ওমরাহ পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ওমরাহ পালনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

প্রতিকী ছবি

ওমরাহ পালন করা ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিশেষ ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। শব্দটি আরবি, এর আভিধানিক অর্থ : জিয়ারত করা, গমন করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বছরের যে কোনো সময়ে মসজিদুল হারাম-বাইতুল্লাহ গমন করে নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ সম্পাদন করাকে ওমরাহ বলা হয়। ওমরাহ পালনের জন্য নির্দিষ্ট স্থান তথা আপন আপন মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে মসজিদুল হারাম পৌঁছে প্রথমে আল্লাহর ঘর সাতটি তাওয়াফ করতে হয়। অতঃপর মাকামে ইবরাহিমের পাশে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সাফা-মারওয়া পর্বতদ্বয়ে সাতবার সায়ি করতে হবে। মৌলিকভাবে এই কয়েকটি কাজের মাধ্যমে ওমরাহ সমাপ্ত হয়। অতঃপর ওমরাহ পালনকারী তার ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য পুরুষ হলে চুল কাটবে অথবা মুন্ডাবে। আর মহিলা হলে তার চুলের সামান্য পরিমাণ ছোট করবে। ওমরাহ পালনের ফজিলত সম্পর্কিত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘একটি ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহর মধ্যবর্তী সময়ে যা কিছু ঘটবে তার জন্য পরের ওমরাহ কাফফারাহ বা প্রায়শ্চিত্ত হয়। আর মাবরুর (মাকবুল) হজের বিনিময় একমাত্র জান্নাত’ (সহিহ বোখারি)। রমজান মাসে ওমরাহ পালনের আরও বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। তাই রমজান মাসে ওমরাহ পালনের প্রতি সাধারণত মুসলমানদের আগ্রহ বেশি হয়। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রমজানে একটি ওমরাহ পালন করা হজ পালনের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ পালনের সমতুল্য’ (সহিহ বোখারি)।

মিকাত হচ্ছে ইহরাম বাঁধার সীমা। ওমরাহ পালনের উদ্দেশে মক্কা গমনকারীদের কাবা ঘর থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব হতে ইহরাম করতে হয়। ওই জায়গাসমূহকে মিকাত বলা হয়। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ থেকে ওমরাহর উদ্দেশে মক্কা গমনকারীদের ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থান থেকে ইহরাম করতে হয়। তবে এর আগে অথবা আপন আপন দেশ বা বাসা বাড়ি থেকেও ইহরাম করা যাবে। যারা মক্কা না গিয়ে প্রথমে মদিনা যাবে তাদের ঢাকা থেকে ইহরাম বাঁধার প্রয়োজন নেই। বরং তাদের জন্য মদিনা থেকে ওমরাহর উদ্দেশে যাত্রাকালে ইহরাম করাই সমীচীন। মদিনা থেকে ওমরাহর জন্য গমনকারীরা ‘জুল হুলাইফা’ অথবা মদিনা থেকে ইহরাম করতে হবে। তবে মক্কায় অবস্থানকালে ওমরাহ করতে হলে হারাম এলাকার বাইরে গিয়ে যেমন, তানইম তথা আয়েশা মসজিদে গিয়ে ইহরাম করতে হয়।

ওমরাহ পালনের জন্য ইহরাম বাঁধার নিয়ম হলো, মিকাত থেকে তালবিয়া পড়ার মাধ্যমে ওমরাহর নিয়ত করা। পুরুষরা ইহরামের সময় সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করবে এবং মাথা ও পা অনাবৃত রাখবে। মহিলারা স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবে। তবে তাদের মুখমন্ডল অনাবৃত রাখবে। ইহরামের সুন্নতসমূহের অন্যতম হলো, ইহরামের আগে শরিয়ত সম্মতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা, গোসল বা অজু করা, শরীরে সুগন্ধি ব্যবহার করা। আর সাদা কাপড় পরিধান করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে দোয়া ও ইস্তেগফার করা। ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার, স্বামী-স্ত্রী মিলন করা এবং কোনো প্রাণী শিকার করা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া কাউকে কষ্ট দেওয়া এবং ঝগড়া বিবাদ ও পর্দা লঙ্ঘন ইত্যাদি মন্দকাজ পরিহার করা উচিত। উচিত সব ধরনের পাপাচার বর্জন করার জন্য সুদৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দিন।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।