সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘পদ্মা সেতু : সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা

সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘পদ্মা সেতু : সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা

সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘পদ্মা সেতু : সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা

পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে এ দেশের অনন্য এবং ঐতিহাসিক ঘটনা। এতে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেলার প্রত্যক্ষ্ সংযোগ তৈরি হয়েছে। বহু বছর ধরে অসংখ্য মানুষ যে স্বপ্ন দেখতেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে তা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বুধবার অনুষ্ঠিত  ‘পদ্মা সেতু : সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব বলেন বক্তারা।  আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে পদ্মা সেতুর অগ্রযাত্রা কিভাবে প্রভাব ফেলবে এদেশের মানুষের মধ্যে তারও ইতিবৃত্ত। 

বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এম.পি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ এম.পি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এম.পি। যাঁরা অভিন্ন সুরে মত দেন যে, পদ্মা সেতু দারিদ্র কমাবে। এমনকি এই সেতুর সুবিধার কারণে আমাদেরকে বিশ্বের অপরাপর রাষ্ট্র মূল্যায়নও করবে। চলমান বিশ্ব অর্থনীতি তেমনটাই জানান দিচ্ছে।  

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর অধ্যাপক ডক্টর আতিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাসিম আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুইয়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, ঢাবির অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী ও ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যরা। 

প্রধান অতিথি শ.ম. রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের স্মারক। একে রক্ষণাবেক্ষন করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে নবদিগন্তের সূচনা করেছেন তা ধরে রাখা এদেশের ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব। 

এ ব্যাপারে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, উন্নয়নের নেত্রী যা বলেন, তিনি তা করে দেখান। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি সমস্ত ষড়যন্ত্র উতরে কিভাবে টিকে থাকতে হয়। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কে এম খালিদ বলেন, দুপারের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি আপাতদৃষ্টিতে দক্ষিণের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ হলেও এই সেতু বিশ্বের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বন্ধন তৈরী করে দিয়েছে। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পদ্মা নদীর ঐতিহ্য তুলে ধরেন। বলেন, পদ্মার অপ্রতিরোধ্য স্রোতকে যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেঁধে ফেলতে পারেন সেই নেত্রী জীবন বাজি রেখে জনগনকেও হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে আপন করে আগলে রাখতে পারেন। একমাত্র শেখ হাসিনাই জানেন, মানুষকে কিভাবে আলোর পথের সন্ধান দিতে হয়। 

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারটি যেনো, ভিনি-ভিডি-ভিসি অর্থাৎ আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন। যিনি ফিনিক্স পাখির মতো উদয় হয়েছিলেন বাংলার আপামর মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। তাই তিনি সাহসিকা। যে কারণে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। শেখ হাসিনার উন্নয়ন মডেলকে তুলে ধরেন সম্প্রীতির সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। তিনি বলেন, আত্মপ্রত্যয় ও অহংকারের নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জন্য  তিনি অনবদ্য ও অনন্য।      

বক্তারা বলেন, স্বপ্নকে সত্য করে শেখ হাসিনা যে আত্মপ্রত্যয়, সততা, সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা এবং অসীম সাহসের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার কুলে কুলে হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও সাফল্যের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটিয়েছেন কন্যা সাহসিকা।

অতিথিদের বক্তব্যে উঠে আসে, পদ্মা সেতুর নানান আঙ্গিক। অভিমত দেন, ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির ভাণ্ডার বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষি অর্থনীতির বিকাশ প্রসঙ্গে। কারণ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির অজস্র উপকরণ, আঙ্গিক এবং লোকপ্রিয় ধারা-উপধারা রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবনে। বহু বছর ধরে স্বতস্ফুর্ত ভাবে চর্চিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে মিশে আছে বাংলা ও বাঙালির মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক দর্শন। এই অসাম্প্রদায়িক দর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করেছিলেন টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাই বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুসলমান, হিন্দু এবং খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বিরা।

পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ এবং উদ্বোধনে আন্দোলিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ। এই উপলক্ষ্যে আনন্দ উদযাপন করছে জাতীয় পর্যায়ের পরিচিত সংগঠনগুলো। সম্প্রীতি বাংলাদেশও অতীতের মত জাতীয় সাফল্যকে উদযাপন করছে বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। গোলটেবিল আলোচনার মাধ্যমে সম্প্রীতির নেতারা পদ্মা সেতুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, সম্প্রীতি, যোগাযোগ, প্রকৌশল, বাণিজ্যসহ বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন।  

পদ্মাসেতুর সফল উম্মোচনের পর এখন দেয়া-নেয়া হবে দক্ষিণের সাথে উত্তরের, পশ্চিমের সাথে পূর্বের সংস্কৃতিচর্চার। ফলে বাঙালির হাজার বছরের মানবতাবাদী দর্শন পাবে অসাম্প্রদায়িক রূপ। বক্তারা আশাবাদী যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে স্বতস্ফুর্ত রায় দেবেন দেশের মানুষ। পদ্মাসেতু শুধুমাত্র যোগাযোগ প্রক্রিয়াকেই ত্বরান্বিত করেনি। হাজারগুণ বাড়িয়েছে জাতির জনকের বাংলার মান-সম্মান। তঁর কন্যা তৈরী করেছেন উন্নয়নের সোপান। আর এই সোপান ধরেই বাঙালি পথ হাঁটবে হাজার বছর। অনুষ্ঠানে সম্প্রীতি বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা ইউনিটগুলো অংশ নেয়।