সিলেটে বন্যায় মারা গেছে ৩ হাজারের বেশি গবাদিপশু

সিলেটে বন্যায় মারা গেছে ৩ হাজারের বেশি গবাদিপশু

ছবি: সংগৃহীত

সিলেটে চলমান বন্যায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যার পানিতে সিলেট জেলায় হাঁস-মুরগিসহ তিন হাজারের বেশি গবাদিপশু মারা গেছে। আর ডুবে গেছে গবাদিপশুর ৭১০টি খামার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি কমলে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে।

বন্যায় হালের গরু ভেসে যেতে দেখেছেন কোম্পানীগঞ্জের বিলাজুর এলাকার এরশাদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘বন্যা সব নিয়ে গেছে। ঘরে গরু ও মুরগি ছিল, এগুলোও ভাসিয়ে নিয়েছে। ঘরের আসবাবপত্রও স্রোতে ভেসে গেছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। কেবল নিজেরা জীবন নিয়ে কোনোমতে আছি।’

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে জেলায় এখন পর্যন্ত তিন হাজার ১৮৯টি গবাদিপশু মারা গেছে।

আর জেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সিলেট জেলায় ৭১০টি খামার ডুবে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে এক হাজার ৯৯১ টন খড় ও দুই হাজার ৯৫৯ টন ঘাস। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

চলমান বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। তবে এ উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য নেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছে।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, পানিতে উপজেলা পরিষদ ভবন তলিয়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এই উপজেলার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সিলেটের পরিচালক ড. মো: জাকির হোসেন বলেন, এই ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও পুরো জেলায় গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গোচারণ ভূমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সহজেই এ সঙ্কট কাটবে না।

‘গত শুক্রবার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বন্যা নিয়ে জরুরি সভায়ও গোখাদ্যের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমরাও মন্ত্রণালায়ে চাহিদা পাঠিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সুনামগঞ্জের সাথে আমরা কোনো যোগাযোগই করতে পারছি না। একই অবস্থা সিলেটের কোম্পানীগঞ্জেরও। পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে।’

এই অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সোমবার পর্যন্ত ২২টি গরু মারা গেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১টি, জৈন্তাপুরে ৪টি ও গোয়াইনঘাটে ৭টি। মহিষ মারা গেছে ৭টি। সবগুলোই গোয়াইনঘাটে। ছাগল মারা গেছে ২১টি। এরমধ্যে ২টি জৈন্তাপুরে ও ১৯টি গোয়াইনঘাটে।

বন্যায় এ পর্যন্ত ভেড়া মারা গেছে ১৩টি। এর মধ্যে কানাইঘাটে ৩টি, গোয়াইনঘাটে ৮টি ও জৈন্তাপুরে ২টি। বন্যায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছে মুরগি। এ পর্যন্ত এর সংখ্যা ২ হাজার ৭১৫টি। হাঁস মারা গেছে মোট ৩৯১টি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো রুস্তুম আলী বলেন, ‘আমরা আপাতত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া গবাদিপশুকে চিকিৎসা দিচ্ছি। পানি নেমে গেলে যাতে সংক্রামক রোগ দেখা না দেয়, এজন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্লাবিত এলাকায় গোখাদ্য সরবরাহেরও চেষ্টা করছি আমরা।’
সূত্র : ইউএনবি