রোজা কবুল হচ্ছে কিনা বুঝবেন যেভাবে
প্রতীকি ছবি
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মাঝে রোজাকে সব থেকে ব্যতিক্রমী এবং একমাত্র লৌকিকতা মুক্ত ইবাদত বলা হয়। কারণ, মুমিন যত ধরনের ইবাদত করে তা অন্যরা দেখতে পায়। মানুষের চোখের আড়ালে সাধারণত কোনো ইবাদত করা যায় না। কিন্তু রোজা এমন একটি ইবাদত, যা চোখে দেখা যায় না। মানুষের পানাহার থেকে এই বিরতি শুধু আল্লাহর জন্য।
ব্যতিক্রমী এই ইবাদতের পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৪০)
ইবাদত কবুলের মালিক আল্লাহ তায়ালা। মানুষ শুধু একনিষ্ঠচিত্তে রবের নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত করে যেতে পারে এবং আশা রাখতে পারে আল্লাহ তার ইবাদতকে দেখছেন এবং কবুল করছেন। রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কবুলের বিষয়ে হজরত ইয়াহইয়া ইবন মুআয রহ. বলেন,
مَن استغفَر بلسانه وقلبُه على المعصية معقود، وعزمُه أن يرجع إلى المعصية ويعُود، فصومُه عليه مردود، وباب القبول في وجهه مسدود
যে ব্যক্তি জবানে ইসতেগফার করে অথচ তার অন্তর গুনাহর সঙ্গে আবদ্ধ। আর তার সংকল্প হল, সে আবার গুনাহর কাছে ফিরে আসবে তাহলে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত এবং কবুলের দরজা তার সামনে রুদ্ধ। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২১৫)
সুতরাং রোজা পালনের মাধ্যমে যদি কারো অন্তরে গুনাহর প্রতি ঘৃণাবোধ ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে, তাহলে আশা করা যায়, ওই রোজা কবুল হওয়ার উপযোগী।
রোজা সংক্রান্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এটাই বুঝিয়েছেন। এজন্য তিনি বলেন,
لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الأَكْلِ وَالشُّرْبِ ، إِنَّمَا الصِّيَامُ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ
পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা নয়। আসলে রোজা হল, অসার ও অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত থাকার নাম। (সহিহ ইবনু খুযাইমা ১৯৯৬)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
আল্লাহ তাকওয়াধারীদের পক্ষ থেকেই তো কবুল করেন। (সূরা মায়িদা ২৭)
কোরআনে রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের কথা বলা হয়েছে এবং রোজার মাধ্যমে সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকাই উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাই কোনও ব্যক্তি যদি রোজা রাখার পর মিথ্যা কথা, গিবত, অন্যকে গালাগালি, কাউকে অপমান করা এবং অন্যের প্রতি শত্রুতা পোষণ থেকে বিরত থাকতে পারে, তবে আশা করা যায় তার রোজা কবুল হচ্ছে। আর বান্দা তো আল্লাহর কাছে শুধু প্রত্যাশাই করতে পারে।