ট্রাসের পায়ের নিচে মাটি কই?

ট্রাসের পায়ের নিচে মাটি কই?

ট্রাসের পায়ের নিচে মাটি কই?

ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও অর্থনীতি চাঙ্গা করা ও সাধারণ মানুষের দুর্গতি কমানোর অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু টোরি দল ও সরকারে তার অবস্থান এখনো বেশ দুর্বল।

এমন কঠিন সময়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মোটেই শুধু আনন্দের কারণ হতে পারে না। প্রথমে ব্রেক্সিট, তারপর করোনা মহামারী, বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে দেশটি। জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দার অশনি সংকেত ও শিল্প-বাণিজ্য খাতে প্রবল ক্ষোভের মুখে ব্রিটেনের পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

মাত্র ছয় বছরের মধ্যে রক্ষণশীল টোরি দলের তিন-তিনজন প্রধানমন্ত্রী যা পারেননি, চতুর্থ নেতা হিসেবে লিজ ট্রাস তা পারেন কিনা, সে দিকেই গোটা দেশের নজর থাকবে। ট্রাস নিজে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। গত আট বছর ধরে তিনি মন্ত্রিসভায় একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন। জনসনের অনুগত নেতা হিসেবে তার ও তার পূর্বসুরীদের অনেক ‘পাপের’ ভাগীদার হিসেবে ট্রাস দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরাসরি ব্রিটিশ ভোটারদের আস্থা অর্জনের সুযোগ এখনো তিনি পাননি। এ যাত্রায় শুধু টোরি দলের সদস্যদের ভোটে সামান্য ব্যবধানে তিনি দলের শীর্ষ নেতার দায়িত্ব পেয়েছেন। জনসন শেষের দিকে সংসদের নিম্নকক্ষে সব টোরি সদস্যের আস্থার দাবি করতে পারেননি। সেই বিষাক্ত পরিবেশ পেছনে ফেলে ট্রাসকে কমপক্ষে নিজের দলের সব অংশ ও বৃহত্তর জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। তবেই তিনি নিজের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সুযোগ পাবেন।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার পর লিজ ট্রাস কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও নতুন করে অর্থনীতি আবার গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। মার্গারেট থ্যাচারের ঘোষিত অনুরাগী হিসেবে মূলত করের বোঝা কমিয়ে তিনি সেই অসাধ্যসাধন করতে চান। তবে চরম মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় নাজেহাল সাধারণ মানুষের জন্য ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো বিশাল আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার চাপ এড়িয়ে যাওয়াও তার পক্ষে কঠিন হবে। গত কয়েক মাসে জনসন প্রশাসনের অচলাবস্থার কারণে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। একইসাথে করের বোঝা কমিয়ে বিপুল অংকের সরকারি ব্যয় কীভাবে সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সংশয়ের অভাব নেই। সেইসাথে ট্রাস রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবারও হাল ফেরাতে চান। এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তি অস্পষ্ট থাকায় মঙ্গলবারই ব্রিটেনের আর্থিক বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা গেছে। ৩০ বছর মেয়াদের সরকারি বন্ডের মূল্য এতটাই পড়ে গেছে, যেমনটা ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মহামারীর তুঙ্গে ঘটেছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ট্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সংঘাতের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী ছিলেন। ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত নর্দান আয়ারল্যান্ড প্রটোকলের অংশবিশেষ একতরফা বাতিল করার প্রচেষ্টায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে ঘরের কাছে সবচেয়ে বড় বাজারে ব্রিটেনের প্রবেশপথ আরো কণ্টকিত করে তুলেছেন তিনি। অর্থনীতি চাঙ্গা করার পথে এমন বাধা সম্পর্কে সন্দিহান ব্রিটেনের শিল্প-বাণিজ্য জগত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডে শান্তি বিঘ্নিত করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যে ব্রিটেনের প্রতি সদয় হবে না, জো বাইডেন প্রশাসন বরিস জনসনকে তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল।

এত বাধা অতিক্রম করে লিজ ট্রাস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতটা সাফল্য অর্জন করতে পারবেন, অন্তত আজকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সে বিষয়ে গভীর সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে