সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ৩৫ হাজার কোটি টাকা

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ৩৫ হাজার কোটি টাকা

ফাইল ছবি

দেশে বড় বড় মেগা প্রকল্প হয়েছে। এই মেগা প্রকল্পসহ এত উন্নয়ন করার পরও স্বস্তি পওয়া যাচ্ছিল না শুধু দুর্ঘটনার কারণে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হয়। আমাদের ভাবনার চেয়ে বাস্তবায়ন খুবই ধীরগতি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পেছনে আমাদের দেশের কিছু বাঘা বাঘা ব্যক্তিও জড়িত ছিল।

আর বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ এবং তরুণরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা এবং আঘাত ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ট্র্যাজেডি। এগুলো একটি দেশের প্রবৃদ্ধি এবং মানব উন্নয়নকে দুর্বল করে।

বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ রোড সেফটি প্রজেক্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে রোড সেফটি নিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ট্রান্সপোর্ট প্র্যাকটিস ম্যানেজার ফেই ডেং, বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, বিশ্বব্যাংকের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভাইস প্রেসিডেন্ট গুয়ানজে চেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন, পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি অপরাধ ও অপারেশন আতিকুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের রোড সেফটি প্রজেক্টের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট দীপন বোস।

বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারে যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক আজ একটি প্রকল্প চালু করেছে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে এবং নির্বাচিত শহর, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়ক আর জেলা সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও আহত কমাতে। রোড সেফটি প্রজেক্ট, যা বিশ্বব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা অর্থায়ন পায়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ডেডিকেটেড সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প। যা বিশ্বব্যাংক দ্বারা সমর্থিত। দু’টি জাতীয় মহাসড়ক এন-৪ (গাজীপুর-এলেঙ্গা) এবং এস-৬ (নাটোর থেকে নবাবগঞ্জ)-এ প্রকল্পটি উন্নত প্রকৌশল নকশা, স্বাক্ষর ও চিহ্নিতকরণ, পথচারীদের সুবিধা, গতি প্রয়োগ এবং জরুরি যত্নসহ ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাইলট করবে। এই পদক্ষেপগুলো দু’টি মহাসড়কে ৩০ শতাংশের বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে সহায়তা করবে।
এছাড়া মহাসড়ক ও শহুরে সড়কগুলোকে নিরাপদ করতে পাঁচটি বিভাগে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ এই প্রকল্পে সড়কের চিহ্ন, ডিভাইডার, ফুটপাথ, জেব্রা ক্রসিং, স্পিড ব্রেকার এবং বাস বে বসানো হবে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, প্রকল্পটি দ্রুতগতি পরিচালনা করতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারীদের আচরণ রোধ করতে ট্রাফিক পুলিশ এবং হাইওয়ে টহলের ক্ষমতা আধুনিকীকরণে সহায়তা করবে। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য, প্রকল্পটি রাস্তায় সিসিটিভি স্থাপন করবে এবং বৈদ্যুতিক বার্তা ব্যবস্থা তৈরি করবে। এটি টহল যানবাহন এবং ক্র্যাশ সাইট পরিষ্কারের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করবে। সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তা কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতেও এটি সরকারকে সহায়তা করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য সেবা অধিদফতর একযোগে কাজ করবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা হয়, তা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যতই উন্নয়ন করি, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, এক দিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন করি, তারপরও যখন দুর্ঘটনার খবর দেখি, তখন মনটা বিষণ্ন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত কষ্টের। আমরা মন্ত্রী হলেও তো মানুষ। এ দুর্ঘটনা আমাদের মনে কষ্ট দেয়। এত মেগা প্রজেক্ট, এত উন্নয়ন করার পরও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না দুর্ঘটনার কারণে। কেন হবে? আমরা কি এটা এড়াতে পারি না?

দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা হয়, তা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এতে কষ্ট বাড়ে, সময়ও বাড়ে। বাংলাদেশ রোড সেফটি প্রজেক্টের অংশীদার হওয়ায় বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বব্যাংক যে সম্মান দেখিয়েছে এবং বাজেটে যে সহযোগিতা করেছে, তার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, অর্থ দিয়ে বিশ্বব্যাংক ইচ্ছা করলে পদ্মা সেতুতে জড়িত থাকতে পারতো। কিছু দুর্নীতির অভিযোগ এনে তারা সরে গিয়েছিল। এখানে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে এ জন্য শুধু বিশ্বব্যাংককে দায়ী করা যাবে না।

বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বরেন, রাস্তা নিরাপত্তা আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের জন্য, সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করা একটি প্রধান উন্নয়ন অগ্রাধিকার। তিনি বলেন, এই প্রকল্প এবং অন্যান্য চলমান উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে তার জনগণের জন্য রাস্তা নিরাপদ করতে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা সুবিধা এবং ট্রমা কেয়ারে দ্রুত অ্যাক্সেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।