তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী করার দাবি

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী করার দাবি

সংগৃহীত

কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে তা শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের নেতৃবৃন্দ।

সোমবার (২২ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ তামাক বিরোধীজোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও সংশোধনের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন।

এসময় তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ৭ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোকে আর্থিক বরাদ্দের মাধ্যমে মনিটরিংয়ে যুক্ত করা, তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্রুত তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা, এফসিটিসি এর ৫.৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোড অফ কন্ডাক্ট প্রণয়ন করা ,তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সভাগুলো নিয়মিত এবং গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ ফলোআপ করা, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা ,সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের তালিকা থেকে তামাক কোম্পানির নাম বাদ দেওয়া।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আবু নাসের খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু , সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব সহ অন্যান্যরা।

সভায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শুধুমাত্র তামাক ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় ১৮ জনের বেশি মানুষ মারা যান। স্বাস্থ্যক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের জাতীয় স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বন নির্মাণের লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ প্রণয়ন করা হয়। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকার জনস্বাস্থ্যকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে একাধিক যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করতে ২০১৩ সালে আইনের বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধন করে ২০১৫ সালে এর বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সংশোধিত আইনেও বেশকটি ত্রুটি থেকে যাওয়ায় আইন বাস্তবায়নে ব্যাহত হচ্ছে এবং তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কৌশলে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনটিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমিয়ে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, অপরদিকে কোম্পানির উদ্দেশ্য স্বাস্থ্যহানীকর পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা অর্জন। স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন তারাই, যারা একই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের সহযোগী। তাছাড়া, তামাক কোম্পানি যে ই-সিগারেটের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। বিভিন্ন প্রকার বিনোদন মাধ্যমে প্রচারিত নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে কাহিনীর প্রয়োজন ছাড়াই হরহামেশা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রদর্শিত হয়। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত ওয়েব সিরিজ, নাটক, সিনেমা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে এই প্লাটফর্মটির মাধ্যমে সহজেই তরুণরা সিগারেট, ই-সিগারেট, এইচটিপিসহ বিভিন্ন ধরণের তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠছে। সুতরাং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত আইনের ধারায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ও ওয়েবসিরিজ এবং ভবিষ্যতে ব্যবহৃত অন্য যেকোনো মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধের বিষয়টি যুক্ত করা প্রয়োজন।