ইমরান খানকে গ্রেফতারের অভিযান স্থগিত

ইমরান খানকে গ্রেফতারের অভিযান স্থগিত

গুলি ও কাঁদানের গ্যাসের শেল দেখিয়ে ইমরান খান বলেন যে এগুলো তার বাসভবনে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

পাকিস্তানের যে নিরাপত্তা বাহিনী মঙ্গলবার থেকে বিরোধী নেতা ইমরান খানকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিল, তারা মি. খানের বাড়ির আশেপাশের এলাকা থেকে সরে গেছে।ইমরান খানের দলের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর গ্যাস মাস্ক পরিহিত মি. খান তার সমর্থকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন।কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে কর্মকর্তারা এখনও কিছু বলেন নি।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ডন বলছে লাহোরে হাই কোর্টের নির্দেশে জামান পার্কে পুলিশের এই অভিযান আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।পত্রিকাটি তাদের খবরে বলছে যে এর আগে ইমরান খানের দলের এক নেতা এই অভিযান বন্ধ করার জন্যে পিটিশন দায়ের করলে আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে।ডন বলছে মি. খানের বাসভবনের সামনে থেকে পুলিশ বাহিনীকে প্রত্যাহার করার পর তার কর্মী ও সমর্থকরা সেখানে উল্লাস করেছেন।

‘ক্রিকেট টুর্নামেন্টের কারণে স্থগিত’

কিন্তু পাঞ্জাব প্রদেশের তথ্যমন্ত্রী আমির মির বিবিসিকে বলেছেন লাহোরের একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যাতে ঠিক মতো হতে পারে সেজন্য পুলিশ মি. খানকে গ্রেফতারের অভিযান স্থগিত করেছে।তিনি বলেন এই অচলাবস্থার কারণে শহরে যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটছিল যার ফলে লোকজন স্টেডিয়ামে যেতে পারছে না।তিনি বলেন ১৯শে মার্চ পাকিস্তানি সুপার লিগের ফাইনাল পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর এই অভিযান বন্ধ থাকবে।

‘সেনাবাহিনী ও পিটিআই মুখোমুখি’

এর আগে ইমরান খান বলেছেন যে তার বাসভবনে আধাসামরিক বাহিনীর এই অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগে মি. খানের বিরুদ্ধে করা এক মামলায় আদালতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকার সময় রাষ্ট্রীয় উপহার সামগ্রী বেআইনিভাবে বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মি. খান বলেছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।তার আইনজীবীরা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিলের অনুরোধ জানিয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেছেন।প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই-এর নেতা ইমরান খান বলছেন কর্তৃপক্ষ আইনের বাইরে গিয়ে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।“তাদের সবাইকে দেশের আইন মেনে চলতে হবে,” বিবিসিকে একথা বলেন মি. খান।

পুলিশ ও সমর্থকদের সংঘর্ষ

পাকিস্তানের পুলিশ আদালতের নির্দেশ অনুসারে ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে মঙ্গলবার তার লাহোরে জামান পার্কের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে।এসময় মি. খানের সমর্থক ও কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায় যা আজ বুধবারও অব্যাহত ছিল।পিটিআই-এর কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। দলের কর্মীরা তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করে।

ইমরান খানের বাড়ির সামনে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।এক ভিডিও বার্তায় ৭০ বছর বয়সী ইমরান খান এই মর্মে একটি গ্যারান্টি-পত্রে স্বাক্ষর করার প্রস্তাব দেন যে তিনি শনিবার ইসলামাবাদের আদালতে উপস্থিত হবেন।তিনি আরো বলেন এবিষয়ে তার মধ্যে নিরাপত্তা-জনিত উদ্বেগ রয়েছে, কারণ এর আগে আদালতে দুটো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল

পাকিস্তানের কিংবদন্তী ক্রিকেটার ইমরান খান দাবি করেন, পুলিশ “কোনো কারণ ছাড়াই” তাকে গ্রেফতার করতে গেছে, কেননা তিনি শনিবার পর্যন্ত জামিন নিয়ে রেখেছেন।তিনি বলেছেন বর্তমান সরকার তাকে কারাগারে পাঠানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এবং এর আগেও তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে তারা ব্যর্থ হয়েছে।“কারাগারের সেলে রাত কাটানোর জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত,” বলেন তিনি। “আমি জানি না কতো রাত আমাকে সেখানে কাটাতে হবে, তবে এর জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”

ইমরান খান এসময় গুলি ও কাঁদানের গ্যাসের শেল দেখিয়ে বলেন যে এগুলো তার বাসভবনের ভেতরে নিক্ষেপ করা হয়েছে।তিনি বলেন তার দল যাতে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।তবে তিনি বলেন: “আমি জেলে যাই আর না যাই, তারা আমার দলের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।”

সরকারের বক্তব্য

পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন তাকে গ্রেফতারের চেষ্টার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং দুর্নীতির মামলায় আদালতের নির্দেশ অনুসারে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে গেছে।তিনি অভিযোগ করেন যে গ্রেফতার এড়াতে মি. খান তার দলের কর্মী, নারী ও শিশুদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন এবং উত্তেজনা ছড়িয়েছেন।পাকিস্তানের অন্যান্য শহরেও মি. খানের সমর্থকরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে।গত বছরের এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে উৎখাত করা হয়।

এর পর থেকেই তিনি আগাম নির্বাচনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন।এবছরের শেষের দিকে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।ইমরান খান গত নভেম্বর মাসে সমাবেশ চলাকালে তাকে হত্যার চেষ্টার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে দায়ী করেন।ওই হামলায় মি. খান আহত হয়েছিলেন।

সূত্র : বিবিসি