তারকাদের বন্ধুত্ব

তারকাদের বন্ধুত্ব

ফেসবুক থেকে সংগ্রহ।

ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার বিষয়ে খুবই সতর্ক অভিনেত্রী সাফা কবির। ভাবনায় থাকে সাজসজ্জা, দেখতে কেমন লাগবে, এসব বিষয়। সেই সাফারই কিনা চোখ বন্ধ ছবি! চারপাশে সিয়াম, তৌসিফ, জোভান, টয়া, শাওন, ফারিয়ারা প্রাণ খুলে হাসছেন। এ রকম ছবি দেখে রেগে হওয়াটাই স্বাভাবিক। সাফা রেগেছেনও—তবে আদুরে রাগ। সাফা বললেন, ‘ওই জোভানের বাচ্চা এমন ছবি পোস্ট করেছে। আমি সবচেয়ে বেশি আড্ডাবাজ। আর আমিই নাকি ঘুমাচ্ছি। ওই একটা ছবিতেই আমার চোখ বন্ধ ছিল। সেই ছবিতেই ওকে নাকি খুব সুন্দর লাগছে। ওইটাই সে পোস্ট করেছে। ওরা সব সময় আমার সঙ্গে এমন করে। ওকে পাইলে আমি...।’ শুধু ছবি পোস্ট করেই না, আড্ডায়ও এমন অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে একে অন্যকে খোঁচান তাঁরা। এসবের মূলেই থাকে মজা। গত সোমবার রাতে শবনম ফারিয়ার বাসায় তরুণ প্রজন্মের এই তারকাদের এমন এক আড্ডা জমে উঠেছিল।

‘কিরে সাফা, তোর মুখে তো টোল পড়ছে?’ আড্ডায় এমন কথা শুনে একসঙ্গে সবাই লাফিয়ে ওঠে।

অনেকটা সমস্বরে সবাই প্রশ্নকর্তা জোভানকে বলে, ‘কিরে জোভান এত দিন পরে তোর এই টোল চোখে পড়ল। এই টোল দিয়েই সাফা ক্যারিয়ার দাঁড় করিয়েছে।’ এসব বলে সবাই হাসছে। সাফাকে নিয়ে এই মজা করা নতুন না। সবাইকে চমকে দিয়ে জোভান বললেন, ‘আরে, আরেকটা টোল পড়ছে।’ এবার সবাই অবাক। সাফাও চমকে গেলেন। বলেই ফেলেন, ‘মানে কী।’ জোভান এগিয়ে গেলেন। সবাইকে ডেকে দেখালেন, ‘এই দেখ টোল। এই টোল বয়স বাড়ার। ওর বয়স বাড়তেছে দেখা যায়।’ সাফার মেজাজ খারাপ হলেও সবাই আবার হো হো করে হাসতে থাকে।

আড্ডায় সবশেষে প্রবেশ করেছেন তৌসিফ মাহবুব। শুটিং শেষে আড্ডায় যোগ দিতে বরাবরই তাঁর দেরি হয়ে যায়। সবাই এবার তাঁকে নিয়ে পড়ে। একজন বলেন, ‘আমরা তো ভেবেছিলাম রাস্তায় পুলিশ আটকেছে।’

ট্রাফিক পুলিশের বিষয়টা ব্যাখ্যা করলেন তৌসিফ, ‘ট্রাফিককে একবার লাইসেন্স দেখিয়ে বলেছিলাম, ভাই এই যে আমার লাইসেন্স। সেটা কেউ ভিডিও করেছিল। সেটা ভাইরাল হয়েছিল। সেটাই তারা এখনো মনে রেখেছে।

 

বারবার এই কথা বলে পচানোর চেষ্টা করে। আমাদের আড্ডাটাই একটা সময় এমন হয়ে যায়, তখন কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। জোভান ও সাফা কে কবে বিয়ে করবে, আমাদের কাজ কেমন চলছে, টয়া কেন শাওনকে বিয়ে করল, বন্ধুদের আড্ডায় যা হয় আর কী। দারুণ এই সময়টা কখন যে শেষ হয়ে যায়, বোঝা যায় না।’

এই আড্ডায় সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় থাকেন বরিশালের চার সন্তান—তৌসিফ, জোভান, সাফা ও সিয়াম। শুরুটা হয় বরিশালের ভাষায়। বরিশালের ভাষায় পটু সিয়াম। সবার মুখেই তখন বরিশালের ভাষা শোনা যায়। কারণ, নাটকের প্রয়োজনে অন্যরাও টুকটাক বরিশালের ভাষা শিখেছেন।

জোভান বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। সবার উত্থান, ওঠানামা কাছ থেকে দেখা। আড্ডায় পুরোনো সেই দিনে ফিরে যাই। আমরা একসঙ্গে কেউ কেউ শুটিং করলেও তখন কিন্তু সেভাবে কথার বলার সুযোগ থাকে না।’

বন্ধুরা আপনাকে কে কী বলেছেন, এমন প্রশ্নে হেসে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি তো এখনো বিয়ে করিনি। সবাই পেয়ে বসেছিল। বিয়ে করতে পরামর্শ দিল। এখানেও দুই ভাগ। কেউ বলল, জোভান দ্রুত বিয়ে কর। আবার কেউ বলল, ধুর এখনই বিয়ে করিস না। আমাকে কনফিউজড করে দিয়েছে।’

প্রায় ১০ বছর আগের কথা। সেবার ভালোবাসা দিবসে আদনান আল রাজীবের ‘@১৮: অলটাইম দৌড়ের ওপর’ নাটকটি তৌসিফ ও সাফাকে এক করে। ওটা ছিল তাঁদের প্রথম নাটক।

ওই নাটকের একটি মজার ঘটনা শোনালেন সাফা, ‘প্রথম শুটিংয়ের সময় তৌসিফকে মনে হয়েছিল খুব মুডি। তাকে বিদেশ থেকে আনা আব্বুর চকলেট দিতে গেলাম, সে বলল, “চকলেট খাই না।” অদ্ভুত লেগেছিল। চকলেট আবার কেউ খায় না! রাগ হয়েছিল। অথচ দেখুন আমার ক্যারিয়ারে বলতে গেলে ওর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কাজ করা হয়েছে।’ শবনম ফারিয়াও তখন সবে অভিনয় শুরু করেছেন। সেবারই এই তিনজনের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। পরে রেদওয়ান রনির প্রোডাকশন হাউসের ধারাবাহিক নাটক ‘ইউনিভার্সিটি’, ‘ঝালমুড়ি’, ‘ভালোবাসা ১০১’–সহ আরও কিছু কাজ সিয়াম, জোভান, টয়াসহ সবার বন্ধুত্বকে আরও গাঢ় করে। আর এখন তো একে অন্যকে তুই বলে সম্বোধন করেন।

তারকাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয় না, কেউ ক্যারিয়ারে এগিয়ে গেলে স্বার্থপর হয়ে যায়—এসব যেন মিথ্যা প্রমাণ করেছেন তাঁরা। সবাই সবার খবর নেন। কেউ একটু পিছিয়ে গেলে তাঁকে টেনে তোলেন। তাঁদের কথা, ‘সবাই মিলে বড় হব।’ এই বন্ধন সম্পর্কে সিয়াম বলেন, ‘সবাইকে আগে থেকেই চিনি। এমন না যে তারকা হওয়ার পর থেকে চিনি। তখন আমরা কিছুই ছিলাম না। আমার সবার সংগ্রাম সবার দেখা। একেক সময় একেকজন সাফল্য পেয়েছে, সবাই মিলে সেটা সেলিব্রেট করেছি। যে কারণে আমাদের বন্ধুত্ব টিকে গেছে। এখন আমরা পরিবারের মতো। সবাই সবার পাশে থাকি। এই বন্ধুত্বের শেষ নেই।’