মোদির বিরুদ্ধে একজোট হতে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক

মোদির বিরুদ্ধে একজোট হতে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক

ফাইল ছবি

আর ১০-১১ মাস পরেই লোকসভা নির্বাচন ভারতে। তার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দল বিজেপি ও এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে পাল্টা জোট করার চেষ্টা জোরদার করলো বিজেপিবিরোধী দলগুলো।

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আমন্ত্রণে ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পর্যায়ের ১৬টি বিরোধী দলের সর্বোচ্চ নেতারা শুক্রবার রাজধানী পাটনায় বৈঠকে বসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ১ অ্যানে মার্গের বাড়িতে দীর্ঘসময় আলোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা।

ভারতের প্রায় সব সংবাদমাধ্যম বিরোধী দলগুলোর এই বৈঠকের সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। তার অন্যতম কারণ, ১৬টি বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা সেখানে যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে, রাহুল গান্ধী ও কে সি বেনুগোপাল বৈঠকে ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন ছয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জেডি(ইউ) নেতা নীতীশ কুমার, তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্তালিন, তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) শীর্ষ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ও এএপির জেষ্ঠ্য নেতা ভগবন্ত সিং মান এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন ছিলেন।

এছাড়াও ছিলেন ছয় সাবেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রীও। এরা হলেন, এনসিপি-র শরদ পাওয়ার, মহারাষ্ট্রেরই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে, আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব, সমাজবাদী পার্টির নেতা ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, জম্মু ও কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কাশ্মির ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা এবং পিডিপির মেহবুবা মুফতি।

এছাড়াও ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, সিপিআই এমএলের প্রধান দীপঙ্কর ভট্টাচার্যেরা।

ফলে বৈঠকে যোগদানের প্রশ্নে নীতীশের প্রচেষ্টা সফল। সব বড় বিরোধী দলের প্রধান নেতাই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। নীতীশের দল জেডি(ইউ) টুইট করে বলেছে, এটা দল নয়, ভারতীয় দিল বা হৃদয়ের মহাজোট। তারা স্লোগান দিয়েছে, ২০২৪ সালে বিজেপি-মুক্ত ভারত।

তবে বিজেপিমুক্ত ভারত বা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানোর কাজটা যে সহজ নয়, সেটা বিরোধী নেতারা খুব ভালো করেই জানেন। কারণ, বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের স্বার্থের সংঘাত, আঞ্চলিক দলগুলি চাইছে, যেখানে তারা প্রধান দল, সেখানে যেন কংগ্রেস ভোটে না লড়ে। লড়লেও যেন সামান্য কয়েকটা আসনে লড়ে। এই শর্তে কংগ্রেস একেবারেই রাজি নয়। আবার কংগ্রেসের যেখানে জোর, সেখানে অন্য বিরোধী দলগুলি প্রার্থী দেবে। যেমন এএপি গুজরাট ও কর্ণাটকে দিয়েছিল। রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে দেবে। তৃণমূল এর আগে গোয়ায় প্রার্থী দিয়েছিল।

তাই নীতীশ এবং মমতা যে একজন বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে একজন বিরোধী প্রার্থী দেয়ার কথা বলছেন, তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

বৈঠকে নীতীশ কুমার বলেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। রাহুল গান্ধী বলেছেন, যে কোনো বিরোধ মুখোমুখি বসে সমাধান করা হবে।

এই পরিস্থিতিতে রাহুল বলেছেন, বিরোধী দলগুলি ২০২৪ সালের ভোটে বিজেপিকে হারাবার জন্য একজোট হয়েছে। লড়াইটা হলো ভারত জোড়ো মতাদর্শের সঙ্গে ভারত ভাঙো মতাদর্শের।

রাহুলের দাবি, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জিতবে।

আর স্তালিনের বক্তব্য, বিরোধী বৈঠক থেকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে একটা রণহুঙ্কার দেয়া হয়েছে।

বিরোধীদের এই বৈঠকে ঐক্যের ছবিটাই যে শুধু দেখা গিয়েছে তা নয়, অনৈক্যও সামনে এসেছে। বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তার দল বলতে শুরু করে, দিল্লির প্রশাসনিক কর্মকতাদের নিয়োগের এক্তিয়ার দিল্লির রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কেড়ে নিতে কেন্দ্রে আসীন বিজেপি যে অধ্যাদেশ এনেছে, বৈঠকে উপস্থিত সব বিরোধী দলকে তার বিরুদ্ধে দঁড়াতে হবে। কংগ্রেস এখনো তা এই বিল নিয়ে কিছু বলেনি।

পরে দলের মুখপাত্র প্রিয়ংকা কক্কর বলেছেন, বিজেোপি ও কংগ্রেসের মধ্যে এই বিল নিয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। কংগ্রেস এক্ষেত্রে বিজেপিকেই সমর্থন করবে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, সাধারণত কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংসদ শুরু হওয়ার আগে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখানে সব বিরোধী দল একজোট হয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বিরোধিতাকে সরিয়ে রেখে মতৈক্যের বিষয়গুলিকেই সামনে রাখা হচ্ছে।

বিজেপি বলেছে, বিরোধীদের এই বৈঠক শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করার জন্য। তাদের এই চেষ্টা সফল হবে না। অতীতেও হয়নি। এবারও হবে না। এই ধরনের জোট সাধারণ মানুষ মেনে নেয় না।