কূটনীতি দিয়ে কি সম্ভাব্য ইউক্রেন যুদ্ধ ঠেকানো যাবে?

কূটনীতি দিয়ে কি সম্ভাব্য ইউক্রেন যুদ্ধ ঠেকানো যাবে?

কূটনীতি দিয়ে কি সম্ভাব্য ইউক্রেন যুদ্ধ ঠেকানো যাবে?

ইউক্রেনে একটি বিস্তৃত যুদ্ধের চিন্তা করাই মারাত্মক জটিল বিষয়ক, কারণ রাশিয়া দেশটিতে অভিযান চালালে বহু মানুষ যেমন মারা যেতে পারে তেমনি পালাতে হতে পারে আরো অনেককে।এর অর্থনৈতিক মূল্য হতে পারে ভয়াবহ এবং মানবিক পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে বিপর্যয়কর।

এখনো ইউক্রেনকে ঘিরে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে রাশিয়া, আর পশ্চিমারা বলছে রাশিয়া সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে করুণ পরিণতি হবে।তাহলে এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কি কোনো কূটনৈতিক উপায় আছে, যা হবে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই?

কূটনীতিকরা এমন একটি পথের কথা বলছেন যাতে করে যুদ্ধের পথ এড়ানো যায়, কিন্তু সেই পথ আসলে খুঁজে পাওয়া খুব একটা সহজও নয়।

পশ্চিমারা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে প্রভাবিত করতে পারে
বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে রাজি করিয়ে কিছুটা পিছু হটাতে পারে।

মানুষ হতাহতের শঙ্কা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক তৎপরতা দিয়ে তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টাই বেশি কার্যকর হতে পারে, যা তাকে সবচেয়ে খারাপ কিছু থেকে ফিরিয়ে নিতে পারে।পশ্চিমারা যুদ্ধে জড়ালে একটি দীর্ঘমেয়াদী উচ্চমূল্যের যুদ্ধের ঝুঁকিকে তিনি কিছুটা হলেও সমীহ করতে পারেন।

তবে তাকে বিশ্বাস করতে হবে এসবের মূল্য তার অভ্যন্তরীণ সমর্থনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যা তার নেতৃত্বকে হুমকিতে ফেলবে।এছাড়া পশ্চিমারা হয়তো পুতিনকে একটি কূটনৈতিক জয়ের সুযোগ দিতে পারেন, যা তাকে এমনভাবে চিত্রিত করবে যে তিনি ন্যাটোর সামরিক উস্কানিতে উৎসাহিত না হয়ে বরং শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন।

পুতিন দাবি করতে পারেন যে তিনি শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং তার ‘যৌক্তিক নিরাপত্তা উদ্বেগ’ বিষয়টি পশ্চিমা নেতারা গ্রহণ করেছেন।রাশিয়া বিশ্বকে এটিও মনে করিয়ে দিতে পারে যে তারা একটি বৃহৎ শক্তি এবং বেলারুশে তাদের অবস্থান আরো শক্ত হবে।

কিন্তু এসব বিশ্লেষণের সমস্যা হলো পুতিনের অ্যাকশন পশ্চিমাদের ঐক্যবদ্ধ করছে, ন্যাটোকে ক্রমশ রাশিয়া সীমান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশকে ন্যাটোতে যোগ দিতে উৎসাহিত করছে।সমস্যা হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যদি ইউক্রেন নিয়ন্ত্রণ আর ন্যাটোকে হেয় করতে চান, তাহলে তার পিছিয়ে আসার কারণ খুব একটা থাকবে না।

ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি হতে পারে
পশ্চিমারা পরিষ্কার করে বলেছে যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব বা তাদের ন্যাটোতে যোগ দেয়ার অধিকারের মতো কিছু নীতিগত বিষয়ে তারা কোনো সমঝোতা করবে না।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়ে একটি পথ খুঁজে পেতে পারে, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

এটা হতে পারে যে উভয় পক্ষে মিসাইল কমিয়ে আনা বা রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের আত্মবিশ্বাস তৈরি করা এবং সামরিক মহড়া, মিসাইলের স্থাপনের স্থান, অ্যান্টি-স্যাটেলাইট অস্ত্র পরীক্ষায় সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রগুলোতে।রাশিয়া পরিষ্কার করে বলেছে যে ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেয়ার সুযোগ দিয়ে তার জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করতে সে দেবে না।

কিন্তু যদি ন্যাটোর মিসাইল উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা হয়, তাহলে তার মাধ্যমে কিছুটা হলেও রাশিয়ার উদ্বেগকে মূল্য দেয়া হবে।কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য রাশিয়া ইতোমধ্যেই কিছুটা সাফল্য অর্জন করেছে - ইউরোপ যেমন রাশিয়ার বিভিন্ন ইস্যুতে একটি নিরাপত্তা সংলাপ শুরু করেছে।মিনস্ক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে পারে রাশিয়া ও ইউক্রেন।

বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আলোচনার মাধ্যমে এটি হয়েছিল। যেটি করা হয়েছিল পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধ অবসানে।এটা হয়তো কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে কারণ যুদ্ধ চলছে। কিন্তু এটা একটি পথ দেখিয়েছে যুদ্ধবিরতি ও রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে।

পশ্চিমা রাজনীতিকরা বলছেন, মিনস্ক চুক্তির পুনরুজ্জীবন সংকটের নতুন সমাধান হতে পারে। যদিও ওই চুক্তির কিছু বিষয় এখনো বিতর্কিত।ক্রেমলিন বলছে, ইউক্রেনকে অবশ্যই স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে যাতে রাশিয়াপন্থীরা ক্ষমতা পায়। আর কিয়েভ বলছে, মস্কোকে প্রথমে অস্ত্র সরাতে হবে ও রাশিয়ান যোদ্ধাদের সরিয়ে নিতে হবে।

ফিনল্যান্ডের মতো নিরপেক্ষ হতে পারে ইউক্রেন
এমন খবর বেরিয়েছে যে ফ্রান্স কর্মকর্তারা ইউক্রেনকে ফিনল্যান্ড মডেল গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে।স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে এই নীতি গ্রহণ করেছিল ফিনল্যান্ড। তারা স্বাধীন, সার্বভৗম ও গণতান্ত্রিক - এবং ন্যাটোর বাইরে।

কিন্তু ইউক্রেন এমন অবস্থান গ্রহণ করবে?
সম্ভবত নয়, কারণ এ ধরনের নিরপেক্ষতা সেখানে রাশিয়ার প্রভাব বাড়িয়ে তুলবে।

চলতি অচলাবস্থায় স্থিতাবস্থা
এটাও হতে পারে যে এখন যে অবস্থা আছে, সেটিই থাকলো এবং পরিস্থিতির আর অবনতি হলো না।রাশিয়া ধীরে ধীরে তার বাহিনী ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং বলবে যে তার মহড়া শেষ হয়েছে। তবে এ কারণে অনেক সামরিক সরঞ্জামাদি ফেলে যেতে হতে পারে।

মস্কো বিদ্রোহীদের তার সমর্থন অব্যাহত রাখতে পারে। সার্বিকভাবে ইউক্রেনের রাজনীতি ও অর্থনীতি রাশিয়ার অব্যাহত হুমকির কারণে অস্থিতিশীল থাকবে।এর ফলে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি বজায় রাখতে পারবে।এসব দেশের নেতারা ক্রমাগত আলোচনা করবেন রাশিয়ার সাথে, যেখানে অগ্রগতি হবে সামান্যই।

ইউক্রেনকে হয়তো লড়াই চালাতে হবে, কিন্তু অন্তত একটি বড় আকারের যুদ্ধ তো ঠেকানো যাবে। তারপর ধীরে ধীরে সংঘাতের তীব্রতা কমে আসবে।কিন্তু এসবের কোনোটিই সহজ বিষয় নয়, কারণ এর সবগুলোর সাথেই জড়িত আছে সমঝোতার প্রশ্ন।

সূত্র : বিবিসি