সেমিফাইনালেই স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

সেমিফাইনালেই স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

সংগৃহীত

থেমে গেলো বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা, টাইগাররা টপকাতে পারলো না সেমিফাইনাল বাধা। দেড় যুগ পরও ঘুচালো না অপেক্ষা, আর হলো না স্বপ্নের ফাইনালে পা রাখা। শেষ মুহূর্তের গোলে হয়েছে স্বপ্নভঙ্গ, বার বার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও যেই স্বপ্ন আর জোড়া দেয়া গেলো না। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিলো বাংলাদেশ।

অবশ্য বাংলাদেশ লড়াই করেছে সমতালে। যদিও হেরেছে, তবে মাথা উঁচু করেই লড়ে গেছে ১২০ মিনিট জুড়ে। শক্তিমত্তার এতো বিস্তর পার্থক্য থাকার পরও দমে যায়নি বাংলাদেশ, অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ পর্যন্ত থামিয়ে রাখে কুয়েতকে। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি, আব্দুল্লাহ আম্মারের একমাত্র গোল ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।

তবে গল্পটা ভিন্ন হতে হতে পারতো। ভারতের বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়াম থেকে আজ শনিবার হয়তো জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু ম্যাচের ২ মিনিটেই পাওয়া একটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করায় তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়েছে। এই সুযোগ মিসের আক্ষেপটা নিশ্চিতভাবেই মোরসালিনকে দীর্ঘদিন পোড়াবে।

ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিব হোসেনের নিখুঁত আড়াআড়ি পাসে ফাঁকা দিয়ে চলে আসে শেখ মোরসালিনের পায়ে। তবে এমন সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে তিনি নষ্ট করে বসেন তিনি, মেরে দেন গোলরক্ষকের গায়ে! এরপর ফিরতি বলেও সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, তবে এবারো তালগোল পাকিয়ে ফেলেন এই ফুটবলার।

এরপর অবশ্য বাংলাদেশ প্রথমার্ধের আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি জামাল ভূঁইয়ারা। বিপরীতে বেশ কয়েকটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে কুয়েত। সপ্তম মিনিটে প্রথমবার তারা হানা দেয় বাংলাদেশের রক্ষণে। জটলার ভেতর থেকে আসা সালমান মোহাম্মদের হেড গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করে দলের ত্রাতা ইসা ফয়সাল।

২৯তম মিনিটে আরো একটা বড় সুযোগ আসে কুয়েতের। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকু প্রথমে এক হাতে ফিস্ট করার পর দ্রুত হেডে তা ক্লিয়ার করেন ইসা। এরপর আবার ৪০তম মিনিটে আল রশিদির শট ঝাঁপিয়ে কর্নার করে রক্ষা করেন জিকো।

৫৪তম মিনিটে আরো একটা সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া রাকিবের বাঁ পায়ের বুলেট শট অল্পের জন্য উড়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। মিনিট দুয়েক পর আরো দুটো সুযোগ তৈরি করেন রাকিব, মোরসালিনের দেয়া পাস থেকে শট নেন তিনি। তবে তা প্রতিহত করে ক্রসবার। আবারো হতাশ হয় বাংলাদেশ।

তবে নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন জিকো। ৬৪ মিনিটের দিকে টানা দুটো সেভ দেন বাংলাদেশের এই গোলরক্ষক। দলকে রক্ষা করার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করে যান তিনি।

এদিকে, ৬৭তম মিনিটে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তবে তাতে ভেঙে পড়েনি বাংলাদেশ।

৮৭তম মিনিটে আরো একটা দারুণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সুযোগ তৈরি করেন রাকিব। ফাহিমের নিচু ক্রসে ডাইভিং হেডের চেষ্টা করলেও নাগাল পাননি বলের। বল-মাথার সংযোগ হলে হয়তো আনন্দের উপলক্ষ পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু তা আর না হওয়ায় ০-০ স্কোরকার্ড নিয়েই নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

বেঙ্গালুরুর রোদে দেড় ঘণ্টা দৌড়ে ততক্ষণে বেশ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে হাল ছেড়ে দেয়নি। অতিরিক্ত সময়েও খেলতে থাকে জমাট রক্ষণ নিয়ে। বিপরীতে গোলের নেশায় বুঁদ হয়ে ওঠে কাতারের ফুটবলাররা। চালাতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। প্রতিবার বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো।

কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোলের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারেননি জিকো। গোল করেন অতিরিক্ত সময়ের ১০৭তম মিনিটে টাইগারদের হৃদয় ভাঙেন আব্দুল্লাহ। টাইগার ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে পায়ের ফাঁলা দিয়ে বল জড়ান জালে।

এরপর অবশ্য শেষ ১০ মিনিটে বেশ ক্ষ্যাপাটে হয়ে উঠে বাংলাদেশ। করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। সুযোগ তৈরি হয় বেশ কয়েকটি, তবে সুফল আসেনি। শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙের বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় টাইগারদের।