পশ্চিমা যেকোনো মিসাইলের চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রের ওপর বাজি পুতিনের

পশ্চিমা যেকোনো মিসাইলের চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রের ওপর বাজি পুতিনের

ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা যে ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী একটি প্রাচীন অস্ত্রের উপর বাজি ধরছেন। তা হলো সময়।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর রাশিয়া আশা করছে যে পশ্চিমা কোনো সমাধানে বৈশ্বিক শক্তি এবং খাদ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির শঙ্কা কাটিয়ে উঠা যাবে। 

রাশিয়ার কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রকাশ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির পতনের বিষয়ে উল্লাস প্রকাশ করে রাশিয়ার উপর পশ্চিমের আরোপিত ‘আত্ম-ক্ষতিকর’ নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের পদত্যাগের চিত্র তুলে ধরেছে। 

এরপর পশ্চিমা বিশ্বের কোন নেতার পতন হবে– এমন প্রশ্নও ছুঁড়ে দিচ্ছে তারা।

চলতি বছরের অক্টোবরে ৭০ বছরে পা রাখতে যাওয়া পুতিন চলতি মাসে পশ্চিমা বিশ্বকে বলেছিলেন মস্কোকে পরাজিত করার চেষ্টা ব্যর্থ হবে।

এ ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র পরিচালক ও মস্কোতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বার্নস চলতি সপ্তাহে অ্যাস্পেন সিকিউরিটি ফোরামকে বলেছেন, পুতিনের বাজি হল তিনি ক্ষয়ক্ষতির যুদ্ধে সফল হতে পারেন।

ইউক্রেন আক্রমণের পরিণতি সম্পর্কে পুতিনকে সতর্ক করার জন্য গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বার্নস মস্কোতে পাঠিয়েছিলেন। 

বার্নস বলেন, সাবেক কেজিবি গুপ্তচর পুতিন পণ করছে যে তিনি ‘ইউক্রেনের অর্থনীতিকে শ্বাসরোধ করতে পারেন, ইউরোপীয় জনসাধারণ ও নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে পারেন।  তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পরাস্ত করতে পারেন। কারণ পুতিনের দৃষ্টিতে মার্কিনিরা সবসময় মনোযোগের ঘাটতিজনিত ব্যাধিতে ভোগেন এবং বিভ্রান্ত হন।

বার্নস আরও বলেন,  তিনি মনে করেন রুশ নেতার বাজি ব্যর্থ হবে।

যদিও ক্রেমলিন পিছপা হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখায়নি। বরং রাশিয়া ইউক্রেনে তার সব লক্ষ্য অর্জন করবে বলেই জানিয়ে আসছে মস্কো।

সের্গেই লাভরভ, যিনি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পুতিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন, তিনি বুধবার বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার নজর এখন পূর্ব দোনবাস অঞ্চলকে ছাড়িয়ে দক্ষিণের একটি অংশ এবং ‘অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চল’ অন্তর্ভুক্ত করতে।

এছাড়া, ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার কথাও ভাবছে মস্কো। 

প্রশ্ন হলো ইউক্রেন অভিযান কিভাবে শেষ হবে? এ ব্যাপারে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্যারি আর. পোসেন বলেছেন, আমার অনুমান হল বর্তমান রণাঙ্গাণের কাছাকাছি একটি অচলাবস্থার সঙ্গে এটি শেষ হবে। বিষয়টা খুব একটা সুখকর হবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক-সামরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি কুৎসিত সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ। যা একটি অস্বস্তিকর এবং অবৈধ মীমাংসার একটি হিমায়িত সংঘাতে পরিণত হয়েছে।

১৯৯৯ সালের শেষ দিনে বরিস ইয়েলৎসিন পুতিনকে পারমাণবিক ব্রিফকেস হস্তান্তর করার পর থেকে, তার অগ্রাধিকার ছিল অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও সাবেক সোভিয়েত পরাশক্তির মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা। সেই মর্যাদা ১৯৯৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় মস্কো হারিয়েছিল। 

পুতিন সেই হারানো মর্যাদাই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে উল্লেখ করেছেন উইলিয়াম বার্নস।