আজট কারখানায় ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রুশ বাহিনীর

আজট কারখানায় ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রুশ বাহিনীর

আজট কারখানায় ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান রুশ বাহিনীর

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবরুদ্ধ সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের রাসায়নিক কারখানায় যেসব বেসামরিক নাগরিক আটকা পড়ে আছে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া।

এই শহরটি পুরোপুরি দখলের জন্য রুশ সৈন্যরা গত এক মাস ধরে সেখানে তীব্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এটিই লুহান্সকের একমাত্র শহর যার কিছু অংশ এখনও ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ধরে রেখেছে।রুশ বাহিনীর আক্রমণের তোপে সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের ইউক্রেনীয় সৈন্যরা একটি রাসায়নিক কারখানার ভেতরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে কয়েকশ বেসামরিক লোক।

আত্মসমর্পণের আহ্বান

রুশ বাহিনী এই আজট কারখানায় অবস্থান নেওয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছে।আত্মসমর্পণের জন্যে রাশিয়া মঙ্গলবার একটি সময়ের কথাও ঘোষণা করেছে। ক্রেমলিন বলছে বুধবার মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল আটটা থেকে থেকে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সুযোগ দেওয়া হবে।এই একই সময়ে তারা বেসামরিক লোকজনের সরে যাওয়ার জন্য মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে। তারা বলছে এজন্য ১২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে।

তবে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলছেন, মানবিক এই করিডোর খুলে দেওয়ার কাজে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বাধা দিচ্ছে।এখনও পর্যন্ত এই মানবিক করিডোর দিয়ে কেউ সেখান থেকে বের হয়ে এসেছে কি না সেই চিত্রটা পরিষ্কার নয়।

মারিউপোলের পুনরাবৃত্তি

কিয়েভ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা নিক বিক বলছেন, বন্দরনগরী মারিউপোলসহ অন্যান্য শহর থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের লোকজন তাদের বের হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নয়। তাদের মধ্যে ভয় তৈরি হয়েছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, শহরের বেশিরভাগ এলাকা এখন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। শহরটিকে তারা ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।

এই শহরের সাথে ইউক্রেনের সংযোগকারী তিনটি সেতু ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এবং এজন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে দায়ী করছে।রাশিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রধান মিখাইল মিজিনৎসেভ ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের "যোদ্ধাদের উচিত তাদের অর্থহীন প্রতিরোধ বন্ধ করা এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করা।"

সংবাদদাতারা বলছেন, সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে মারিউপোলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তারা বলছেন, রুশ বাহিনী যেমন মারিউপোলের আজভস্টাল ইস্পাত কারখানা ঘিরে ফেলেছিল, তেমনি তারা এখন আজট রাসায়নিক কারখানাটিও ঘিরে ফেলেছে।আজভস্টালের মতো এই আজট কারখানার ভেতরেও ইউক্রেনীয় যোদ্ধাসহ বেসামরিক লোকজন আশ্রয় নিয়েছে।

মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ

রুশ মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী আজট কারখানায় বেসামরিক লোকজনকে মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।রাশিয়ার কয়েকটি টিভি চ্যানেল ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে তারা বেসামরিক লোকজনকে আজট কারখানার ভেতরে নিয়ে গেছে। গ্যাজপ্রম মালিকানাধীন এনটিভি বলছে কারখানার ভেতরে শিশুসহ ১২০০ এর মতো লোক থাকতে পারে।এবিষয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি।

রাশিয়া বলছে কারখানার ভেতর থেকে যাদেরকে উদ্ধার করা হবে তাদেরকে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে না পাঠিয়ে রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।চ্যানেল ওয়ান রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বলছে সেভেরোদোনেৎস্ক শহর সংযোগকারী সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে বেসামরিক লোকজনকে কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত লিসিচান্সক শহরে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।

এর আগে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে উদ্ধার করা লোকজনকে কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল।কিয়েভ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা নিক বিক জানাচ্ছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের পরিস্থিতির সঙ্গে ইউক্রেনের অন্যান্য যেসব শহরে রাশিয়া প্রথম দিকে হামলা চালিয়েছিল তার মিল পাওয়া যায়- প্রথমে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়েছে, তার পর শহরটি ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সবশেষে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

'অস্ত্র দেবে নেটো'

এরকম পরিস্থিতিতে পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর প্রধান আজ বুধবার ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।ব্রাসেলসে নেটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক সম্মেলনের আগে ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেছেন, "ইউক্রেনে এক গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন।"

তিনি বলেন জোটের সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্রসহ দীর্ঘ-পাল্লার আধুনিক রকেট সরবরাহ করবে। তিনি বলেন এই সাহায্য কর্মসূচি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে সোভিয়েত যুগের সরঞ্জাম থেকে নেটোর আধুনিক সামরিক সরঞ্জামে উত্তরণে সাহায্য করবে।ইয়েন্স স্টোল্টেনবার্গ বলেন, এমাসের শেষে মাদ্রিদে এক শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে সমঝোতা হতে হবে।নেটোর মহাসচিব বলেন এবিষয়ে মিত্র দেশগুলো একমত হতে পারবে বলে তিনি আশা করছেন।

সূত্র :  বিবিসি