রাশিয়ার আক্রমণ আসন্ন : ভিন্নমত ইউক্রেন ও ন্যাটোর

রাশিয়ার আক্রমণ আসন্ন : ভিন্নমত ইউক্রেন ও ন্যাটোর

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের নেতা এবং তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহকারীরা রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের উদ্দেশ্যকে তাদের অনেক পশ্চিমা প্রতিপক্ষের থেকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করছেন। আট বছর ধরে রাশিয়ার ক্রমাগত উস্কানি এবং পূর্ব ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরে তারা কি আরো বেশি নির্বিকার হয়ে পড়ছে নাকি তাদের রাশিয়ান প্রতিপক্ষকে ঠিক মতো বুঝতে পারছে না?

হোয়াইট হাউজের মতে, ওয়াশিংটন এবং লন্ডন উভয়ই সতর্ক করেছে যে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের নির্দেশ দেবেন এমন আশঙ্কা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েক সপ্তাহ ধরে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন যে রাশিয়া আগামী মাসে ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে এবং তিনি বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেন্সকির সাথে ফোনে আলোচনায় এই বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করেছেন।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা সচিব, বেন ওয়ালেস বলেন, তিনি ‘আশাবাদী নন’ যে ইউক্রেনে রাশিয়ার অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাবে। তিনি বার্লিন সফরের সময়ে বিবিসিকে বলেন যে এখনো ‘একটি সুযোগ’ আছে আক্রমণ থামানোর, তবে বলেন, ‘আমি আশাবাদী নই।’

পশ্চিমা শক্তিগুলোকে শঙ্কাবাদীতার জন্য অভিযুক্ত করে রাশিয়া এ কথা অস্বীকার করেছে যে তারা ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ক্রেমলিন জোর দিয়ে বলেছে যে ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সৈন্য মোতায়ন করা হয়েছে শুধুমাত্র মহড়ার জন্য।

কিন্তু জেলেন্সকি সন্দেহ করছেন যে মস্কো একটি পূর্ণ আক্রমণ শুরু করবে না এবং গত এক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান তীব্রতার সাথে ইউক্রেন এবং ইউরোপের বিরুদ্ধে যে মানসিক ও মিশ্রিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারই অত্যন্ত পরিশীলিত রূপ ব্যবহার করবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন, রাশিয়া, জার্মানি এবং ফ্রান্সের কর্মকর্তাদের মধ্যে বুধবারের বৈঠকের আগে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বৈঠক ‘নরম্যান্ডি ফর্ম্যাট’ হিসাবে পরিচিত-পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল নিয়ে আবারো আলোচনা করার জন্য এ বৈঠক হয়। ওই অঞ্চলটির প্রায় অর্ধেক ২০১৪ সালে রাশিয়ান সৈন্য এবং সশস্ত্র স্থানীয় সেনা দ্বারা দখল করা হয়েছে।

শুক্রবার বিদেশী মিডিয়ার বিভিন্ন মূল্যায়ন এবং বাইডেনের সাথে সম্ভাব্য মতভেদ সম্পর্কে একটি সংবাদ সম্মেলনে জিজ্ঞাসা করা হলে, জেলেন্সকি ইউক্রেনের অর্থনীতি নিয়ে তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে একটি আসন্ন আক্রমণের কথাবার্তা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য, সম্ভাব্য আক্রমণের প্রশ্নটি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য অংশীদারদের থেকে কম ক্ষতিকর নয়’।

তবে তিনি অভিযোগ করেছেন যে মিডিয়া এমন ধারণা দিচ্ছে যে আমাদের রাস্তায় সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে আছে এবং ‘বিষয়টি সেরকম নয়’। তিনি বলেন যে ইউক্রেনের ‘এই আতঙ্কের দরকার নেই’ কারণ এটি অর্থনীতির ক্ষতি করছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বর্তমান অর্থনীতি হারাতে পারি,’।

গত সপ্তাহে যখন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া তাদের দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তখন জেলেন্সকি এবং তার সহযোগীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, কিছু কূটনৈতিক কর্মীদের আগেভাগেই প্রত্যাহার করা হচ্ছে, এর প্রয়োজন নেই।

একজন কর্মকর্তা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন যে দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি ইউক্রেনের সাধারণ অধিবাসীদের শঙ্কামুক্ত করার প্রচেষ্টাকে খর্ব করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তাদের নাগরিকদেরও ইউক্রেন ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, জেলেন্সকি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে দূতাবাস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন, বলেছেন কর্মীদের প্রত্যাহার একটি ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ এবং এমন কিছু যা রাশিয়া, ভয় দেখানো এবং অস্থিতিশীল করার জন্য ব্যবহার করতে পারে।

অর্থনীতি এবং ইউক্রেনের জনগণের মনোবল নিয়ে উদ্বেগ ছাড়াও, পুতিনের কৌশল নিয়ে, ওয়াশিংটন এবং লন্ডনের সাথে কিয়েভের মতবিরোধে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে । তাছাড়াও কিয়েভ সন্দেহ করে যে রাশিয়া সামরিক শক্তি বৃদ্ধি সম্পন্ন করার অতটা কাছাকাছি নয় যে রাশিয়া পরিপূর্ণ আক্রমণ শুরু করতে পারবে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্র কুলেবার মতে, রাশিয়ার কাছে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালানোর মতো পর্যাপ্ত সেনা নেই। তিনি এই সপ্তাহে সংবাদদাতাদের বলেন, ইউক্রেনের সীমান্তে এবং ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলে রাশিয়ান সৈন্যের সংখ্যা অনেক বেশি, এটি ইউক্রেনের জন্য হুমকিস্বরূপ, ইউক্রেনের জন্য সরাসরি হুমকি, তবে, এই মুহূর্তে, পুরো ইউক্রেনীয় সীমান্তে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের জন্য সংখ্যাটি অপর্যাপ্ত।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা