পুঁজির সুরক্ষায় অন্যরকম মেলা

পুঁজির সুরক্ষায় অন্যরকম মেলা

ময়মনসিংহে বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত

আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ: মেলা। মেলা কথাটা শুনলে বাঙালির হৃদয়ে অন্যরকম একটি চিত্র ফুটে ওঠে। অনেক মানুষের সমাগম। নানান ধরনের মালামাল এর পসরা সাজিয়ে রাখা দোকান। শিশুদের হরেক রকমের খেলনা। খাবারের দোকানগুলো মুখরোচক খাবারে ভরপুর। নারী, পুরুষ এবং শিশুসহ অগণিত মানুষ। এসব মানুষকে আনন্দ দিতে দোলনা, চরকি, নাগরদোলা আরও কত কী?

সম্প্রতি ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত হলো অন্যরকম এক মেলা। বিনিয়োগ শিক্ষা মেলা। সেখানে সাধারণ মেলার চিত্র দেখা না গেলেও মানুষের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাগম ছিল এখানে চোখে পড়ার মতো। উদ্দেশ্য একটাই দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে জানা। এ বিষয়ে নিজের জ্ঞান কে আরও সমৃদ্ধ করা। নিজের পুঁজিকে সুসংহত করার জন্য বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া। 

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) যৌথভাবে ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে ২৯ ও ৩০ জুলাই ২০২২ দুই দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে। মেলায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সহ বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ অংশ নেয়। 

২৯ জুলাই ২০২২ তারিখ দুই দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন বিএসইসি এর কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো: সাইফুর রহমান, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তারিক আমিন ভুঁইয়া, বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের (বিএএসএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ, রশীদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিবিএর সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী, বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও, বিএএসএম এর অনুষদ ড. নিতাই চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখছি, সবাই লেখালিখি করছে— দেশে তেল শেষ, জ্বালানি শেষ। এগুলো সব গুজব। গুজবে কান দিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টের টাকায় কেনা শেয়ার নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্যানিকড হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তেল সংরক্ষণের ক্ষমতা ৪০ দিন বা তার একটু বেশি। ৩৬ দিনের তেল আমাদের দেশে মজুদ আছে। আগস্ট মাসে আরও আটটি জাহাজে করে তেল আসছে।’ 

বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা অতিপ্রয়োজনীয়। এর কোনো বিকল্প নেই। এটি ক্রমাগত পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন হচ্ছে। বিনিয়োগ শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা থেকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হওয়া যায়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শুরু করেছেন বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ময়মনসিংহে আমাদের এ কার্যক্রম।’
৩০ জুলাই ২০২২ তারিখ ছিল দুই দিনব্যাপী এ মেলার মূল আকর্ষণ বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্স ২০২২ এর সমাপনী দিন। এদিন প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি তার বক্তব্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এখানে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং শিখতে হবে। তবেই তারা লাভবান হবেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুজব থেকে সকল সময় আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। গুজব সৃষ্টিকারীরা নিজের নয় দেশের ক্ষতি করছে। তাদেরকে মনে রাখতে হবে, তারাও এ দেশের নাগরিক। এটির কুফল দেশের সবাইকে ভোগ করতে হবে। সুতরাং গুজব থেকে দূরে থাকতে হবে এবং এটাকে পরিহার করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার বিচার-বিশ্লেষণ করতে ভয় পেলে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাপিটাল মার্কেটে দুটি প্রোডাক্ট আছে, যা ভালো রিটার্ন দিচ্ছে। সেটি অলমোস্ট ফিক্সড অ্যান্ড সিকিউরড। একটি হলো মিউচুয়াল ফান্ড, যারা ১ থেকে ২০ শতাংশ রিটার্ন দিচ্ছে। আরেকটি হলো বন্ড মার্কেট, যা ফিক্সড কুপন রেটে পেমেন্ট করে। এ দুটি ক্ষেত্রে আপনাদের কিছুই করতে হবে না। সময়ান্তে তারা অ্যাকাউন্টে ডিভিডেন্ড বা ফিক্সড কুপন পেমেন্ট পাঠিয়ে দেবে।’

কে এম খালিদ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আর্থিক স্বস্তি এবং সঞ্চয়ের জন্যই বিনিয়োগ। সুতরাং বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রয়োজন। পুঁজিবাজারের কল্যাণে বিএসইসি নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন, যা প্রশংসাযোগ্য।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আমিনুল হক শামীম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুল হক মারুফ, পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস, ময়নসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।

প্যানেল আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ডিএসইসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া, রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালী, ডিবিএর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও, বিএএসএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান ও বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—বিএসইসির কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম, বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

সবমিলিয়ে ময়মনসিংহের বিনিয়োগ শিক্ষা মেলা ছিল উৎসবমূখর। মেলায় বিনিয়োগকারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলার আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য একটাই আর তা হলো বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষিত করা। নিজের অর্থ বিনিয়োগে সচেতন করা। এ মেলা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের কাজে প্রয়োগ করতে পারলে আসবে সার্থকতা। 

লেখক: ফ্রিল্যান্সার, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) এ কর্মরত।