খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট আজ

খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে ভোট আজ

প্রতীকী ছবি

শিল্প নগরী খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট আজ। এরই মধ্যে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদেরও।

গাজীপুরের চেয়েও এ দুই সিটির ভোট ভালো হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আগের চেয়েও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। 

ভোট গ্রহণ শুরু হবে সকাল ৮টায়। চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মতোই স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সেই সঙ্গে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে ইসি। 

ভোটের আগের ও পরের দিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্দেশনা অনুযায়ী, শনিবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত সিটি করপোরেশন এলাকায় কোনো মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। এছাড়া রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, জিপ গাড়ি, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তবে অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশী-বিদেশী পর্যটকের ক্ষেত্রে ওই আইন শিথিল করা হয়েছে। এর বাইরে জরুরি সেবাকাজের সঙ্গে যুক্ত যেমন অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগকাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

খুলনা: জানা যায়, খুলনা সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ ও নারী ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন। এ সিটিতে মেয়র পদে পাঁচজন, সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

খুলনা সিটি করপোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডের আওতায় ভোট কেন্দ্র রয়েছে মোট ২৮৯টি। এগুলোর মধ্যে এবারের নির্বাচনে ১৬১টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে খুলনা মহানগর পুলিশ। অর্থাৎ মোট কেন্দ্রের ৫৬ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ ধরে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা জানান, বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় সাধারণের চেয়ে বেশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এবার ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় দায়িত্ব পালন করবেন সাতজন করে পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য। সাধারণ প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য এ সংখ্যা যথাক্রমে ৭ ও ১০। 

রিটার্নিং কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় প্রতিটি ভোটকক্ষে একটি ও কেন্দ্রের সুবিধাজনক স্থানে দুটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৩১০টি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবারের নির্বাচনের সব কর্মকাণ্ড। সেই সঙ্গে নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে খুলনায় মোতায়েন করা হয়েছে ১১ প্লাটুন বিজিবি। শনিবার দুপুর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে শুরু করেছেন বিজিবি সদস্যরা। এছাড়া নির্বাচনে র‌্যাব সদস্য ছাড়াও আরো ৪ হাজার ৮২০ জন পুলিশ ও ৩ হাজার ৪৬৭ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে থাকবেন ৪৪ জন নির্বাহী হাকিম ও ১০ জন বিচারিক হাকিম। 

এ বিষয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, ‘প্রতি প্লাটুনে ২০ জন করে বিজিবি সদস্য রয়েছেন। বিজিবির টহল দলের সঙ্গে থাকবেন ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আগামী চারদিন তারা মাঠে থাকবেন।’ 

মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টির (জাপা) শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আউয়াল, জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র হিসেবে এসএম শফিকুর রহমান। তবে মনোনয়নপত্র জমার পর থেকেই মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন খুলনার ভোটাররা। বিএনপির কেউ অংশ না নেয়ায় নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা হয়ে যায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের। বর্তমানে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও খালেকের সঙ্গে অন্যদের ব্যবধান অনেক বলে মনে করছেন ভোটাররা। তাই মেয়র প্রার্থীদের ছাপিয়ে এখন আলোচনায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে বেশির ভাগ কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই পরস্পরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিএনপির কেউ প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতারাই হয়ে উঠেছেন একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের ২৬টিতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৩ ও ২৪ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। ২৭ নং ওয়ার্ডের এক প্রার্থী গতকাল রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় একক প্রার্থী হিসেবে জয়ী হচ্ছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী। এছাড়া সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ১০টির সবক’টিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেত্রী। 

বরিশাল: জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। মেয়রের পাশাপাশি ৪০ কাউন্সিলর নির্বাচন করতে আজ ভোট দেবেন বরিশাল নগরবাসী। প্রথমবারের মতো এবার বরিশালের সব কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএমে। এরই মধ্যে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দেড় হাজার ইভিএম। 

বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে ইকবাল হোসেন তাপস, জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকে মিজানুর রহমান বাচ্চু, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন, হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান ও হরিণ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন ১৬০ জন। সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ১১৮ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ৪২ জন।

বরিশাল নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। নির্বাচনে ১২৬ প্রিসাইডিং অফিসার, ৮৯৪ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ১ হাজার ৭৮৮ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এরই মধ্যে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো নগরী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  সাড়ে চার হাজার সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি, ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে সব কেন্দ্রেই প্রায় ১ হাজার ২০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা। ভোটের কারণে আজ সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 

পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ২০-২২ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো চার-পাঁচজন বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। 

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির শতভাগ সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে দাবি করে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ায় বরিশালে ভোট উৎসব হবে বলে আশা তার।

এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের কাছে লিখিত এক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনে বিধিবিধান প্রতিপালনে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল, খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা সুতীক্ষ্ণ নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভোটের দিনও আমরা সরাসরি সিসি টিভি ক্যামেরায় এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করব। নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের নির্দেশনা আছে, যা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ পালনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমাদের বার্তা স্পষ্ট ছিল, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি। নির্বাচন প্রচারণায় অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা করলে কোনো ধরনের ছাড় দিইনি। বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধের জন্য চেকপোস্ট করা হয়েছে। খুলনা ও বরিশালের নির্বাচন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আগের চেয়েও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কক্সবাজার পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভারও ভোট হবে আজ।