ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য সংকটের শঙ্কা

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য সংকটের শঙ্কা

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্য সংকটের শঙ্কা

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে এরই মধ্যে দেশে দেশে জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে৷ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি শুধু নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারেও পড়েছে প্রভাব৷ দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা৷

আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের চাষিরা গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতে না পারায় বিশ্বে খাদ্য সরবরাহে বিশৃঙ্খলতা তৈরি হতে পারে৷ এই যুদ্ধ চলতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তায় ‘চরম অনিশ্চয়তা’ তৈরির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির ইউক্রেনীয় নির্বাহী পরিচালক ভ্লাদিস্লাভ রাশকোভান৷ সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘৬ মার্চ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরের ২০২টি বিদ্যালয়, ২৪টি হাসপাতাল, বহুতল ভবনসহ ১৫০০-র বেশি বাসভবন, সড়ক, অসংখ্য অবকাঠামো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়েছে৷

বিপাকে দরিদ্র দেশগুলো

সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবের পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলোর মানুষেরা খাদ্য, জ্বালানি ও সারের আকাশচুম্বি দামের মুখোমুখি হচ্ছেন৷ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের অর্ধেক সূর্যমুখী তেল এবং ৩০ শতাংশ গমের চাহিদা মেটায়৷'' সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, এরইমধ্যে বিভিন্ন শস্য পণ্যের দাম ২০০৭-০৮ সালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ৪৫টি আফ্রিকান দেশ এবং স্বল্পোন্নত দেশ তাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশ গম ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করে৷  ১৮ টি দেশ তাদের অর্ধেক আমদানি মিটিয়ে থাকে দেশ দুইটি থেকে৷ এর মধ্যে আছে মিশর, কঙ্গো, বুরকিনা ফাসো, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন৷ বিশ্বের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের মূল্য শেষ পর্যন্ত তাই দরিদ্র মানুষগুলোর ঘাড়ে পড়বে বলে সতর্ক করেন গুতেরেস৷

খাদ্যের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা

ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বে খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে দেশটির কৃষকরা চাষাবাদ করতে না পারলে এবং সামনের দিনের রাশিয়া রপ্তানিতে লাগাম টেনে ধরলে এমন পরিস্থিতি হবে বলে মনে করছে তারা৷

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ এবং ইউক্রেন পঞ্চম বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ৷ দেশ দুইটি যৌথভাবে বিশ্বের ১৯ শতাংশ বার্লি,১৪ শতাংশ গম এবং চার শতাংশ ভুট্টার চাহিদা মিটিয়ে থাকে৷ সব মিলিয়ে বিশ্বে খাদ্য শস্য রপ্তানির এক তৃতীয়াংশেরই যোগান দেয় তারা৷ শুধু তাই নয় রাশিয়া বিশ্বে সার রপ্তানিতেও রয়েছে নেতৃত্বে৷ শুক্রবার এফএও-এর মহাসচিব কু ডঙ্গিও বলেন, ‘‘এই দুই প্রধান রপ্তানিকারক দেশের কৃষি কার্যক্রম বাধগ্রস্ত হলে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার চরম অবণতি ঘটতে পারে৷’’এরই মধ্যে এফএও-এর ফেব্রুয়ারির খাদ্যমূল্যের সূচক রেকর্ড স্পর্শ করেছে, এক বছর আগের তুলনায় ২০ দশমিক সাত শতাংশ বেড়েছে৷

রপ্তানি সীমিত করছে রাশিয়া

এদিকে বিশ্ব বাজারে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে চলার মুখে রপ্তানিতে লাগাম টেনে ধরছে রাশিয়া৷ অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে বার্লি, রাই, গম. ভুট্টা, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্য পণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে ক্রেমলিন৷ রপ্তানির এই নিষেধাজ্ঞা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হচ্ছে, যা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত৷

তবে কিছু কিছু দেশ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে৷ এর মধ্যে রয়েছে ইউরেশিয়ান ইউকোনমিক ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো, যার মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান৷ সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইউক্রেনের লুহানস্ক ও দনেৎসও এই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে