ভারত যেসব কারণে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে ধরাশায়ী হলো

ভারত যেসব কারণে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে ধরাশায়ী হলো

ভারত যেসব কারণে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে ধরাশায়ী হলো

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ ভারতকে খুব সহজেই হারিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। ১০ উইকেটের দাপুটে এবং বড় ব্যবধানের এই জয় দিয়ে রবিবার মেলবোর্নে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করলো জস বাটলারের দল।

বিশ ওভার ব্যাট করে ১৬৮ রান তোলা ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয় পেতে কোন উইকেট হারাতে হয়নি, আর জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে মাত্র ১৬ ওভার ব্যাট করতে হয়।অ্যাডেলেইডে ভারত মূলত ইংল্যান্ডের দুই ওপেনারের কাছেই হেরে যায়।

জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেইলসের দাপট

ম্যাচের শুরু থেকেই ভারতের ক্রিকেটারদের ব্যাটিংয়ের ধরন্ই সমস্যা ছিল, এমন মন্তব্য করে ক্রিকেট সাংবাদিক বোরিয়া মজুমদার লিখেছেন, “ইংল্যান্ড দেখিয়েছে কীভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাট করতে হয়"।

ঠিক সেটাই হয়েছে ম্যাচে - ১৬৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে জস বাটলার প্রথম ওভারেই তিনটি চার হাঁকান।বিবিসির ক্রিকেট প্রতিনিধি জনাথন অ্যাগনিউ লিখেছেন, “এটা সত্যিই এক অনন্য পারফরম্যান্স।”

জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেইলস মিলে প্রথম ৬ ওভারেই তুলে নেন ৬৩ রান।পাওয়ার-প্লে শেষ হওয়ার পরপর ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন টুইটারে লেখেন, “ভালো একটা পাওয়ার-প্লে গেল ইংল্যান্ডের জন্য।

"এবারে তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে।”ভারত ঠিক এই পাওয়ার-প্লেতেই ম্যাচটা হেরে গেছে। ভারতের ব্যাটিং মনেই হয়নি যে এরপর আর ভারত এই ম্যাচ জিততে পারবে।খেলায় চাপে পড়ে অদ্ভুত সব ভুল করেছেন ভারতের ফিল্ডাররা।

মোহাম্মদ শামী ডিপে ফিল্ডিং করতে গিয়ে সহজ থ্রো না করে পাশের ফিল্ডারকে দিতে গিয়ে বাড়তি দু'রান নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। বাটলারের বল উঁচুতে ওঠার পর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন, যেটা গড়িয়ে চার রানে পরিণত হয়।জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেইলস এতোই ভালো ব্যাটিং করেছেন যে ম্যাচের প্রথম ১৩ ওভারে ভারত যত রান করেছিল, সেই সময়ে তাদের চেয়ে ৫৯ রানের এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড।

জনাথন অ্যাগনিউ ম্যাচ শেষে টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে বলেছেন, “এটা ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্সের একটি। আমি শব্দ দিয়ে বোঝাতে পারছি না এই জয় কতোটা বড়।”অ্যালেক্স হেইলস ৪৭ বলে ৮৬ এবং জস বাটলার ৪৯ বলে ৮০ রান তোলেন - দু'জনই অপরাজিত ছিলেন।

প্রায় তিন বছর পর জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে অ্যালেক্স হেইলস ম্যাচ শেষে বলেন যে যেভাবে তিনি খেলেছেন তাতে তিনি খুশি।"আমি মনে করি এই মাঠে ব্যাট করা একটা দারুণ কাজ। এখানে স্কয়ারে বাউন্ডারি ছোট, এবং আমার দারুণ সব স্মৃতি আছে এই মাঠে। আমি কখনো ভাবিনি আবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবো। এটা একটা বিশেষ অনুভূতি।”

ভারত কোথায় ভুল করলো

বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার রাভি বোপারা বলেন, “ভারত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে পারেনি। প্রথম ছয় ওভারে দেখেশুনে খেলে ৪০ রান নেয়ার সময় এখন আর নেই। আপনার যদি দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণ না থাকে, আপনি এই ক্ষতি পোষাতে পারবেন না।”

রাভি বোপারার মতে, ভারতের এখন ‘ডাইনামিক’ ক্রিকেটার প্রয়োজন যারা প্রথম ছয় ওভারে ৬০ রান তুলতে পারে। কেভিন পিটারসেনও টুইটারে একই সুরে লিখেছেন, “ইংল্যান্ড ছিল ক্ষুরধার। ভারতের দলটা দারুণ, কিন্তু ইংল্যান্ড ছিল নিখুত।”মূলত ভারতের দুই ওপেনার আজও হতাশ করেছেন - পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ভারত তোলে মাত্র ৩৮ রান।এই টুর্নামেন্টে ভারত একমাত্র জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ছয় ওভারে ৪০ পার করেছিল।

এছাড়া, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৭, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৩, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩২ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ছয় ওভার ব্যাট করে ৩১ রান তোলে দলটি।টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন এভাবে চলে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

কোনও কোনও ম্যাচ দুর্দান্ত বোলিং জিতিয়ে দিতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই প্রথম ছয় ওভারে ৩০-৪০ রান যথেষ্ট হয় না। লোকেশ রাহুল আজ করেছেন ৫ বলে ৫ রান, আর রোহিত শর্মা ২৮ বল খেলে করেছেন ২৭ রান।

এই ইনিংসের পর সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের মতো ব্যাটসম্যানরাও রান তোলার চাপ নিয়ে মাঠে নামেন এবং আজ তিনি আদিল রশীদের লেগস্পিন শরীরের বাইরে থেকে তুলে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।ভারত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের বড় টুর্নামেন্টে টানা ব্যর্থ হচ্ছে। এ নিয়ে টানা চারটি সেমিফাইনাল খেলে হারলো ভারত - সিডনিতে ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, মুম্বাইয়ে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ম্যানচেস্টারে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং আজ অ্যাডেলেইডে।পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শোয়েব আখতার মনে করেন, আজকের স্কোরকার্ড ১৭০/০ ভারতকে অনেকদিন ধরে বিক্ষুব্ধ করবে।

আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের পর ইংল্যান্ড এখন ফাইনালে

জস বাটলার মনে করেন, তাদের আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হার এখন অনেক দূরের গল্প।এই টুর্নামেন্টেই ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেছে, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান তাড়া করতে যথেষ্ঠ কষ্ট করেছে।তবে আজ যে পারফরম্যান্স ইংল্যান্ড দেখিয়েছে, তা অনেকের কাছেই ছিল অনবদ্য।জস বাটলার এর জন্য পুরো দলকেই ক্রেডিট দিতে চান। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, “এটা ছিল ১ থেকে ১১ এর পারফরম্যান্স।”“আদিল রশীদকে দেখেন, আজ এগারো নম্বরে। আমাদের দলের ব্যাটিং এতোটাই গভীর। আমাদের আক্রমণাত্মক হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

“আমি বিশেষ ধন্যবাদ দেবো ক্রিস জর্ডানকে। আজ মাঠে নেমেই তার প্রভাব ছিল দেখার মতো।”নিয়মিত ফাস্ট বোলার মার্ক উড ইনজুরিতে থাকায় ক্রিস জর্ডান আজ একাদশে ছিলেন।২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি ম্যাচে হারের পর ইংল্যান্ডের গোটা ক্রিকেট কাঠামোই ঢেলে সাজানো হয়েছিল। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটি ছিল অ্যাডেলেইডে।আজ এই অ্যাডেলেইডেই ইংল্যান্ড এমন এর পারফরম্যান্স দেখালো ভারতের বিপক্ষে, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

সূত্র : বিবিসি