কুরআনের বর্ণনায় কিয়ামত

কুরআনের বর্ণনায় কিয়ামত

কুরআনের বর্ণনায় কিয়ামত

ইরহড়সাধারণত প্রতিদিন ভোরে এলার্মের শব্দে কিংবা আজানের শব্দে ঘুম থেকে জেগে ওঠার মাধ্যমে আমাদের জন্য সুনির্দিষ্ট হায়াতের একটা নতুন দিনের সূচনা হয়। তারপর নাশতা সেরে কাজে যাওয়া, কাজ শেষ বাড়ি ফিরে লাঞ্চ/ডিনার, আবার রাতে ঘুম; ব্যাস! এই ছক বাঁধা রুটিনেই আমাদের জীবনচক্র। ব্যতিক্রম কিছু অবশ্যই হয়, কিন্তু মূল প্যাটার্ন এটাই।

ভাবুন তো একবার! এরকম কোনো এক ভোরে পরিচিত সেই এলার্মের টোন কিংবা সুমধুর আজানের পরিবর্তে আপনার কানে গগনবিদারক এক ধ্বনির আওয়াজ প্রবেশ করবে, সাথে সাথে আপনার চারপাশ প্রচণ্ডভাবে প্রকম্পিত হবে, আপনি ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখবেন আকাশটাকে তুলোর মতো ছেঁড়া ছেঁড়া মনে হচ্ছে, মহাকাশ খালি চোখে দেখা যাচ্ছে, তারাগুলোও একে একে ঝরে যাচ্ছে, দিনের বেলায়ও রাতের মতো হয়ে যাচ্ছে, তৎক্ষণাৎভাবে আপনি হয়তো সেটাকে পৃথিবীর স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মিলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করবেন। কিন্তু আপনার ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে, এটা হবে কিয়ামতের জন্য ইসরাফিল আলাইহিস সালামের শিঙ্গায় প্রথম ফুঁক!

পবিত্র কুরআনের সূরা আন নাবায় এই ঘটনার আকস্মিকতার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের আগেই সতর্ক করে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় বিচার দিবস নির্ধারিত রয়েছে। যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে আসবে। আর আকাশকে খুলে দেয়া হবে এবং সেটা অনেক দরজার মতো হয়ে যাবে। পাহাড়গুলোকে চালিয়ে দেয়া হবে, যেন তারা মরীচীকা।’ (সূরা আন নাবা : ১৭-২০)

কিয়ামতের শুরুর মুহূর্তের সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে এবং মানুষ বলবে এর কী হলো?’ (সূরা যিলযাল : ১-৪) এরকম মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়ার কারণ একটাই! ‘কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন।’ (সূরা যিলযাল-৫)

ইসরাফিল আলাইহিসসালামের সিঙ্গায় শেষ ফুঁক দেয়ার পর হাশরের ময়দানের চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশের মুহূর্তে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করবে। দুনিয়ার জীবনের প্রাণপ্রিয় বন্ধু, পরম আত্মীয়, একান্ত আপনজন প্রত্যেকেই তখন আত্মকেন্দ্রিক হবে। সেই নিষ্ঠুর, নির্দয় মুহূর্তগুলোর বর্ণনা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঠিক এভাবে দিয়েছেন, ‘সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভাইয়ের কাছ থেকে। তার মা, তার বাবা। তার স্ত্রী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে। সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।’ (সূরা আবাসা : ৩৪-৩৭)

এরকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একমাত্র রাসূল সা: তাঁর উম্মতের শাফায়াতের জন্য আল্লাহর আরশের নিচে সেজদায় পড়ে যাবেন। তিনি এমনভাবে আল্লাহর প্রশংসা করবেন যাতে মহান আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি (সেজদা থেকে) মাথা উঠান। (হে মুহাম্মদ সা:!) আপনি যা বলবেন শোনা হবে। আপনি যাদের জন্য শাফায়াত বা সুপারিশ করবেন তা গ্রহণ করা হবে।’

রাসূল সা:-এর কাছে কেয়ামত সংগঠিত হওয়ার সময় নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠালেই তিনি বলতেন, ‘মাযা আ'দাদতা লাহা? (তুমি কেয়ামতের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ?)’

শরিয়তের বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে সেই প্রস্তুতি আমাদের এখনই নেয়া শুরু করা উচিত!

 খাদিজা বিনতে জহির (সুমাইয়া)
-শিক্ষার্থী, আবেদা-নূর ফাজিল মাদরাসা