শত কোটি টাকা জরিমানায় বন্ধ হবে কি ট্রাম্পের বন্ধুর ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব?

শত কোটি টাকা জরিমানায় বন্ধ হবে কি ট্রাম্পের বন্ধুর ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব?

শত কোটি টাকা জরিমানায় বন্ধ হবে কি ট্রাম্পের বন্ধুর ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব?

‘আপনি যে চাঁদা দেবেন তা এসব লোকের কাছে যাবে না। এই প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।’যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের এক আদালত অন্যতম মার্কিন ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিক এবং ডানপন্থী নেতা অ্যালেক্স জোনসকে ৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার জরিমানা করার পর তিনি তার স্টুডিও থেকে লাইভ সম্প্রচারে ভক্তদের প্রতি এই মন্তব্য করেন।

অ্যালেক্স জোনস বছরের পর বছর ধরে নানা ধরনের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০১২ সালের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলের গোলাগুলির ঘটনা। ওই হামলার ঘটনাটি সাজানো ছিল বলে তিনি ভুয়া ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন।

আর এ জন্যই আদালত সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে এত বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে তাকে নির্দেশ দিয়েছে।অ্যালেক্স জোনস ‘এসব লোক’ বলতে যাদের বুঝিয়েছেন, তারা হলেন স্যান্ডি হুক স্কুলে হামলায় নিহত শিশুদের পরিবার-পরিজন।

তার ওয়েবসাইট ইনফোওয়ারে এই ঘটনা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে মিথ্যে প্রচারের পর এই পরিবারগুলো অনলাইনে যেসব নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেজন্য তারা অ্যালেক্স জোনসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

তবে অ্যালেক্স জোনস একা নন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাইরে অনেক লোক রয়েছেন যারা বিশ্বাস করেন, স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে আদতে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা মনে করেন, নাইন-ইলেভেনের পুরো ঘটনাটি ছিল সাজানো। এমনকি মানুষ যে চাঁদে গেছে, সেটিও তারা বিশ্বাস করতে নারাজ।

তুমি কোথায় থাক তা আমরা জানি
লিওনার্ড পজনার ইউটিউবে একটি ভিডিওতে ক্লিক করলেন, যেখানে তার বাড়ির রাস্তা ও বাড়ির বাইরের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। ক্যামেরাটি এক সময় জুম করে তার বারান্দার দিকে ঘোরানো হয় এবং তার বাড়ি নম্বর ও সেখানে পৌঁছানোর পথটি স্ক্রিনে তুলে ধরা হয়।পুরো ভিডিওতে কোনো কথা শোনা যায়নি, তার প্রয়োজনও ছিল না।তবে যে বার্তাটি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তা পরিষ্কার : ‘তুমি কোথায় থাক তা আমরা জানি।’

ইউটিউবে এ ধরনের কয়েক ডজন ভিডিও আছে এবং এই সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। সে জন্যই পজনার এখন যে শহরে থাকেন, তার নামটি তিনি প্রকাশ করতে চান না। তাকে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার তাকে বাড়ি বদল করতে হয়েছে।

লিওনার্ড পজনারকে টার্গেট করা হয়েছে, কারণ তার ছেলের হত্যাকে ঘিরে অনলাইনে যারা ট্রল করছে এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করছেন।

যেভাবে শুরু হয় দুঃস্বপ্ন
‘নোয়া ছিল মাত্র ছয় বছরের একটি সহজ সরল ছেলে,’ লিওনার্ড, বা যার ডাকনাম লেনি, বলছিলেন, ‘সেদিন সকালে আমি তাকে স্কুলে ছেড়ে এসেছিলাম - বাচ্চাদের তৈরি করে স্কুলে ছেড়ে আসার মতো অতি সাধারণ একটি দিন ছিল সেটি।

‘তার দেড় ঘণ্টা পর শুরু হলো চরম দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্নের কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।’

লেনির দুঃস্বপ্নের শুরু ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ সালে, যখন অ্যাডাম ল্যাঞ্জা নামে এক যুবক তার মাকে হত্যা করে এবং তারপর গাড়ি চালিয়ে স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে যায়।সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে সে ২০টি শিশু এবং ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর সে আত্মহত্যা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে, যেখানে ব্যাপক খুন সাধারণ ঘটনা, সেখানেও স্যান্ডি হুক স্কুলের বর্বরতা বিশেষ ঘটনা হিসেবে প্রচার পায়। কারণ, এই হত্যাকাণ্ডের শিকার শিক্ষার্থীরা বয়সে ছিল খুবই ছোট, এবং তাদের সংখ্যাও ছিল অনেক বেশি।

ওই হত্যাকাণ্ড এবং এর পরবর্তী ঘটনাবলী স্বচক্ষে দেখার পর শত শত মানুষ মানসিক আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, এবং এদের মধ্যে অনেকে এখনো ভুগছেন।ওই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তদন্ত হয় এবং জানা যায় যে অ্যাডাম ল্যাঞ্জা কাজটি একাই করেছিলেন।

কিন্তু তা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে বিশ্বাসীরা একটি ভুয়া বিকল্প সত্য তৈরি করে প্রচার করতে শুরু করে। তারা বলে যে স্যান্ডি হুকের পুরো ঘটনাটি ছিল একটি বিরাট প্রতারণা, এবং যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি আইন তৈরির পটভূমি হিসেবে ওই সাজানো নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল।যারা এসবে বিশ্বাস করতেন, তারা তাদের ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন ঘটনাটির কিছু বিশৃঙ্খল দৃশ্য এবং প্রাথমিক সংবাদ থেকে। শুরুর দিকে ঘটনাগুলোর মধ্যে ছোটখাটো যেসব অসঙ্গতি ছিল, সেটিকেই তারা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন।

এদের মধ্যে যারা আরো চরমপন্থী, তারা এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে স্যান্ডি হুকের শিকার পরিবারগুলোকে টার্গেট করে তাদের হেনস্তা করা শুরু করেন।

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বছরে কম-বেশি তিনটি মৃত্যুর হুমকি পাই। সে কারণে এসব বিষয় নিয়ে আমরা মুখ খুলি না’, বলেন হ্যানা ডি’অ্যাভিনো। তার বোন রেচেল স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে একজন বিহেভিওরাল থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতেন।

স্যান্ডি হুক স্কুলের ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের কেউ কেউ কানেটিকাটের শহরতলীর এই ছোট গ্রামটিতে এখনো নিয়মিতভাবে যান। লেনি, হ্যানা ও অন্যদের প্রতি মৃত্যুর হুমকি ও হয়রানি ছাড়াও এরা ওই স্কুল ও স্থানীয় এলাকার ভিডিও তৈরি করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যদের তারা নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন এবং ইউটিউবে ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করেছেন।আর তাদের এসব তত্ত্ব প্রচার করার কাজ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের একজন, অ্যালেক্স জোনস - যার সাথে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

মার্কিন রাজনীতিতে বিভক্তির ফল
ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব আমেরিকান জীবনধারার একটি নিয়মিত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এখন চরমপন্থীরা এগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভাইরাল করে ছড়িয়ে দিতে পারে। এবং সেই প্রক্রিয়ায় ইন্ধন জুগিয়েছে আমেরিকার রাজনীতির গভীর বিভাজন।স্যান্ডি হুকের ঘটনার পর অনলাইনে শত শত ভিডিওর মাধ্যমে মিথ্যাচারকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।এসব ভিডিও লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন। টুইটার ও ফেসবুকের মাধ্যমেও নানা ধরনের মিথ্যার বেসাতি করা হয়েছে।

তবুও এসব ভুয়া ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব হয়তো ইন্টারনেটের এক অন্ধকার কোণেই পড়ে থাকতো, যদি না জনপ্রিয় ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকরা সেগুলো সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে না দিতেন।তেমনি একজন মানুষ হলেন অ্যালেক্স জোনস।

তিনি একজন টক শো হোস্ট এবং মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল ইনফোওয়ারের প্রতিষ্ঠাতা। ৯/১১ টুইন টাওয়ার আক্রমণ থেকে শুরু করে ইউরোপ জুড়ে সন্ত্রাসী হামলা - প্রায় সবকিছু নিয়ে তিনি যেসব ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেন, তাতে তার নিয়মিত শ্রোতা ও পাঠকরা অভ্যস্ত।

আমি জানতাম সেখানে নাটক চলছে
স্যান্ডি হুক হত্যাকাণ্ডের দু’বছরেরও কম সময় পর, ‘এফবিআই বলছে স্যান্ডি হুকে কেউ নিহত হয়নি’ শিরোনামে তিনি ইনফোওয়ারসে এক বিস্তারিত ষড়যন্ত্র গল্প ফেঁদে বসেন।

‘ইন্টারনেট তদন্তকারীরা দ্রুত অনলাইনে গিয়ে এমন কিছু সূত্রকে এক জায়গায় আনতে সমর্থ হয়েছেন, যা ইঙ্গিত করে যে, ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার মতোই, এই গোলাগুলির ঘটনাটিকেও সতর্কভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়। মূল লক্ষ্য হলো, অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে যে আইন তৈরি করা হবে, তার পক্ষে আগাম সমর্থন জোগাড় করা,’ ওই গল্পটিতে দাবি করা হয়।

এর কয়েক মাস পর তার রেডিও শো-তে বিষয়টি নিয়ে তিনি আবার মুখ খোলেন, ‘আমি তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছে। পুরো বিষয়টি একটি বিশাল জালিয়াতি। কিন্তু সমস্যা হলো, এটাকে আপনি কিভাবে মোকাবিলা করবেন? কিভাবে আপনি জনসাধারণকে বোঝাবেন যে পুরো ব্যাপারটাই একটা প্রতারণা?’

পরে তিনি বলেন, ‘স্যান্ডি হুকের ঘটনাটি কৃত্রিম ও নকল। আমার মতে, অভিনেতাদের দিয়ে এটা সাজানো হয়েছে। গোড়ার দিকে শুরুর দিকে আমি এটা বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে আমি জানতাম সেখানে নাটক চলছে।’‘এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে তারা কতটা সাহসী, তারা পরিষ্কারভাবেই এই কাজে অভিনেতাদের ব্যবহার করেছে।’

উদারপন্থী মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মিডিয়া ম্যাটারস’ অ্যালেক্স জোনসের বিরুদ্ধে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যেখানে তিনি স্যান্ডি হুক স্কুলের নিহত শিশুদের অভিভাবকদের অভিনেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কিংবা স্যান্ডি হুকের তদন্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।মিডিয়া ম্যাটারসের ম্যাট গার্টজ বলছেন, অনলাইন ও রেডিও সম্প্রচার মিলিয়ে অ্যালেক্স জোনসের প্রায় ৮০ লাখ শ্রোতা রয়েছে।

‘এটি যদিও একটা অসাধারণ ঘটনা, কিন্তু স্যান্ডি হুকের হত্যাকাণ্ড একটি প্রতারণা ছিল, এটা আসলে অ্যালেক্স জোনসের প্রচারিত ষড়যন্ত্রের গল্পগুলোর মধ্যে একটা ছোট গল্প,’ বলেন তিনি।

‘তিনি বিশ্বাস করেন যে ধনী ও অভিজাতরা বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে এবং বাকিদের দিয়ে দাসত্ব করানোর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি দাবি করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের হাতে এমন একটি আবহাওয়া যন্ত্র রয়েছে, যা দিয়ে শত্রুভাবাপন্ন দেশের ওপর টর্নেডো হামলা চালানো যায়।’

‘ফেসবুক বা টুইটারে, কিংবা রেডিটের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের যেসব সাইট এ ধরনের ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকরা ব্যবহার করছেন, অ্যালেক্স জোনস তাদের নেটওয়ার্কের একটি কেন্দ্রবিন্দু।’অ্যালেক্স জোনসের সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য বারবার অনুরোধ পাঠানো হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।

ট্রাম্পের সাথে দারুণ সম্পর্ক
তবে তার সাথে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল বলে বলা হয়ে থাকে। নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে অ্যালেক্স জোনসের রেডিও শো’তে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ট্রাম্প।ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হওয়ার পরও তারা নিয়মিত যোগযোগ রাখতেন বলে দাবি করা হয়।

তার সাবেক প্রচার উপদেষ্টা রজার স্টোন নিয়মিতভাবে জোনসের শো’তে উপস্থিত হন, এবং কথিত আছে যে তিনিই এ দু’জনের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ট্রাম্প ইনফোওয়ারস সাইটের রিপোর্ট এবং প্রকাশিত ষড়যন্ত্রের ভুয়া গল্পগুলোকে টুইট করে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সন্দেহজনক ও উদ্ভট সব গল্প - যা ওই সাইটে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল - সেগুলো ট্রাম্পের বক্তৃতায় নিয়মিতভাবে স্থান পেয়েছে।

আদালতের রায়ের পর কী হবে?
প্রায় ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ নিঃসন্দেহে অ্যালেক্স জোনসের জন্য বিশাল এক শাস্তি। তিনি বা অন্য কেউ, যারা এ ধরনের ভুয়া গাল-গপ্পো প্রচার করেন, তারা এর আগে কখনো এত বড় মাপের জরিমানার মুখে পড়েননি। সেই দিক থেকে এই রায় একটি বিশাল নজীর স্থাপন করেছে।

সবার মনে এখন প্রশ্ন- এই রায় কি এ ধরনের ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব এবং সেগুলো মানুষের যে ক্ষতি করতে পারে, তার অবসান ঘটাবে?স্যান্ডি হুক স্কুলের নিহত শিশুদের বাবা-মায়েরা অবশ্য এটাই আশা করেন।

কিন্তু যখন অ্যালেক্স জোনসের কথা আসে, তখন ইনফোওয়ারসের একজন প্রাক্তন কর্মী মনে করেন যে এটি তার পতনের শুরু মাত্র। যদি তাকে এই ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে হয়, তাহলে তার কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।আদালতের শুনানির সময় করা অ্যালেক্স জোনসের লাইভস্ট্রিম থেকে আগামী দিনগুলোতে তিনি কী করবেন তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। চাঁদা নিয়ে মন্তব্য করার পরে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বন্ধ করতে চায়।’

তিনি ইতোমধ্যে দাবি করতে শুরু করেছেন যে এই রায় প্রমাণ করে রাষ্ট্র তাকে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু আদালতে উপস্থিত শোকাহত পরিবারগুলো খুব ভালো করেই জানে যে তার বক্তব্য সত্য থেকে কতটা দূরে।

মহামারীতে ডালপালা মেলেছে ভুয়া খবর
সমস্যা হলো, এই পরিবারগুলো অ্যালেক্স জোনসের শ্রোতা নয়।জার্নাল অফ সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিকাল সাইকোলজির চালানো একটি জনমত জরিপ বলছে, প্রায় ২০ শতাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করেন যে বড় বড় পাইকারি খুনের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার সবই সরকারের সাজানো নাটক। এই জরিপটি চালানো হয়েছিল ২০২০ সালে, কিন্তু সেটি আজকে করা হলেও এই সংখ্যাটি কম হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।

কোভিড মহামারী চলার সময় অনলাইনে ষড়যন্ত্রের নানা ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে, এবং অ্যালেক্স জোনসের মতো ষড়যন্ত্র-তাত্ত্বিকদের কৌশল ও বক্তৃতার ফাঁদে আরো বেশি সংখ্যায় বিশ্বাসপ্রবণ মানুষ যোগ দিয়েছেন।

যাদের মাথায় সাধারণ প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে, তারা সোশ্যাল মিডিয়া জগতে ঢুকে পড়ার পর খুব বড়, অনিশ্চিত ও ভয়ঙ্কর সব বিষয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত সব জবাব পেতে শুরু করেন।তারা মনে করেন, তারা যা দেখছেন বা পড়ছেন সেটাই চরম সত্য। এরাই হন ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের প্রবক্তা এবং ভুয়া খবর প্রচারকারীদের প্রধান শ্রোতা।আর এই ধারা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আপনার আশেপাশেই তাকিয়ে দেখুন।

সূত্র : বিবিসি