গায় স্থানীয় প্রশাসনকে জোরদার কার্যক্রম করতে হবে। যদি বাড়তি উদ্যোগ নিতে হয়, প্রশাসন তা নেবে।"

অফিস চলবে অর্ধেক লোকবল নিয়ে

সংক্রমণের বিস্তার রোধে অফিস-আদালত অর্ধেক লোকবল নিয়ে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান জাহিদ মালেক।

তবে এই সিদ্ধান্ত কবে থেকে বাস্তবায়ন হবে বা কতদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি মি. মালেক।

"অফিস-আদালত অর্ধেক লোক দিয়ে কাজ করবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সেটার নোটিস শীঘ্রই চলে যাবে এবং এটি কার্যকর হবে।"

মহামারির মধ্যে কর্মক্ষেত্রে মানুষের যাওয়া আসা সহজ করার জন্য এবং মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণ পরিবহনে চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে অফিস আদালত অর্ধেক লোকবল নিয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি

বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয় এবং ঐ মাসেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

এরপর ঐ বছরের অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও বছরের শেষদিকে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।

গত বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে আবারো বাড়তে শুরু করে আক্রান্ত শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও আক্রান্ত শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয় অগাস্টে।

২০২০-এর মত ২০২১ সালের শেষদিকেও সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে।

তবে গত তিন সপ্তাহে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে যেখানে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৭০জন, জানুয়ারির বিশ তারিখ সেই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে।

তিন সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত শনাক্তের হারও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।

৩১শে ডিসেম্বর আক্রান্ত শনাক্তের হার ছিল ২.৪৩ ভাগ, ২০শে জানুয়ারি সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২৬.৩৭ ভাগে।

সূত্র: বিবিসি