ভারতে বাঘ দেখাচ্ছেন নারী সাফারি গাইড

ভারতে বাঘ দেখাচ্ছেন নারী সাফারি গাইড

ভারতে বাঘ দেখাচ্ছেন নারী সাফারি গাইড

ভারতে বাঘের সংখ্যা একসময় মারাত্মক হারে কমে গিয়েছিল৷ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বর্তমানে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ মহারাষ্ট্রের এক জাতীয় পার্কে সেইসঙ্গে নারী সাফারি গাইডরা ইকো-টুরিজম জনপ্রিয় করে তুলছেন৷

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের চন্দ্রপুর জেলায় তাড়োবা জাতীয় পার্ক ‘ল্যান্ড অফ টাইগার্স' হিসেবে পরিচিত৷ ভারতের জাতীয় পশু হলেও সে দেশের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে৷ বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ভারতের জঙ্গলগুলিতে আনুমানিক প্রায় এক লাখ বাঘ বাস করতো৷ এখন মাত্র প্রায় ৩,০০০ বাঘ অবশিষ্ট রয়েছে৷

গোটা বিশ্বেই বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমে চলেছে এবং তাদের বাসভূমি সঙ্কুচিত হয়ে আসছে৷ তাড়োবার বনবিভাগ ইকো-টুরিজমের মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ পরিবেশবিদ হিসেবে অনিরুদ্ধ চাওজির মতে, সেই আইডিয়ার পেছনে সহজ যুক্তি রয়েছে৷ জঙ্গলের আশাপাশের মানুষের উপকার হলে তারা যে কোনো মূল্যে জঙ্গল সংরক্ষণ করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘যে সব এলাকায় ইকো-টুরিজম সফল হয়, সেখানে স্থানীয় মানুষ দাবানল এড়াতে ও গবাদি পশুর অনুঃপ্রবেশ এড়াতে জোরালো উদ্যোগ নেয়৷ তাছাড়া বালু উত্তোলন ও চোরাশিকারের মতো বেআইনি কার্যকলাপও বন্ধ হয়ে যায়৷ এলাকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল স্থানীয় গাইড ও ড্রাইভাররা ইতোমধ্যে বুঝে গেছেন, যে এলাকায় যতদিন বাঘ, ভালুক, চিতা রয়েছে, পর্যটকরা ততদিনই সেই জঙ্গলে বেড়াতে আসবেন৷ তখনই তাদের স্থায়ী আয়ের পথ খোলা থাকবে৷ সে সব প্রাণী উধাও হয়ে গেলে, পর্যটকদের আসা বন্ধ হয়ে যাবে৷ তখন স্থানীয় মানুষের আয়ও কমে যাবে৷''

পর্যটকরা মূলত বাঘ দেখতেই তাড়োবায় আসেন৷ স্থানীয় গাইডরা তাঁদের জঙ্গল সাফারিতে নিয়ে যান৷ বন দফতর এখন স্থানীয় নারীদেরও সাফারি গাইডের প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ তবে পুরুষপ্রধান এই ক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের পথ মোটেই সহজ ছিল না৷ সাফারি গাইড হিসেবে শাহনাজ বেগ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল এই যে এখানকার পুরুষ গাইডরা আমার বন্ধু ছিল৷ নিজের ভাইয়ের মতো৷ প্রতিদিন তাদের সঙ্গে লড়াই করা সহজ ছিল না৷ আমাদের সম্পর্কের উপর এর প্রভাব পড়ছিল৷ আমরা প্রতিদিন তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু তারা আমাদের কাজ করতে দিতে প্রস্তুত ছিল না৷ তারপর আমি তাড়োবার ফরেস্ট অফিসারদের দ্বারস্থ হলাম৷ চাওজি স্যারও সাহায্য করেছিলেন৷''

শাহনাজ বেইগ ২০১০ সালে তাড়োবা টাইগার রিজার্ভের প্রথম নারী সাফারি গাইড হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ কিন্তু তাঁর পরের সাফারিতে যাবার জন্য তাঁকে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল৷ তবে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েন নি৷ লাগাতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সেই পেশায় আরও নারীর প্রবেশের পথ প্রশস্ত করে দেন৷ সাফারি গাইড হিসেবে কাজল নিকোড়ে বলেন, ‘‘যে কোনো কাজে প্রতিদিন নতুন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ নেই৷ কিন্তু এখানে আমরা সেটা পারি৷ নতুন মানুষের সঙ্গে কথা বলা, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা একমাত্র এখানেই সম্ভব৷''

গায়েত্রী ওয়াধাইও সাফারি গাইড হিসেবে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে আমার কোনো কাজ ছিল না৷ আমি শুধু গৃহিনী ছিলাম৷ এখন সাফারি গাইড হিসেবে আমি নিয়মিত উপার্জন করছি৷ ফলে আমরা সহজে সংসার সামলাতে পারছি৷ সবকিছু ভালোই চলছে৷''

গুরুপ্রসাদ নামের এক ফরেস্ট অফিসার তাড়োবায় নারী সাফারি গাইডদের মদত দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন৷ তাঁদের অসাধারণ কাজ দেখে আজ তিনি বেশ গর্ব বোধ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পর্যটকরা নারী সাফারি গাইডদের খুবই প্রশংসা করেন৷ পুরুষদের তুলনায় নারীরা অেক ভালো কথা বলেন, ঠিক সময়ে উপস্থিত হন এবং তাদের আচরণও ভালো৷ ফলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন৷ সেটা আমাদের কাছে ইতিবাচক ইঙ্গিত৷ এভাবে নারীদের ক্ষমতায়ন ঘটে৷ তাদের আত্মবিশ্বাসের সাক্ষী হিসেবে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, যে নারীরা এই পেশায় সত্যি উন্নতি করতে চান, যেটা একটা ইতিবাচক প্রবণতা৷''

২০১৩ সালে তাড়োবায় বাঘের সংখ্যা মাত্র ২০-এ নেমে গিয়েছিল৷ কিন্তু আজ একশোরও বেশি বাঘ মুক্তভাবে সেই এলাকায় চরে বেড়াচ্ছে৷ দেশজুড়ে বাঘ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকারের প্রচার অভিযান এবং ইকো-টুরিজমের মতো স্থানীয় উদ্যোগ সেই সাফল্যের অন্যতম কারণ৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে