বিপ্লবের ৪৩তম বার্ষিকী পালন করছে ইরান

বিপ্লবের ৪৩তম বার্ষিকী পালন করছে ইরান

বিপ্লবের ৪৩তম বার্ষিকী পালন করছে ইরান

ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ৪৩তম বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। শুক্রবার দিবসটি উপলক্ষে দেশজুড়ে মোটর শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন আয়োজনে তা উদযাপন করা হচ্ছে।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন স্থান থেকে ঐতিহাসিক আজাদি স্কয়ারে মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে বিপ্লব বার্ষিকীর আয়োজনে যোগ দিতে ইরানিরা আসতে শুরু করেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাধারণ গণ মিছিলের পরিবর্তনে দ্বিতীয় বছরের মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থাপনাসহ বিশেষ মোটর শোভাযাত্রায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা যার যার গাড়ি বা মোটরসাইকেলে অবস্থান করেই এই শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া ইরানিরা জাতীয় পতাকার সাথে সাথে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি ও ইরাকের বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিশেষ কুদস ফোর্সের সাবেক অধিনায়ক জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ছবি বহন করেন।

শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আমরা হার মানবো না’, ‘শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে’, ‘আমেরিকা মুর্দাবাদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এছাড়া তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেন।

শোভাযাত্রার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক বিবৃবিতে জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং এই ঐক্যকে ভাঙতে পারে এমন পদক্ষেপ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়।ইসফাহান, সিরাজ, হামাদান, মাশহাদ, তাবরিজ, কোমসহ সারাদেশেই একই রকম শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে বিপ্লবের মূল্যবোধকেই অব্যাহত রাখা হবে।’

অপরদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ খতিবজাদেহ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘ইরানের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় আমাদের অবস্থান ও সংকল্প অপরিবর্তিত থাকবে।’

অপরদিকে শুক্রবার বিপ্লব বার্ষিকী উপলক্ষে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ ইবরাহিম রইসি তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় বলেন, ইসলামি বিপ্লব রক্ষায় আল্লাহ ও দেশের জনগণের ওপরই তারা ভরসা করেন, কোনো পাশ্চাত্য শক্তির ওপর তাদের ভরসা নেই।তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবো না এবং আমাদের স্বাধীনতা বিলিয়ে দেবো না। তেমনিভাবে কারো ওপর আমরা জুলুম করবো না।’

গত শতকের ৬০-এর দশক থেকে ইরানে প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিলো দেশটির সাধারণ মানুষ। জনসাধারণের এই বিক্ষোভ সামরিক পন্থায় নির্মমভাবে দমনের প্রচেষ্টা চালায় মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ইরানের শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির প্রশাসন। একইসাথে ইরানিদের বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়া আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনিকে প্রথমে গ্রেফতার ও পরে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়।

কিন্তু এতে না দমে রাজতন্ত্রের পতনের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে ইরানিরা। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে এই বিক্ষোভ আরো প্রচণ্ড আকার ধারণ করে।

বিক্ষোভের জেরে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে দেশত্যাগ করেন ইরানের শাহ। তবে শাহের প্রশাসনের সাথে বিক্ষোভরত ইরানিদের সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। সংঘর্ষের জেরে ইরানজুড়ে প্রতিদিনই বিপুল রক্তপাত ও প্রাণহানি ঘটতে থাকে।

এরই মধ্যে ১ ফেব্রুয়ারি আয়াতুল্লাহ খোমেনি নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসেন। বিক্ষোভকারীদের সাথে শাহের প্রশাসনের সংঘর্ষে রক্তপাত অব্যাহত থাকায় ১১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী বিক্ষোভকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। সামরিক বাহিনীর একাত্মতা ঘোষণার ফলে ইরানে শাহের প্রশাসনের পতন হয় এবং বিক্ষোভকারীরা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

সূত্র : প্রেস টিভি, ইরনা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড ও আনাদোলু এজেন্সি