কেনেডি হত্যাকাণ্ডের হাজারো গোপন ফাইল প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র

কেনেডি হত্যাকাণ্ডের হাজারো গোপন ফাইল প্রকাশ করলো যুক্তরাষ্ট্র

সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই প্রথম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত হাজার হাজার গোপন নথি কোনোকিছু বাদ না দিয়ে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত মোট ১৩ হাজার ১৭৩টি গোপন নথি প্রকাশ করা হচ্ছে। এর ফলে এ সংক্রান্ত সব নথির মোট ৯৭ শতাংশই এখন সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলো।

এসব নথি থেকে যে চমকপ্রদ নতুন কোনোকিছু জানা যাবে তেমন কিছু আশা করা হচ্ছে না। তবে ইতিহাসবিদরা আশা করছেন, প্রেসিডেন্ট কেনেডির কথিত আততায়ী সম্পর্কে তারা আরো বিশদভাবে জানতে পারবেন।

প্রেসিডেন্ট কেনেডি যখন ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর টেক্সাসের ডালাস শহরে যান, তখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯২ সালে পাশ হওয়া আইনে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সমস্ত গোপন ফাইল ২০১৭ সালের অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল সরকারকে।

প্রেসিডেন্টে জো বাইডেন বৃহস্পতিবার এসব নথি প্রকাশের জন্য এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। তবে তিনি বলেন, কিছু ফাইল ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত গোপন রাখা হবে সম্ভাব্য কিছু ‘চিহ্নিত ঝুঁকির’ কারণে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভ জানিয়েছে, ৫১৫টি নথি পুরোপুরি গোপন রাখা হচ্ছে এবং আরো ২ হাজার ৫৪৫টি নথির আংশিক গোপন রাখা হচ্ছে।

কেনেডি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের নিয়োগ করা ওয়ারেন কমিশন ১৯৬৪ সালে তাদের রিপোর্টে বলেছিল, প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যা করেন লি হার্ভি অসওয়াল্ড নামের এক মার্কিন নাগরিক, যিনি একটা সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাস করেছেন।

ওয়ারেন কমিশন বলেছিল, অসওয়াল্ড একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার মাত্র দু’দিন পর অসওয়াল্ড নিজেই ডালাসের পুলিশ সদর দফতরের বেজমেন্টে গুলিতে নিহত হন।

জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড নিয়ে দশকের পর দশক ধরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা প্রচলিত ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ বৃহস্পতিবার আবারো বলেছে, তারা কখনোই অসওয়াল্ডকে কাজে লাগায়নি এবং তার সম্পর্কে কোনো তথ্যও যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে লুকায়নি।

কী আছে গোপন নথিতে
জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আগ্রহী গবেষক এবং তাত্ত্বিকরা আশা করছেন, নতুন প্রকাশিত সরকারি নথি থেকে অসওয়াল্ড সম্পর্কে তারা অনেক কিছু জানতে পারবেন। বিশেষ করে ১৯৬৩ সালের অক্টোবর মাসে মেক্সিকো সিটিতে যখন তিনি এক সোভিয়েত কেজিবি অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখন আসলে তিনি সেখানে কী করছিলেন, সে সম্পর্কে।

সিআইএ তাদের সর্বশেষ বিবৃতিতে বলেছে, অসওয়াল্ডের মেক্সিকো সিটি সফর সম্পর্কে যেসব তথ্য তারা গোপন রেখেছিল, তার সবকিছু আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন প্রকাশ করা দলিলগুলোতে এ সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য নেই।

তবে মেরি ফেরেল ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলছেন, অসওয়াল্ড মেক্সিকো সিটিতে যে সময় কাটিয়েছিলেন, সেই সময়ের অনেক তথ্য সিআইএ গোপন রাখছে। এই মেরি ফেরেল ফাউন্ডেশনই কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সব দলিল প্রকাশের আবেদন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

তারা বলছে, সিআইএ’র কিছু ফাইল কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আর্কাইভে জমা দেয়া হয়নি। ফলে সদ্য প্রকাশিত দলিলপত্রের মধ্যে এগুলো নেই।

নতুন প্রকাশিত একটি দলিলে দেখা যায়, মেক্সিকোর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করেছিলেন যাতে তারা মেক্সিকোতে সোভিয়েত দূতাবাসে আড়িপাতার যন্ত্র বসাতে পারে। তবে মেক্সিকোর সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল।

এই ফাইলটি যখন এর আগে প্রকাশ করা হয়, তখন সেখান থেকে এই তথ্যটি কেটে বাদ দেয়া হয়েছিল।

হোয়াইট হাউজ বলছে, কেনেডি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পরিচালিত সরকারি তদন্ত ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে নতুন প্রকাশিত ফাইলগুলো মানুষকে সাহায্য করবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার নির্বাহী আদেশে লিখেছেন, ‘যে প্রায় ১৬ হাজার নথি এর আগে অংশত কাটা-ছেঁড়া করে প্রকাশ করা হয়েছিল, সরকারি সংস্থাগুলো পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার পর সেগুলোর ৭০ শতাংশই পুরোপুরি প্রকাশের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও তার শাসনামলে কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত হাজার হাজার নথি প্রকাশ করেছিলেন। তবে কিছু নথি জাতীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গোপন রাখা হয়েছিল। যদিও ১৯৯২ সালের আইনে সব নথি ২০১৭ সালের মধ্যে প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল।

এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রায় দেড় হাজার নথি প্রকাশ করেন, কিন্তু অনেক নথি তখন গোপন রেখেছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক সাবেক রিপোর্টার এবং কেনেডি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি বইয়ের লেখক ফিলিপ শেনন বলেন, অসওয়াল্ডের মনোভাব সম্পর্কে সরকার আগে থেকে কিছু আঁচ পেয়েছিল কিনা, নতুন প্রকাশিত দলিলপত্র হয়তো সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে পারবে।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার সন্দেহ, লি হার্ভি অসওয়াল্ড যে খুবই বিপজ্জনক ব্যক্তি এবং সে যে হয়তো প্রকাশ্যেই প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার কথা বলতো, এসব দলিলের কিছু তথ্য থেকে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।’

‘একটা প্রশ্ন কিন্তু সবসময় ছিল। সেটা হচ্ছে, এই লোকটা যে প্রেসিডেন্ট কেনেডির জীবনের জন্য হুমকি, তার কি কোনো আঁচ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, সিআইএ এবং এফবিআই পেয়েছিল? তারা যদি এসব তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিত, তাহলে কি তারা প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করতে পারতো?’

কিভাবে নিহত হন প্রেসিডেন্ট কেনেডি?
প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ড ছিল গত শতকের সবচাইতে নাটকীয় এবং চাঞ্চল্যকর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি। পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই ঘটনা। হত্যাকাণ্ডের ৫৯ বছর পর নতুন প্রকাশিত সরকারি দলিলপত্র আবারো এই ঘটনাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

এর কারণও আছে। প্রেসিডেন্ট কেনেডি ছিলেন গড়পড়তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে অনেক আলাদা। সুদর্শন এই প্রেসিডেন্ট এবং তার সুন্দরী স্ত্রী জ্যাকি হোয়াইট হাউসে একটা গ্ল্যামার যোগ করেছিলেন।

জন এফ কেনেডি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ধনী এবং প্রভাবশালী এক পরিবারের সন্তান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধেও গিয়েছিলেন। ফ্রাংক সিনাত্রা, ডিন মার্টিনের মতো নামকরা তারকারা ছিলেন তার বন্ধু। তার বেশ কয়েকজন গোপন প্রেমিকা ছিল বলে গুঞ্জন আছে, এদের একজন ছিলেন মেরিলিন মনরো।

ডালাস সফরে যাওয়ার পর ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর যখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন, তখন তিনি ছিলেন গাড়িতে। পাশে বসা ছিলেন তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি জ্যাকি। একটি উঁচু ভবন থেকে আততায়ী তাকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি করে বলে বলা হয়।

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই হত্যা-রহস্য উদঘাটনের দাবি করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ২৪ বছর বয়সী এক সাবেক মেরিন সেনা লি হার্ভি অসওয়াল্ডকে। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু আসলে ঠিক কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে অসওয়াল্ডের বক্তব্য কেউ জানার সুযোগ পায়নি।

কারণ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার দু’দিন পরেই এক নৈশক্লাবের মালিক জ্যাক রুবি ডালাসের পুলিশ সদর দফতরে ঢুকে সেখানকার বেজমেন্টে একেবারে সামনাসামনি গুলি করে অসওয়াল্ডকে হত্যা করে।

অসওয়াল্ড নিহত হওয়ায় কেনেডি হত্যাকাণ্ডের অনেক তথ্য অনুদঘাটিত থেকে যায়। আর এর ফলে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু হয়।

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হলো, আর কথিত হত্যাকারী ধরা পড়ার পর পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় দু’দিনের মাথায় সেও নিহত হলো- এই বিষয়টি বহু মানুষের কাছে একদম অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছে। আর কথিত হত্যাকারী অসওয়াল্ডের জীবনকে ঘিরেও ছিল অনেক প্রশ্ন। ফলে কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে দ্রুত অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়াতে থাকে। এর কারণও ছিল। প্রথমত, প্রেসিডেন্ট কেনেডি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। দ্বিতীয়ত, এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনা যখন চরমে, তখন। যেকোনো সময় পরমাণু যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে তখন আশংকা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিয়োগ করা কমিশন দাবি করেছিল, অসওয়াল্ড একাই এই কাজ করেছিল, তার সাথে আর কেউ ছিল না। এর পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের কথা নাকচ করে দিয়েছিল কমিশন।

কিন্তু কমিশন অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।

লি হার্ভি অসওয়াল্ড কেনেডি হত্যাকাণ্ডের আগে বেশ কিছু সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে কাটিয়েছিলেন। বলা হয়, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। তবে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের আগের বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। কোনো কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বে দাবি করা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কিউবার পক্ষ হয়ে এই কাজ করেছেন অসওয়াল্ড।

আবার অন্য কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্বে দাবি করা হয়, এর পেছনে সিআইএ’র হাত ছিল। কেউ কেউ তো কেনেডির ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনকে এজন্যে সন্দেহ করেন, তিনিই নাকি প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে ছিলেন।

সিআইএ ও এফবিআই আগে থেকে এরকম একটি হুমকির ব্যাপারে কতটা জানতো তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে।

অনেকের বিশ্বাস, কেনেডির ওপর গুলি চালিয়েছিল একজন নয়, দু’জন বন্দুকধারী।

টোনি গ্লোভার এই হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তখন তার বয়স ছিল ১১ বছর। তিনি মনে করেন, একজন দ্বিতীয় বন্দুকধারী সেখানে ছিল, যার অবস্থান ছিল রাস্তার অপর পাশে।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক সাবেক রিপোর্টার জেফারসন মোরলি কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। অসওয়াল্ড প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে গুলি করেছিল কি না, এটি নিয়ে তার সন্দেহ আছে। তার মতে, যে গুলিতে প্রেসিডেন্ট কেনেডি নিহত হন, সেটি এসেছিল সামনের দিক থেকে, পেছন থেকে নয়।

এই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গুলি লাগার পর দেখা যাচ্ছে কেনেডির মাথা পেছন দিকে হেলে পড়েছে। সাধারণ বোধবুদ্ধিতে বলে, পেছন থেকে গুলি লাগলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। দেখে নিশ্চিতভাবে এমনটাই মনে হয় যে গুলিটা এসেছিল সামনের দিক থেকে।’

কেনেডি হত্যার ব্যাপারে সরকারি ব্যাখ্যাকে জেফারসন মোরলি আরো নানা কারণে সন্দেহ করেন।

গ্রেফতার হওয়ার পর অসওয়াল্ডের গালে যে প্যারাফিন টেস্ট করা হয়, তাতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি রাইফেল দিয়ে গুলি করেননি। (তবে এই পরীক্ষার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আবার প্রশ্ন আছে)।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট কেনেডির পাশে বসা টেক্সাসের গভর্নর জন কোনালি, যিনি নিজেও সেদিন গুলিতে আহত হন, তিনি বলেছিলেন, কেনেডি যে গুলিতে নিহত হন, তার গায়ে সেই একই গুলি লাগেনি। ওয়ারেন কমিশন রিপোর্টের তথ্যের সাথে তার এই বক্তব্যে বেশ গরমিল দেখা যায়। জেফারসন মোরলি আরো বলেন, সরকারি ব্যাখ্যার আরো অনেক কিছুই আসলে প্রকৃত ঘটনার সাথে মিলছে না।

‘সরকারি কমিশনের রিপোর্টে বলা হচ্ছে, অসওয়াল্ড নামের এই লোকটি সম্পর্কে কেউ কিছু জানতো না। হঠাৎ এই লোক কোথাও থেকে উদয় হয়ে প্রেসিডেন্টকে গুলি করেছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি যে এই গল্প একদম মিথ্যে।’

‘সিআইএ’র কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের লোকজন এবং জেমস অ্যাঙ্গেলটন অনেকদিন ধরেই অসওয়াল্ডের ওপর নজর রাখছিল। তারা ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম অসওয়াল্ডের ওপর ফাইল খুলেছিল, এবং ১৯৬৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তারা অসওয়াল্ডের ওপর নজর রাখছিল।’

তবে বোস্টন ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং লেখক থমাস হোয়ালেন মনে করেন, অসওয়াল্ডই ছিলেন কেনেডির হত্যাকারী। ‘তবে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে কি আরো বড় কোনো ষড়যন্ত্র ছিল?’

ওয়ারেন কমিশন যদিও বলেছে, অসওয়াল্ড একাই এই কাজ করেছেন, তাদের রিপোর্টে এটি উল্লেখ আছে যে, অসওয়াল্ড ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন, সেখানে সোভিয়েত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সেখানে বসবাস করেছিলেন। অসওয়াল্ড ছিলেন একজন স্বঘোষিত মার্কসবাদী। ওয়ারেন কমিশন আরো দেখেছে, অসওয়াল্ড ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বরে মেক্সিকো সিটিতে গিয়ে সেখানে সোভিয়েত ও কিউবান দূতাবাসে গিয়েছিলেন।

থমাস হোয়ালেন আশা করছেন, নতুন প্রকাশিত দলিলপত্রে অসওয়াল্ডের মেক্সিকো সফর নিয়ে অনেক কিছু জানা যাবে।

‘হত্যাকাণ্ডের কয়েক সপ্তাহ আগে মেক্সিকো সিটিতে অসওয়াল্ড কী করছিল? সে কি কিউবা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচরদের সাথে দেখা করেছিল? ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সরকার হত্যার চেষ্টা করছিল, কাজেই কিউবানদেরও নিশ্চয়ই প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে হত্যার মতলব ছিল।’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একজন আইনজীবী ব্রুস মিরোগলি কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বহু বই পড়েছেন। ওয়ারেন কমিশন রিপোর্টের ২৬টি খণ্ডই তার সংগ্রহে আছে। তিনি বলেন, ওয়ারেন রিপোর্টে হয়তো অনেক ভুল আছে, কিন্তু এই রিপোর্টের উপসংহারকে তিনি সমর্থন করেন। ব্রুস মিরোগলি বিশ্বাস করেন না যে দ্বিতীয় কোনো বন্দুকধারী সেদিন ঘটনাস্থলে ছিল, আর কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোতেও তার বিশ্বাস নেই।

‘এরকম একটা ষড়যন্ত্র ধামাচাপা দিতে বহু মানুষকে এতে যুক্ত হতে হবে। এটা আমার কাছে প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয় যে এমন সাংঘাতিক একটা ষড়যন্ত্র তারা এভাবে গোপন রাখত পারবেন।’

সূত্র : বিবিসি