গরমে শরীরচর্চা

গরমে শরীরচর্চা

গরমে শরীরচর্চা

গরমের কারণে শরীরচর্চা বাদ দেয়া কোনো সমাধান না। খোলামেলা পরিবেশে যারা শরীরচর্চা করতে চান তাদের জন্য প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া বড় একটা সমস্যা। গরমের জন্য হয়ত ব্যায়াম করাই বাদ দিয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে তা কোনো সমাধান নয়, কারণ সুস্থ থাকতে হলে শরীরচর্চা করতে হবে নিয়মিত। ব্যায়ামাগারে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু খরচটাও তো খেয়াল রাখতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ‘অর্থোপেডিক স্পোর্টস মেডিসিন সার্জন’ অ্যালেক্স সি. কোলভিন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের জন্য বাইরে শরীরচর্চা বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই চলবে।’ তিনি আরো বলেন, যেমন, প্রচণ্ড তাপের কারণে অবসাদ, পানিশূন্যতা, পেশিতে ব্যথা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাদের বয়স ৬৫ বা তারও বেশি কিংবা যারা ‘ডাই-ইউরেটিক’, ‘বেটা-ব্লকারস’, ‘অ্যান্টিহিস্টামিন’, ‘অ্যান্টিসাইকোটিক’ ইত্যাদি ধরনের ওষুধ সেবন করছেন তাদের জন্য সতর্ক থাকা আরো জরুরি।ডা: কোলভিন বলেন, তাপ শরীরকে নানানভাবে প্রভাবিত করে। যেমন শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে যায়, হৃদস্পন্দনের গতি বাড়ে, ত্বকে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়, ঘাম বাড়ানোর জন্য রক্তনালী প্রসারিত হয় ইত্যাদি।

তাপমাত্রা যখন বেশি তখন গরমজনিত এই সমস্যাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে আপনি যখন শরীরচর্চা করছেন সে সময়। ফলে দেখা দেয় পানিশূন্যতা, তাপের কারণে পেশি কিংবা রগে টান ধরা, অবসাদ ইত্যাদি। ডা: কোলভিন বলেন, আবহাওয়ার তাপমাত্রা বেশি আর শরীরচর্চা এই দুই অবস্থা মিলে শরীর যখন নিজেকে শীতল করতে পারে না, তখনই দেখা দেয় ‘হিট এগজোশন’ বা তাপজনিত অবসাদ।

আবার বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ত্বক থেকে ঘাম সহজেই বাষ্প হয়ে যেতে পারে না। আর এটাই শরীরের নিজেকে ঠাণ্ডা করা প্রক্রিয়া। সেই ঘামের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা যদি পূরণ করা না হয় তবে সমস্যার তীব্রতা আরো বাড়ে। তাপজনিত অবসাদের লক্ষণ হলো- মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, ক্লান্তি, বমিভাব ও বমি, পেশিতে ব্যথা, প্রচণ্ড ঘাম হওয়া, নাড়ির গতি দ্রুত কিন্তু দুর্বল হওয়া, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে আসা ইত্যাদি। ডা: কোলভিন বলেন, ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের দেয়া সরাসরি সূর্যালোকের তাপদাহ পরিমাপের একটি পদ্ধতি হলো ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার (ডব্লিউবিজিটি)। আবহাওয়ার তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, সূর্যের আলোর কোণ, মেঘের আচ্ছাদন সবই বিবেচনায় নেয় এই পদ্ধতি। আরেকটি পদ্ধতি হলো ‘হিট ইনডেক্স’।

সাধারণ হিসেবে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে বাইরে শরীরচর্চা নিরাপদ। তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে বাইরে শরীরচর্চা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকেই বিপজ্জনক ধরতে হবে।

কোলভিন বলেন, সূর্যের পূর্ণ তেজ থেকে বাঁচার জন্য সকাল ১০টার আগেই ব্যায়াম সেরে নিতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয় তবে বিকেল ৪টার পর করতে হবে। আর মাঝের সময়টাতে যদি বাইরে থাকতেই হয় তবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, সানগ্লাস পরোন, ঢিলেঢালা ও হালকা রংয়ের পোশাক পরতে হবে, সম্ভব হলে ফুলহাতা। প্রচুর পানি পান করতে হবে, ঘন ঘন বিরতি নিতে হবে।
হুট করেই রোদে গরমে ব্যায়াম করতে বেরিয়ে পড়াটা বোকামি হবে। ঘরেই হালকা ব্যায়াম করে শরীরকে আগে ব্যায়ামের সাথে অভ্যস্ত করতে হবে। শরীর গরম হলে পরে বাইরে গিয়ে বাকি ব্যায়ামটুকু সারতে হবে। শরীরকেও রোদে গরমে ব্যায়াম করায় অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নেয়ার সময় দিতে হবে। রোদে থাকার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে।