কুরআন : মুমিন জীবনে শান্তির বাগান

কুরআন : মুমিন জীবনে শান্তির বাগান

কুরআন : মুমিন জীবনে শান্তির বাগান

মহাগ্রন্থ’ আল-কুরআন। মুত্তাকিন বান্দার জন্য সত্য পথে চলার আলোকবর্তিকা, জীবন বিধান। যা বিশ্বনবী হজরত রাসূল সা:-এর ওপর নাজিল হয়েছে। এ কিতাব বিশ্বনবী সা:-এর একটি জীবন্ত মোজেজা। আলো-অন্ধকার, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় মূল্যায়নের মাপকাঠি। ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছি প্রামাণ্য দলিলসহ, আর নাজিল করেছি কিতাব ও ন্যায়ের দণ্ড। যাতে গোটা মানুষ জাতি ন্যায় ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’ (সূরা আল হাদিদ-২৫) সুতরাং বুঝা গেল, ন্যায়, ইনসাফ ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার একমাত্র মাপকাঠি আল-কুরআন। ইরশাদ করেন- ‘হে মুহাম্মদ! এটি একটি কিতাব। আমরা এটি তোমার ওপর নাজিল করেছি। যাতে তুমি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসো।’ (সূরা ইবরাহিম-১)

মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে এক লাখ বা দুই লাখ ২৪ হাজার নবী ও রাসূল প্রেরণ করেন। নবী ও রাসূলদের প্রতি সহিফা ও আসমানি কিতাব দিয়েছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূলের শরিয়ত একই রকম ছিল না। সর্বশেষে বিশ্বনবী সা:-এর ওপর মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাজিল হয়। ইতঃপূর্বে নাজিলকৃত সব আসমানি কিতাব রহিত করা হলো। শুধু কুরআনের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। সুতরাং আল-কুরআন মোমিন বান্দার ওপর প্রশান্তির বাগান।

মহান আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার কারণে মানুষ ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, হালাল-হারাম বোঝার ক্ষমতা রাখে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘তিনি আল্লাহ, যিনি স্বীয় রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে পঠিয়েছেন। যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সমস্ত মত ও জীবন ব্যবস্থার ওপর বিজয়ী করে দিতে পারেন। চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।’ (সূরা আস সফ-৯)

মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব আদেশ-নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এটি এমন একটি বিধান, এখানে বৈচিত্র্যময় কিছু বিধান রয়েছে। যা মানব রচিত বিধানে নেই। সে হিসেবে বোঝা যায়, কুরআন হচ্ছে মুমিনের কাছে একটি আয়না। আয়নায় সব কিছু সুস্পষ্টভাবে ভেসে উঠে। কোনো অন্তরায় দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে মানুষ, তোমাদের জন্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নসিহত এসে গেছে। এটি ওই জিনিস যা অন্তরের সব রোগ সারায় এবং মুমিনের জন্য হেদায়াত ও রহমত। হে নবী, আপনি বলে দিন, এটি আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানি যে, তিনি তা পাঠিয়েছেন। এর জন্য তো লোকদের খুশি হওয়া উচিত।’ (সূরা ইউনুস)

আল-কুরআন একটি জ্ঞানের সাগর। জ্ঞান-ডুবুরিরা এ সাগরে ডুবে সোনা-রুপা, মনি-মুক্তা, হিরা-জহরত নিয়ে আসেন। তারা এখানে মহান আল্লাহর নিয়ামত ও কুদরত খুঁজে পান। কোনো মানুষ যদি আসমানি কিতাবের জ্ঞানে জ্ঞানী না হয়, তাহলে তার মধ্যে মানুষ, মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ উপস্থিত থাকে না। জ্ঞানশূন্য হয়ে সে হয় অমানুষ। এ কিতাব অধ্যয়নে জিরো থেকে হিরো হওয়ার জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া যায়। আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য খোঁজা সম্ভব হয়। আল্লাহর নিয়ামত ও রহমত অফুরন্ত।

এ সব মানুষের জন্য। কিন্তু আমরা মানুষ নাফরমান। আল্লাহর শোকর আদায় করি না। আল্লাহ মানুষকে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, আলো-অন্ধকার বোঝার ক্ষমতা দিয়েছেন। এই কিতাবে আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, কিচ্ছা-কাহিনী, ইতিহাস-ঐতিহ্য, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, মরুভূমি ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। একজন মানুষ দৈনিক কিভাবে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করবে তার ব্যাখা রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে- ‘হে নবী আপনি বলুন, আমার নামাজ, কোরবানি, জীবন-মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’ এই বিধানকে যারা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অস্বীকার করে, তারাই কাফির। কারণ, আল্লাহর কাছে অন্য কোনো ধর্ম নয়, একমাত্র মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। ইরশাদ হচ্ছে- ‘একমাত্র আল্লাহর কাছে মনোনীত ধর্ম ইসলাম’। ইরশাদ হচ্ছে- ‘এটি আল্লাহর হেদায়াত যে, এটিই আমার সরল মজবুত পথ। এ পথেই চলো। অন্য সব পথে চলবে না। তাহলে তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে ছাড়িয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এ ওই হেদায়াত যা তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন। হয়তো তোমরা বাঁকা পথ থেকে বেঁচে থাকবে।’ (সূরা আন’আম)

ইসলামী আইনের মূল উৎস হলো কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। ইরশাদ হচ্ছে- ‘সুতরাং তাদের জন্যই ধ্বংস যারা নিজের হাতে শরিয়তের বিধান রচনা করে। তারপর লোকদের বলে, এ সব আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে, এর বদলে সামান্য কিছু মূল্য পেতে পার। তাদের হাতের এ লেখা তাদের জন্য ধ্বংসের কারণ এবং তাদের এ রোজগারও ধ্বংস করবে।’ (সূরা বাকারাহ) আমরা মানুষ, ক্ষুদ্র জ্ঞানের অধিকারী। আমাদের জ্ঞান যেখানে শেষ, সেখান মহান আল্লাহর জ্ঞান শুরু। আল্লাহর জ্ঞানের কোনো সীমারেখা নেই। তিনি অসীম জ্ঞানের অধিকারী।

আল-কুরআন একটি মহাকাব্য। এ কাব্যে ছড়া, কবিতা, গল্পসমগ্র, প্রবন্ধ ভাণ্ডার সাহিত্যে রসে ভরপুর। প্রতিটি শব্দ, লাইনে সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ও উপাদান যথাযথভাবে মিশে রয়েছে। কুরআনের সাথে জীবনের গভীর সম্পর্ক। শুধু জীবনই নয়, মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, স্বরাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি, শিক্ষানীতি, চিকিৎসানীতি, আইন-কানুনসহ দেশ পরিচালনার জন্য সব ধরনের বিধিবিধান চালু রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞান, সৃষ্টিরহস্য, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম, বিশ্বপ্রকৃতির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা মুমিন জীবনে একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।

এককথায় বলা যায়, আল-কুরআন মুসলমানের সংবিধান যা একমাত্র ইহকাল ও পরকালে মুক্তির উপায়। সুতরাং আল-কুরআনকে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজিক জীবনে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা ফরজ। আল-কুরআন মেনে চলতে পারলেই চার দিকে প্রশান্তির ঝরনাধারা প্রবাহিত হবে। ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে সেই বিধান পালনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হোক। এই কামনা করি।

লেখক : গ্রন্থকার, সহকারী অধ্যাপক