ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ

ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন : ব্যবস্থা গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের আলোচিত ঘটনার সুরাহা হয়নি তিন মাসেও। উচ্চ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উল্টো রেজিস্ট্রার দপ্তরের ত্রুটিযুক্ত নোটিশের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়কে আদালত কর্তৃক ভৎসনার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও নতুন করে নোটিশ প্রদানের ফলে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে চূড়ান্ত ব্যবস্থার অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মার্চ উচ্চ আদালতে এ ঘটনায় করা রিটের শুনানীতে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ৮ মে পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করে আদালত। এদিন আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাগ্রহণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এদিন আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় আজ রবিবার (১৪ মে) শুনানীর দিন ধার্য হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী আজ ব্যবস্থাগ্রহণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, আদালতের নির্দেশের পরপরই গত ৪ মার্চ অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করলেও চূড়ান্ত ব্যবস্থাগ্রহণে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ গতকাল শনিবার পর্যন্ত দুই মাস আট দিনেও বহিষ্কারের পর কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সাময়িক বহিষ্কারের নোটিশে কেন চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন জবাব না দিয়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে ২৯ মার্চ তাদেরকে এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে অতিরিক্ত সময়ে অভিযুক্তরা জবাব দাখিল করলেও অভিযুক্তদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল শুনানীতে বহিষ্কারাদেশকে ত্রুটিযুক্ত ঘোষণা করে হাইকোর্ট। ফলে ওই নোটিশকে অকার্যকর করে নতুন নোটিশ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এবং সে অনুযায়ী আবারো কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে নোটিশ দিতে বলা হলেও এক মাসেরও অধিক সময় পর গত ৭ মে ফের জবাব দিতে অভিযুক্তদের নতুন নোটিশ পাঠিয়েছে রেজিস্ট্রার দপ্তর। এতে সাতদিন সময় দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ জবাব দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কেউ জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছে রেজিস্ট্রার দপ্তর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার দাবি, প্রশাসনের অবহেলার জন্যই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। রেজিস্ট্রার দপ্তরের ত্রুটিযুক্ত নোটিশের জন্য অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণ হওয়ার সাথে বিশ^বিদ্যালয়ের মানও ক্ষুণœ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে আদালতের পরবর্তী শুনানীর আগেই সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেত বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। কর্তৃপক্ষের এই অবহেলাকে সময় ক্ষেপণ ও অভিযুক্তদের সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দাবি করেন তারা।

এবিষয়ে রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, উচ্চ আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে ৮ মে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবীরা কেউ উপস্থিত হননি। ফলে ১৪ তারিখ শুনানীর দিন ধার্য হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয় ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম শেষ করতে পারে নি, বরং মাত্র শুরু করেছে। এটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেগলিজেন্সি। তারা সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে হাইকোর্টের আদেশকে বাইপাস করতে চাচ্ছে এবং অপরাধীদের সেইভ করতে চাচ্ছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘আদালত থেকে অভিযুক্তদের সাময়িক বহিষ্কার করার নির্দেশসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। আমরা সেগুলো পালন করেছি। আদালত পরবর্তীতে যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী কাজ করবো। দীর্ঘসূত্রতা ও গাফিলতির বিষয়ে তিনি বলেন, গাফিলতির অভিযোগ সঠিক নয়। তবে মাঝে একটি নোটিশ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, আদালতের নির্দেশ পেয়ে নতুন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে বিশ^বিদ্যালয় ছুটি থাকায় সময় লেগেছে।’