১ মাসেই বাণিজ্য ঘাটতি ১৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা

১ মাসেই বাণিজ্য ঘাটতি ১৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা

সংগৃহীত

আমদানির বিপরীতে বাড়ছে না রফতানি। ফলে চলতি অর্থবছরের শুরুতেই বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে চলতি হিসাব ও সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। জুলাইয়ে ৫৮৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে ১৯৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) এর অংক ১৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি। বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স প্রবাহ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ।

এর আগে গেল ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) দেশে বাণিজ্য ঘাটতি ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে; যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের এ বাণিজ্য ঘাটতির অংক ছিল ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।

জুলাই মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। এ সময় সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৭৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ১০১ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৭৫ লাখ ডলার।

চলতি হিসাবে ভারসাম্যেও (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। চলতি অর্থবছরে জুলাইয়ে এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) অংক দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।

সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির অংক দাঁড়িয়েছে ১৮০ কোটি ডলার। এই সূচক আগের বছর একই সময় ৩২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১৮৭ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল এই সূচক।

তবে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাইয়ে ৩০ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৯ কোটি ডলারে উঠেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশী বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশী বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৪৫ দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে ১৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

সূত্র: নয়াদিগান্ত