পাকিস্তানে ইমরান খানের ভাগ্যে এরপর যা ঘটতে পারে

পাকিস্তানে ইমরান খানের ভাগ্যে এরপর যা ঘটতে পারে

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা আটকে দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যে শুনানি এখন চলছে তার রায়ের ওপরই নির্ভর করছে ইমরান খানের ভবিষ্যৎ।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে এই অনাস্থা প্রস্তাবটি আনে বিরোধী দলগুলো, রোববার এই প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইমরান খানের নিজের দল এই প্রস্তাব আটকে দেয়।

এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় বিরোধী দলগুলো। তারা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আবেদন জানান, যেভাবে অনাস্থা প্রস্তাব পার্লামেন্টে আটকে দেয়া হয়, তা ছিল বেআইনি, অসাংবিধানিক।

পাকিস্তানে এই রাজনৈতিক সংকট নিয়ে এখন জোর বিতর্ক চলছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কীভাবে সরকার এ রকম একটা সংকটের মাঝে পড়ল এবং এরপর কী ঘটতে পারে।

ইমরান খান ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি দুর্নীতির মোকাবেলা করা এবং অর্থনীতি ঠিক করার কথা বলে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের জনগণের বিরাট অংশের মাঝে এখনো তার জনপ্রিয়তা আছে। তবে পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় এবং বিদেশী দেনার বোঝা আকাশচুম্বী হওয়ার প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে যে সংকট দেখা দেয়, তার কারণে ইমরান খানের সমর্থন অবশ্য ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।

অনেক পর্যবেক্ষক অবশ্য বলছেন, পাকিস্তানের অত্যন্ত ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর সাথে ইমরান খানের সম্পর্ক ক্রমশই খারাপ হচ্ছে এবং এটাই তার বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা।

ইমরান খান পাকিস্তানের খুবই প্রভাবশালী সামরিক নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার নতুন প্রধানের নিয়োগপত্রে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। সেখান থেকেই নাকি এর শুরু।

ইমরান খানের রাজনৈতিক বিরোধীরা এরই সুযোগ নেন। ক্ষমতাসীন জোটের কিছু শরিককে তারা ভাগিয়ে বিরোধী শিবিরে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। এর ফলে পার্লামেন্টে ইমরান খান সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান, একই সাথে তার মিত্রও কমতে থাকে।

গত ৩ এপ্রিল বিরোধী দলের এমপিরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেন, উদ্দেশ তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো। বিরোধীরা আশা করেছিলেন, পার্লামেন্টে যেহেতু তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই কাজটা সফল হবে।

কিন্তু সেদিন নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনা। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি দ্রুত এই প্রস্তাব আটকে দেন।

তিনি বলেন, সরকারকে ফেলে দেয়ার জন্য ‘একটা বিদেশী রাষ্ট্রের' সাথে পরিষ্কার আঁতাত' দেখা যাচ্ছে।

এ ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই ইমরান খান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিলেন, এরা বিদেশী রাষ্ট্রের' সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

তিনি আরো অভিযোগ করেছিলেন, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কারণ তিনি রাশিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন ইমরান খান। এজন্যেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

তবে ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি রুল জারি করেন যে, এই অনাস্থা প্রস্তাব পাকিস্তানের সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে, যেটিতে রাষ্ট্র এবং সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের কথা আছে।

এরপর ইমরান খান পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা।

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিরোধী নেতারা। তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবিধানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন। এরপরই তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে যান এই বলে যে, অনাস্থা ভোট আটকে দিয়ে সরকার তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত এখন যে কোনো দিকে যেতে পারে।

যদি সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয় যে, পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট আটকে দেয়ার সিদ্ধান্তটি অসাংবিধানিক ছিল, তখন আদালত আবার এই অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণ করতে বলতে পারে।

যদি এ রকমটা ঘটে, তাহলে পরিণামে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর পদ থেক অপসারিত হতে পারেন।

কিন্তু যদি আদালত সিদ্ধান্ত নেয় যে স্পিকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এবং পার্লামেন্টের বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না, তারপরও ইমরান খানের জন্য এই বিজয়কে বেশ ভঙ্গুর বলতে হবে।

এরপর তাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে। সেই নির্বাচনে যে ইমরান খান বিজয়ী হবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সূত্র : বিবিসি