আত্মপ্রচার ও প্রদর্শননেশা মহাপাপ

আত্মপ্রচার ও প্রদর্শননেশা মহাপাপ

ছবি: সংগৃহীত

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ   

আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে দেখানোর জন্য বা কারো কাছ থেকে প্রশংসা, সম্মান কিংবা পুরস্কার লাভের জন্য কাজ করাকে ‘রিয়া’ বলা হয়। বাংলায় আমরা একে আত্মপ্রচার, প্রদর্শননেশা ও প্রদর্শনিচ্ছা বলতে পারি। কোরআন ও হাদিসে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুল (সা.) রিয়াকে ছোট শিরক বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

কারণ বান্দা আল্লাহর জন্য ইবাদত করলেও অন্য সৃষ্টি থেকেও সেজন্য কিছু ‘পুরস্কার’ বা প্রশংসা আশা করে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করে। এই শিরকের কারণে মুসলিম কাফির বলে গণ্য হয় না। কিন্তু তার ইবাদতও কবুল হয় না। এক হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের কাছে রাসুল (সা.) বের হয়ে এলেন, আমরা তখন মাসিহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করব না, যা আমার মতে তোমাদের জন্য মাসিহ দাজ্জালের চেয়েও ভয়ংকর? বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, ‘গুপ্ত শিরক। মানুষ নামাজ পড়তে দাঁড়ায় এবং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুন্দরভাবে নামাজ পড়ে। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২০৪)

প্রদর্শননেশার অন্যতম কারণ মানুষের কাছে সম্মান, মর্যাদা বা প্রশংসার আশা। অথচ যে মানুষকে দেখানো জন্য, শোনানোর জন্য, যার প্রশংসা বা পুরস্কার লাভের জন্য আমি লালায়িত হচ্ছি সে আমার মতোই অসহায়। আমার রব ও তাঁর পুরস্কার আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি অল্পতেই খুশি হন ও বেশি পুরস্কার দেন। তিনি দিলে কেউ ঠেকাতে পারে না। আর তিনি না দিলে কেউ দিতে পারে না। কাব ইবনে মালিক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)

সম্মান ও প্রতিপত্তিহীন মানুষের অন্তুর বিনয় ও সরলতায় ভরা থাকে। ফলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন তাদের জন্য খুবই সহজ হয়। বহু সাধারণ মানুষ আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল ও দেহে ধূলিমলিন দুখানা পুরনো কাপড় পরিহিত এরূপ অনেক ব্যক্তি আছে, যার প্রতি লোকেরা দৃষ্টিপাত করে না। অথচ সে আল্লাহর নামে শপথ করে ওয়াদা করলে তিনি তা সত্যে পরিণত করেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৫৪)