বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়

ফাইল ফটো

ইতিহাস গড়ল টাইগার যুবারা। নাটকীয় ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। ভারতের দেওয়া মামুলি লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড় তোলেন দুই টাইগার ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজীদ হাসান। মাত্র ৮.২ ওভারেই ৫০ রানের জুটি গড়েন তারা। 

তবে ৫০ রানের জুটি গড়েই আউট হয়ে ফিরেছেন তানজীদ হাসান। ৯ম ওভারের দ্বিতীয় বলে রবি বিষ্ণইকে ৬ হাঁকিয়ে দলীয় ৫০ পূর্ণ করেন তানজীদ। একই ওভারের পঞ্চম বলে আবারও ছয় মারতে গিয়ে কার্তিক তিয়াগির হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে এ ব্যাটসম্যান ২৫ বলে করেন ১৭ রান।

তানজীদের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন সেমিফাইনালের সেঞ্চুরিয়ান জয়। তবে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেনি তিনি।  ১২ বলে দুই চারে ৮ রান করে রবি বিষ্ণইর বলে আউট হন জয়। এরপর একই ওভারে ব্যথা পেয়ে ক্রিজ ছাড়েন পারভেজ। ৪২ বলে ৪ চারে ২৫ রান করে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ক্রিজে এসে থিতু হতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়। রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন তিনি। ৬২ রানেই তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

এ দিন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান শাহাদাত হোসেন, শামিম হোসেন ও অভিষেক দাসও। তাদের বিদায়ে ১০২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। দলের বিপর্যয়ে ব্যথা নিয়েই আবারও ক্রিজে আসেন পারভেজ। আকবর আলীর সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়ে আবারও দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন তিনি। কিন্তু পার্টটাইম বোলার জয়সওয়ালের স্পিনে থেমে যায় পারভেজের লড়াই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ালেও পারভেজের বীরত্বপূর্ণ ৪৭ রানের ইনিংসটিই ভরসা জোগাচ্ছিল বাংলাদেশকে।

পারভেজ আউট হলেও একপাশে লড়াই চালান বাংলাদেশের অধিনায়ক আকবর আলী। একপাশ আগলে রেখে নিভু নিভু করা জয়ের আশা আবারও জাগিয়ে তোলেন আকবর আলী। রকিবুলকে সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে দলকে জয়ের বন্দরে টেনে নিয়ে যান তিনি। রকিবুলও দাঁতে দাঁত চেপে টিকে থাকেন ক্রিজে, যোগ্য সঙ্গ দেন আকবরকে।

জয় থেকে বাংলাদেশ যখন ১৫ রান দূরে তখন হানা দেয় বৃষ্টি। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি কমলে আবারও খেলা মাঠে গড়ায়। ৮ রান কমে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭০ রানে। ফলে বাংলাদেশের দরকার হয় আর মাত্র ৭ রান। আর দেরি করেননি আকবর। ৭ রান তুলতে খেলেন মাত্র ৭ বল। আর তাতেই ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। এই তরুণ যুবাদের হাত ধরেই প্রথমবার কোনো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

এর আগে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে নেমে শুরু থেকে ভারতকে চাপে ফেলে টাইগার যুবারা। অভিষেকের মাধ্যমে প্রথম সাফল্য পায় আকবর আলিরা। ৯ রানের মাথায় দিব্যাংশ সাক্সেনার উইকেট তুলে নেন তিনি। 

দ্বিতীয় উইকেটে নিজেদের সামলে নেয় ভারতীয় যুব দল। জয়সওয়াল ও তিলক ভার্মা ৯৪ রানের জুটি গড়েন বেশ আস্থার সঙ্গে। ৩৮ রানে তিলককে ফেরান পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ১১৪ রানের মাথায় ছন্দে থাকা স্পিনার রকিবুল ফেরান অধিনায়ক প্রিয়াম গার্গকে। 

ধাক্কা সামলে ভারতের হয়ে লড়াই করেন যশস্বী জয়সওয়াল। সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শরিফুলের শর্ট পিচ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ৮৮ রানে। মিড উইকেটের সহজ ক্যাচ লুফে নেন তানজিদ হাসান তামিম। এরপরই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। পরের বলে সিদ্ধেশ বীরকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল।

মাত্র ২১ রানের ব্যবধানে পরপর ৭ উইকেট পড়ে ভারতীয় যুবাদের। শরিফুলের পর বিশ্বকাপে গতির ঝড় তোলেন অভিষেক দাস। ৪৫তম ওভারে অথর্ব আনকোলেকর ও কার্তিক তিয়াগির উইকেট তুলে নেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো এবারের আসরে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন অভিষেক। এর মাঝে রানআউটের শিকার ধ্রুব জুড়েল ও রবি বিষ্ণই। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সুশান্ত আউট হন সাকিবের বলে। এতে ৪৭.২ ওভারে মাত্র ১৭৭ রানে অলআউট হয় ভারত।