শোলাকিয়ায় বৃষ্টিভেজা ঈদ জামাত

শোলাকিয়ায় বৃষ্টিভেজা ঈদ জামাত

শোলাকিয়ায় বৃষ্টিভেজা ঈদ জামাত

আবহাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে। একেবারে ঠিকঠাক ফলে গেল সেই কথা। শোলাকিয়ায় সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হতে না হতেই নামল ঝুম বৃষ্টি। তবে বৃষ্টির বাগড়ায় থেমে থাকেনি নামাজ। ভিজে ভিজেই ঈদ জামাতে অংশ নেন লাখ লাখ মুসল্লি।

২০০ বছরের ইতিহাসে করোনা মহামারীর কারণে গত দু'বছর বন্ধ ছিল ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠের ঈদ জামাত।
এবার সংক্রমণ কমায় মানুষের আগ্রহ ছিল এই মাঠের দিকে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে অন্তত চার লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন ঈদুল ফিতরের জামাতে। বৃহত্তম এই ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন।

অবশ্য সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছিল। বৃষ্টি হতে পারে জেনেও মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া মাঠের দিকে।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে আসা টুপি-পাঞ্জাবি পরা পায়ে হাঁটা মুসল্লিদের ভিড় এই বিশাল মাঠে এসে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাতে অংশ নিতে মাস্ক পরে আসেন অনেকেই। তবে ছাতা ও মোবাইল নিয়ে আসা নিষিদ্ধ ছিল।

নিরাপত্তা তল্লাশির ভেতর দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হয়েছে সবাইকে। মাঠ ও এর আশপাশে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার স্তরের নিরাপত্তা।

সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠের ভেতর ও চারপাশ। মাঠের চারপাশে ছিল ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা মিনটর করে মাঠ ও এর আশপাশ এলাকা। সকাল ৮টার দিকেই মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মূল মাঠ। তাই জামাত শুরু হলে মাঠ ছাড়িয়ে আশেপাশের রাস্তা, ফাঁকা জায়গা, বাড়ি, বাড়ির ছাদে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে পড়েন নামাজে।

বেলা ১০টা বাজতেই ঐতিহাসিক এই জামাতের ইমাম আহবান জানান, শোলাকিয়ার ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য।

দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরু হওয়ার ৫ মিনিট, ৩ মিনিট ও ১ মিনিট আগে যথাক্রমে ৩টি, ২টি ও ১টি গুলির আওয়াজ করা হয় শটগানে। শুরু হয় ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই শুরু হয় জামাত। জামাতে ইমামতি করেন বড়বাজার মসজিদের খতিব, হাফেজ মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রব।

জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ জামাতে অংশ নেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের জন্য দিক নির্দেশনামুলক খুতবা দেন ইমাম। এরপর কাঙ্ক্ষিত মোনাজাত। লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন মোনাজাতে। পাপ আর করোনা থেকে মুক্তি এবং পরম করুণাময়ের অপার সন্তুষ্টি অর্জনে দু’হাত তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে শোলাকিয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে শোলাকিয়া ঈদগাহের অবস্থান। প্রায় সাড়ে ৬ একর আয়তনের ঈদগাহে মাঠের ভেতরে স্বাভাবিক অবস্থায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মুসল্লির ধারণক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এখানে প্রতি বছর ঈদের নামাজে অংশ নেন কয়েক লাখ মুসল্লি।

মাঠের ভেতরেই দুই লাখের বেশি মুসল্লি ঠাসাঠাসি করে নামাজ পড়েন। আর মাঠের বাইরে রাস্তা-ঘাট ও পেছনে অংশ নেন আরও দেড় লাখের মতো মানুষ। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে শোলাকিয়া ও এর আশপাশ। এবার মুসল্লিদের অংশগ্রহণ ছিল আরো বেশি।

বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম বীর ঈশাখাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৮৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য জমি ওয়াক্ফ করেন। তারও দু’শো বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ওই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ আছে। লাখো মুসল্লির সঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়- এমন ধারণা থেকে প্রতি বছর এখানে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির ঢল নামে। বংশ পরম্পরায় এ মাঠে নামাজ পড়ে আসছেন অনেকে।

১৮২৮ সালে শোলাকিয়া মাঠে সোয়া লাখ মুসল্লি একসাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া‘। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।