বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিলো ছেলে

বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিলো ছেলে

বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিলো ছেলে

এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. রাকিব শনিবার দুপুরেও বাবার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় বাবার মৃত্যুতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া। নিজের বাড়িতে বাবার লাশ। চারদিকে স্বজনদের কান্না-আহাজারি!

শেষ পর্যস্ত বাড়িতে বাবার লাশ রেখেই চোখের পানি মুছতে মুছতে কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে রাকিব। কেন্দ্রে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন কক্ষ পর্যবেক্ষকসহ অন্যরা। রাকিব উপজেলার নেহালগঞ্জ গ্রামের ইব্রাহীম সরদারের ছেলে। সে নেহালগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ রবিবার ছিল বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা। রাকিবের বাবা সদ্য পরলোকগত ইব্রাহীম সরদার (৪৮) বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রব্যবসা করতেন ।

এলাকাবাসী ও রাকিবের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় বান্দরবানের বাসায় আকস্মিক স্ট্রোকজনিত কারণে রাকিবের বাবা ইব্রাহিম সরদার মারা যান। পরিবারের কর্তার হঠাৎ এমন চলে যাওয়া কোনোভাবেই মানতে পারছেন না স্বজনরা। আজ রোববার সকালে বান্দরবান থেকে তার লাশ দশমিনার নেহালগঞ্জ গ্রামের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এমন অবস্থায় রাকিব তার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরীক্ষা দিতে যায়। সেখানে আজ রোববার পরীক্ষা চলাকালে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাকিব বলে, বাবা আর নেই! বাবা আর কখনই আমাকে আদর করে ডাকবে না! এটা আমি মানতে পারছি না! বাবার স্বপ্ন ছিল আমি অনেক বড় হব। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি কিন্তু বাবার এভাবে চলে যাওয়া আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছি না। রাকিব যখন অশ্রুসজল চোখে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকছিল তখন তার বন্ধুদের চোখেও পানি। সেটি ছুঁয়ে গেছে শিক্ষকদেরও। রাকিবের শিক্ষকরা জানান, সে মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনায় ভীষণ মনযোগী।

পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব মো. সালাউদ্দিন সৈকত বলেন, বাবার লাশ বাড়িতে রেখে মনে কষ্ট চেপে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আমি তার প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দাও। রাকিব অনেক বড় হোক তার প্রতি শুভ কামনা।

রাকিবের মামা ইমাম হোসেন জানান, রাকিবকে দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমি সকালে নিয়ে আসি। বাড়িতে রাকিবের বাবার লাশ অপেক্ষা করছে রাকিবের জন্য। আসর নামাজ বাদ নেহালগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।