ড্রাইভিং করা উচিত হবে না-চালকের এটা কখন বোঝা উচিত
ড্রাইভিং করা উচিত হবে না-চালকের এটা কখন বোঝা উচিত
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআরটিএ'র হিসেবে দেশে কুড়ি ধরণের ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচল করে, যার মধ্যে মোটরসাইকেলই আছে প্রায় ৩৯ লাখ।
তবে বাস্তবতা হলো এর বিপরীতে লাইসেন্স আছে মাত্র প্রায় ২৫ লাখ চালকের। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক চালকেরই যথাযথ লাইসেন্স নেই।আবার বিআরটিএ'র হিসেবের বাইরেও দেশজুড়ে ত্রিশ লাখেরও বেশি নসিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইক চলছে কোনো ধরণের অনুমোদন ছাড়াই।ফলে এসব গাড়ী চালকদেরও বৈধ লাইসেন্স নেই।
আর এসব কারণে বিশ্বের অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও একটি।দেশটিতে সরকারি হিসেবেই গত বছর পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।যদিও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসেবে অনেক পার্থক্য দেখা যায়।
আবার দেশের সব জায়গার সব দুর্ঘটনা পুলিশ বা কর্তৃপক্ষের নজরেও আসে না।বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট (এআরআই) এর হিসেবে নব্বই শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনেই চালকের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
আবার চালকদের দক্ষ করার জন্য প্রায় দেড়শটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও এগুলো আসলে কতটা কাজ করে তা দেখার কোনো ব্যবস্থাই নেই।এআরআই এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলছেন দেশে শুধু ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রেই অন্তত তিন লাখ দক্ষ চালকের ঘাটতি আছে।
চালক কখন বুঝবেন যে তার ড্রাইভিং করা উচিত নয়
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান বলছেন, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও কারও যানবাহন নিয়ে রাস্তাতেই নামা উচিত নয় কোনো পরিস্থিতিতেই।
শুধু লাইসেন্স থাকলেই চলবে না, তিনি সত্যিকার অর্থেই গাড়ী চালাতে দক্ষ কি-না সেটি নিশ্চিত হয়েই তাকে রাস্তায় নামা উচিত বলে মনে করেন তিনি।এছাড়া যদি কেউ মানসিক বা শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকেন তাহলে তখন বৈধ লাইসেন্স থাকলেও তার ড্রাইভ করা অনুচিত হবে।এমন আরও কিছু বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই গাড়ী চালনা করা উচিত বলে মনে করেন মিস্টার হাদীউজ্জামান। এগুলো হলো:
•শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
•নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি না চালানো
•চোখে ঘুম থাকলে
•কোনো কারণে খুব ক্লান্ত থাকলে
•গাড়ীর কন্ডিশন ভালো না হলে
নিরাপদ ড্রাইভিং - কী করা উচিত
ড. হাদীউজ্জামান বলেন, চালকের মাদক সেবনের প্রবণতা আছে কিনা সেটা যানবাহন মালিকদের নিশ্চিত হওয়া উচিত এবং চালকদের যথাযথ নিয়োগপত্র দেয়া উচিত।
"একইসাথে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা থাকা উচিত যা সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা হতে পারে। তবে একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টা পর অন্তত আধাঘণ্টা বিশ্রাম নেয়া উচিত," বলছিলেন তিনি।যদিও বাংলাদেশের সড়ক মহাসড়কে চালকের বিশ্রামের জন্য কার্যত সে ধরণের কোনো ব্যবস্থা নেই।সাম্প্রতিককালে অবশ্য কিছু মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছে।
একইসাথে বিশেষজ্ঞরা দূরপাল্লার যানবাহনে বিকল্প চালক রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তাগিদ দিয়ে আসছেন, কারণ বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই ঢাকা থেকে যেতে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় নানা কারণে।এছাড়া গণপরিবহন ও ভারী যানবাহনে লগবুক মেনটেইন করা উচিত বলেও মনে করেন তারা যাতে করে যাত্রা শুরু ও বিশ্রামের সময় সেখানে লিপিবদ্ধ রাখা যায়।মোটরসাইকেল আর বেপরোয়া গতি
ড. হাদীউজ্জামান বলছেন, দেশে ৩৫ দুর্ঘটনাই মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট।এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি মোটরসাইকেল আরোহী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। আর বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি।একটি বেসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রায় ৬২% দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি।
তবে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে সবসময়ই পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছেন বড় এবং ছোট গাড়ির চালকেরা।ঢাকা -টাঙ্গাইল রুটের গাড়ী চালক শাহ আলম বলছেন, মহাসড়কে হুটহাট বাইক, ইজি বাইক কিংবা রিকশার মতো যানবাহন চলে আসে বলেই দুর্ঘটনা বেশি হয়।
"বড় গাড়ী তো সাবধানেই চালাই। কিন্তু হুট করে যেভাবে বাইক, অটো, ইজিবাইক সামনে আসে তাতে দিনে যে কতবার বাইচা যাই নিজেও জানি না," বলছিলেন তিনি।তবে ঢাকা গাজীপুরে নিয়মিত বাইকে যাতায়াতকারী শাহিনুর মিয়া বলছেন, বাইকের অনেক চালক যেমন কোনো নিয়ম মানে না তেমনি আবার অনেক বাইক চালক নিয়ম মেনে সতর্কভাবেই বাইক চালান।
"নিয়ম তো সব ধরণের চালকরাই ভাঙ্গে। দোষ বেশি হয় বাইকের। ভালোভাবে দ্রুত যাতায়াতের মতো বাস থাকলে আমি কি ঢাকা থেকে প্রতিদিন গাজীপুরে বাইকে যেতাম? বাস সব লক্কড় ঝক্কর আর চালকরা বেপরোয়া। ফলে এসব বাসে উঠলেও ভয় লাগে," বলছিলেন তিনি।তবে অধ্যাপক হাদীউজ্জামান বলছেন, বিষয়টা দোষারোপের নয় বরং উপলব্ধির।"চালক তিনি যাই চালান না কেন, যাত্রা শুরুর আগে তাকে কনভিন্স হতে হবে যে গাড়ী চালনার মতো দক্ষতা তার আছে এবং তিনি ফিট আছেন। নাহলে তার নিজের জীবনও ঝুঁকিতে পড়বে আবার পথচারী ও যাত্রীর জীবনও বিপন্ন হবে"।
সূত্র : বিবিসি