তুর্কমেনদের ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

তুর্কমেনদের ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সংগৃহীত

অনূর্ধ্ব-১৯ এএফসি মহিলা ফুটবলে বাংলাদেশ অধরা জয়ের দেখা পেয়েছিল ২০১৯ সালে। সেবার তাজিকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে ছোটন বাহিনীর ৫-১ গোলে জয় ছিল মনিকা চাকমার হ্যাটট্রিকে। ৫ বছর পর সে আসর এখন অনূর্ধ্ব-২০ বয়সীদের জন্য। এই লম্বা সময় পরও লাল-সবুজ মেয়েরা জয়ের ধারায়। এই জয়ও আরেক মধ্য এশিয়ান দলের বিপক্ষে। বৃহস্পতিবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ মহিলা ফুটবলের ‘এইচ’ গ্রুপের বাছাই পর্বে রুপনা চাকমারা ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তুর্কমেনিস্তানকে।

ফলে গ্রুপ সেরা হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে হলে বাংলাদেশকে এখন শনিবার জিততেই হবে ইরানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ এবং ইরান দুই দলেরই পয়েন্ট সমান তিন। তবে তুর্কমেনদের প্রথম ম্যাচে ৭-১ গোলে হারিয়ে গোল পার্থক্যে এগিয়ে ফার্সিভাষীরা। শেষ ম্যাচে ইরানের দরকার ড্র।

ইনজুরির জন্য ম্যাচে খেলা হয়নি অধিনায়ক শামসুন্নাহারের। ফলে দলের নেতৃত্বে সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা রুপনা চামকার। মিডফিল্ডে শামসুন্নাহার যে কতোটা কার্যকরী সে অভাবটা গতকাল হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল অতি দুর্বল তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমের আগে তেমন কোনো সুবিধাই করতে পারছিল না। নিজেদের তাড়াহুড়া করে খেলার প্রবণতা, এবং বিপক্ষ গোলরক্ষকের হাতে তুলে নেয়া ক্রসে নষ্ট হচ্ছিল সব আক্রমণ। মধ্য এশিয়ান দেশটির রক্ষণপ্রাচীর ভেঙ্গে তছনছ করার মতো কেউ ছিল না। পায়ের কাজে দক্ষ শাহেদা আক্তার রিপার প্রচেষ্টাগুলোও বাধা পাচ্ছিল ডিফেন্স লাইনে।

শেষ পর্যন্ত তুর্কমেন মেয়েদের রক্ষণভাগের ভুলেই প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে গোলের দেখা বাংলাদেশ দলের। স্বপ্না রানীর নেয়া কর্নার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য দেশটির গোলরক্ষক আমানবারদিয়েভা আয়েশা ফিস্ট করার পর তার বক্সেই পড়ে। তাদের এক ডিফেন্ডার তা ক্লিয়ার করার পর বক্সের বাইরে পান সোগাহী কিসসু। এই মিডফিল্ডার যে শট নেন তা এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ছোট বক্সের ওপর পড়ে আকলিকা খাতুনের সামনে। এরপর তার বাম পায়ের সাইড ভলি উল্লাসে মাতায় কমলাপুর স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার দুয়েক দর্শককে। গোল নিয়ে অবশ্য আপত্তি ছিল তুর্কমেনিস্তানের। তাদের দাবি বল আকলিমার হাতে লেগে তার পর পায়ে পড়ে। সিরিয়ান রেফারি প্রথমে গোলের বাঁশী বাজিয়ে পরে সহকারী রেফারির সাথে কথা বলে নিজের সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন।

তবে বাংলাদেশ ২০ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো। যদি সে সময় সুমরা জান্নাতের লবে গোলরক্ষককে একা পেয়েও দুর্বল শট না নিতেন আকলিমা। লিড নেয়ার পরোক্ষণেই তুর্কমেন কিপারের শট মাহফুজার গায়ে লেগে অল্পের জন্য জালে যায়নি। ৪১ ও ৪৫ মিনিটে স্বপ্না রানীর দুটি প্রচেষ্টায় বাধা বিপক্ষ কিপার। ৩৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে গোলের খুব কাছে চলে যায় তুর্কমেনিস্তান। বাংলাদেশ ডিফেন্ডার সুরমার ভুলে বল পান তাগানোভা শাশনেম। তিনি রুপনাকে একা পেয়ে শট নিলেও তা পা দিয়ে আটকে দেন বাংলাদেশের শেষ প্রহরী।

বিরতির পরও চলতে থাকে গোলাম রাব্বানী ছোটন বাহিনীর আক্রমণাত্মক খেলা। এবার আরো গোছালোভাবে। তবে দ্বিতীয় গোল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭১ মিনিট পর্যন্ত। রাইট ব্যাক পজিশনে দারুন খেলা ইতি খাতুনের ক্রসে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন আকলিমা।

এরপর ৮১ ও ৮২ মিনিটে দুই গোল করেন সাবেক স্ট্রাইকার এবং বর্তমানে মিডফিল্ডে খেলা স্বপ্না রানী। প্রথমে ইতি খাতুনের ক্রসে তার হেড জালে। পরের মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে নেয়া তার শট বক্সে তুর্কমেন ডিফেন্ডার কুরভানোভা পারভিনার পায়ে লেগে গোল লাইন অতিক্রম করে।

৮৪ মিনিটে বাংলাদেশ ৫ম গোল পায়নি সোহাগী কিসকুর শট বিপক্ষ কিপার দারুন দক্ষতায় কর্নার করায়। বাকি সময়ে লাল-সবুজরা ব্যবধান বাড়াতে পারেনি প্রান্তি, সোহাগী এবং সুমরা জান্নাতরা মিস করায়।

ম্যাচে বাংলাদেশ কিপার এক বারই বল ঠেকান পা দিয়ে। অন্য দিকে অতিথি দেশটি আরো বেশি গোল হজম করেনি তাদের গোলরক্ষকের দৃঢ়তায়।

বাংলাদেশ দল: রুপনা, সুরমা, নাসরিন (উন্নতি), প্রান্তি, ইতি, সোহাগী, স্বপ্না, মাহফুজা ( হালিমা), আইরিন, রিপা (নওশন), আকলিমা (আনিকা)।