গ্রিসে নৌকাডুবির ঘটনায় ৩ দিনের শোক ঘোষণা

গ্রিসে নৌকাডুবির ঘটনায় ৩ দিনের শোক ঘোষণা

সংগৃহীত

গ্রিসের দক্ষিণ উপকূলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহন করা একটি মাছ ধরার নৌকা ডুবে কমপক্ষে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক মানুষকে। দেশটির সরকার বলছে, গ্রিসে সবচেয়ে বড় অভিবাসী ট্রাজেডিগুলোর একটি এটি। এ ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে গ্রিস। তবে গ্রিক কর্মকর্তা এবং বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন নৌকায় আরো কয়েক শ’ মানুষ ছিল।

'ইতালিতে যেতে চাই, আর কিছুই চাই না'
গ্রিসের কোস্টগার্ড বলেছে, মঙ্গলবার দিন শেষে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকাটি দেখা যায় ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের একটি বিমান থেকে।

নৌকাটিতে থাকা যাত্রীদের কেউই লাইফ জ্যাকেট পরা ছিল না এবং কোস্টগার্ড বলছে যে তারা কোনো সাহায্য নিতেও অস্বীকৃতি জানায়।

দেশটির নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে গ্রিসের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইআরটি জানিয়েছে, স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ নৌকাটির সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং সাহায্যের প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু বার বার তারা জবাব দেয়, ‘আমরা ইতালিতে যেতে চাই, এছাড়া আর কিছুই চাই না।’

এর কয়েক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে নৌকা থেকে একজন গ্রিক কোস্টগার্ডকে বার্তা পাঠাতে থাকে যে নৌকাটির ইঞ্জিন কাজ করছে না।

এর কিছুক্ষণ পরই নৌকাটি ডুবে যায় এবং মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে নৌকাটি পুরোপুরি ডুবে যায়।

প্রায় সাথে সাথেই অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছিল। তবে প্রবল বাতাসের কারণে উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সমুদ্রে সমস্যায় পড়া অভিবাসীদের জন্য জন্য জরুরি হেল্পলাইন অ্যালার্ম ফোন বলছে যে ‘সাহায্য পাঠানোর আগে নৌকাটি যে সমস্যায় পড়েছে, এ বিষয়ে সচেতন ছিল কোস্টগার্ড’।

এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছিল নৌকাটি ঝামেলায় পড়েছে।

তারা আরো বলছে যে এরকম সমস্যায় পড়লে মানুষ হয়ত গ্রিক কর্তৃপক্ষকে জানাতে ভয় পায় কারণ দেশটি ‘নিয়মতান্ত্রিক ও ভয়াবহ পন্থায় পুশব্যাক’ করে।

নৌকাটি লিবিয়া থেকে ইতালি যাচ্ছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। যাত্রীদের বেশিরভাগেরই বয়স ছিল ২০ এর কোঠায়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নৌকাটি বেশ কিছুদিন ধরেই সাগর পথে ভ্রমণ করছিল এবং মঙ্গলবার বিকেলেই সেটিকে দেখা গেছে একটি মল্টিজ কার্গো জাহাজের কাছে, যে জাহাজটি খাবার ও পানি সরবরাহ করে।

নৌকাটিতে পাঁচ শ’ থেকে সাত শ’ মতো মানুষ ছিল বলে ধারণা দিচ্ছেন বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা।

আরো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।

গ্রিসের কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন নিকোলাস অ্যালেক্সিউ স্থানীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, তার সহকর্মীরা নৌকার ডেকে একদল লোক দেখেছেন। ভূমধ্যসাগরের গভীরতম অংশের একটিতে নৌকাটি ডুবে গেছে।

নৌকাটিতে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিচয় এখনো জানা জানা যায়নি। জীবিত উদ্ধার হওয়াদের গ্রিসের কালামাতা শহরের একটি হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ইয়োরগোস মিশাইলিদিস বিবিসির ওয়াল্ড টুনাইট প্রোগ্রামে বলেছেন, গ্রিস বরাবরই ইইউকে বলে আসছে একটি ‘কঠোর অভিবাসন নীতি’ প্রণয়ন করতে হবে।

যাদের সত্যিকার অর্থে অভিবাসন প্রয়োজন তাদের গ্রহণ করতে হবে, শুধুমাত্র অর্থ আছে এমন লোকদের নয়, যারা পাচারকারীদের অর্থ দিয়ে অভিবাসী হতে চায়।

‘এখন এমন অবস্থা যে পাচারকারীরাই সিদ্ধান্ত নেয় কারা ইউরোপে আসবে’ বলেন মিশাইলিদিস।

‘যাদের সত্যি প্রয়োজন তাদের জন্য আশ্রয়, সহায়তা এবং নিরাত্তা প্রদান করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজ। এটা শুধু ইতালি, গ্রিস বা সাইপ্রাসের সমস্যা নয়। এটা নিয়ে ইইউকে ভাবতে হবে। একটা শক্ত অভিবাসন নীতি তাদের অবশ্যই প্রণয়ন করতে হবে।’

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ গ্রিস।

জাতিসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইউরোপের প্রথম সারির দেশগুলোতে প্রবেশ করেছে, যাদের বেশিরভাগই ইতালিতে প্রবেশ করেছে।

সূত্র : বিবিসি