ক্রিকেট আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছে এমসিসি

ক্রিকেট আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছে এমসিসি

ক্রিকেট আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছে এমসিসি

ক্রিকেটে বোলার বল করার সময় বোলিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে গেলে এখন সেটাকে রানআউট ধরা হবে।মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব, সংক্ষেপে এমসিসি ক্রিকেটের আইনে কিছু পরিবর্তন এনেছে, যার মধ্যে এটা অন্যতম।এমসিসির মতে গত দুই দশকে এতো তাৎপর্যময় পরিবর্তন আর আনা হয়নি, যা খেলাটাকে বদলে দিতে পারে।

এই ধরনের আউটকে মানকড় বলা হতো, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার ভিনু মানকড় এভাবে প্রথম নন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যানকে আউট করেন, তাই এই ধরনের উইকেটকে মানকড় আউট বলা হতো।এখন থেকে এটা রান আউট হিসেবে স্বীকৃত হবে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচে ভারতের রাভিচান্দ্রান আশ্বিন ইংল্যান্ডের জস বাটলারকে এভাবে আউট করার পর সেটা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে পক্ষে বিপক্ষে নানা মতামত দেখা যায়।কেউ কেউ বলেছেন, এটা ক্রিকেটের মূল নীতিকে আঘাত করে।

আবার অনেকেই মনে করেন, ব্যাটসম্যান যদি বল ছাড়ার আগে ক্রিজ থেকে বের হয়ে যান, সেটা তাকে বাড়তি সুবিধা দেয়, এটা হওয়া উচিত না।ভারতের ক্রিকেট সাহিত্যিক ভৈথিস্মরণ নিজের টুইটারে লিখেছেন, "আশ্বিনের অবদান এটা যে তিনি আইসিসিকে এটা গ্রহন করতে খানিকটা হলেও প্রভাবিত করেছেন, এখানে বোলার নয়, যে ব্যাটসম্যান বল ছাড়ার আগে ক্রিজ ছাড়ছেন তিনি অনৈতিকভাবে সুবিধা নিচ্ছেন।"

তবে এখনো অনেকেই এইভাবে ব্যাটসম্যানকে আউট করে দেয়াকে বিতর্কিত বলছেন।মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের ল ম্যানেজার ফ্রেজার স্টেউয়ার্ট বলেছেন, "এখানে বোলারকে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়, কিন্তু এটা আইনত বৈধ। বোলিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান যদি এগিয়ে যান সেটা অবৈধ।"

বলে থুতু লাগানো যাবে না

অনেক সময় বোলিং দলকে বলে থুতু বা মুখ থেকে লালা নিয়ে বল ঘষতে দেখা যায়, ক্রিকেটে এটা চিরতরে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।মূলত বোলাররা বল উজ্জ্বল রাখতে এই তরিকা ব্যবহার করতেন, এতে করে বলে সুইং বেশি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।কিন্তু এমসিসির গবেষণা বলছে, এতে বোলাররা সামান্যই লাভবান হতেন, কখনো কখনো মোটেও উপকার হয় না।একইসাথে বলে যে কোনও ধরনের মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য, যেমন চকোলেট বা চুইংগাম থেকে নিঃসৃত রস ব্যবহার আগে থেকেই নিষেধ ছিল।

২০০৫ সালের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বোলাররা মিন্ট জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে সুবিধা পেয়েছে বলে দাবি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটের।এরপর ২০১৬ সালে হোবার্টে একটি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্যাফ ডু প্লেসিও শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

অনেক ক্রিকেটারই ঘাম ব্যবহার করে থাকেন সেটা নিয়ে অবশ্য কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।যদি কেউ বলে লালা ব্যবহার করে অবস্থা পরিবর্তন করতে চায়, তবে সেটা বল টেম্পারিংয়ের মতোই অপরাধ বলে গণ্য করা হবে বলছে ক্রিকেটের নতুন আইন।এর আগে কোভিড-১৯ থেকে সতর্ক থাকতে বলে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছিল।

বল যেখানেই পিচ করুক পেটাতে পারবে ব্যাটসম্যান

বল পিচের বাইরে পড়লে অনেক সময় ডেড বল ঘোষণা করে দিতো আম্পায়ার তবে এখন থেকে সেই বলও পেটাতে পারবে ব্যাটসম্যান, তবে ব্যাটসম্যানকে পিচের ভেতর থাকতে হবে, তবে ব্যাটসম্যান পিচের বাইরে অবস্থান করলে সেটাকে 'ডেড বল' ধরা হবে, এমসিসি প্রণীত নতুন আইন অনুযায়ী।একই সাথে যে বল খেলতে পিচ ছাড়তে হবে ব্যাটসম্যানকে, সেটা 'নো বল' বলেও গণ্য হবে, নতুন আইন অনুযায়ী।

ফিল্ডিংয়ে অনৈতিক পরিবর্তন করলে শাস্তি

এতদিন ফিল্ডিং টিমের কেউ মাঠে অনৈতিকভাবে সরলে সেটাকে ডেড বল ধরা হতো, এতে করে ব্যাটসম্যান যদি ভালো শটও খেলে থাকেন সেটা বাতিল হয়ে যেত।এখন থেকে এই ইচ্ছাকৃত অবৈধ কাজের জন্য পাঁচ রান পেনাল্টি পাবে ব্যাটিং দল।

ওয়াইড বল বিচারে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা

আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে অনেক বেশি নড়াচড়া করেন যে কারণে বোলার সঠিক লাইনে বল করলেও অনেক বলকেই ওয়াইড ধরা হয়।

আধুনিক ব্যাটসম্যানরা নিজের মতো জায়গা তৈরি করে নিতে পছন্দ করেন, সঙ্গত কারণেই বোলারকেও বল ফেলার জায়গা মানিয়ে নিতে হয়।সেক্ষেত্রে এখন থেকে বোলার বল হাতে দৌড়ানো শুরুর আগে ব্যাটসম্যান যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখান থেকে ধরা হবে ওয়াইড।এসব আইন ২০২২ সালের পহেলা অক্টোবর থেকে মাঠে কার্যকর হবে।

সূত্র : বিবিসি