কিশোরগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি, সাংবাদিকসহ আহত শতাধিক

কিশোরগঞ্জে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি, সাংবাদিকসহ আহত শতাধিক

ছবিঃ সংগৃহীত।

কিশোরগঞ্জে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে এবং বিএনপির নেতাকর্মীরা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা শহরের রথখোলা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে দলটির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে অন্তত ৩০ জন।

গুলিবিদ্ধ যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ফইজুল করিম মুবিন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুস্তাক আহমেদ শাহিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী মোস্তফা তাজবির, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুজ্জামান পার্নেল, পল্লী ও সমবায়-বিষয়ক সম্পাদক শাহরিয়ার মুসা তানহা, নিকলী উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব সৈয়দ শাহ আলম, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাফিউল ইসলাম নওশাদ, পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাজহারুল হক উজ্জ্বল।

ঘটনার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দৈনিক মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি খাইরুল আলম ফয়সাল আহত হয়েছেন।

ঘটনার পর পুলিশ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে বলেও জানা গেছে।

তবে এ ঘটনায় পুলিশের কেউ আহত হয়েছে কি-না মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত তা জানায়নি পুলিশ।

বিএনপির সূত্রে আরো জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল মঙ্গলবার। দুপুর ১২টায় শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা কর্মসূচি শুরু করে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রথখোলা এলাকায় আসা মাত্র সংঘর্ষ শুরু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রথখোলা এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির পদযাত্রাটি পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের সড়ক ধরে আখড়া বাজার হয়ে রথখোলা এলাকার নূর মসজিদের সামনে গেলে সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা পদযাত্রাটি থামিয়ে দেয়। বাধা উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা কিছুটা পিছু হটে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। জবাবে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়তে থাকে পুলিশ সদস্যরা। এসময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে।

ঘটনার সময় পুলিশ অন্তত কয়েক শ’ রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। তবে ঠিক কত রাউন্ড গুলি ও টিয়ারশেল ব্যবহার করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি পুলিশ কর্মকর্তারা।

জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শরীফুল আলম বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি ছিল গুরুদয়াল কলেজ থেকে পদযাত্রা শুরু করে শহরের সবগুলো সড়ক প্রদক্ষিণ করা। আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। সড়কে বেরিকেট দিয়ে রেখেছে। নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছে। এতে আমাদের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ অনেকের অবস্থা খুবই গুরুতর। কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। মামলা-হামলা ও পুলিশ দিয়ে গুলি করে এ সরকার টিকে থাকতে চাইছে। আমাদের এক দফা কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।’

হামলার বিষয়ে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মোস্তাক সরকার নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জে বিএনপির পদযাত্রা ছিল গুরুদয়াল কলেজ থেকে রথখোলা মাঠ পর্যন্ত। তারা সেভাবেই পদযাত্রা করে রথখোলা মাঠের কাছে আসে। আমরা বলেছি, যেহেতু আপনাদের পদযাত্রা শেষ হয়েছে আপনার ইচ্ছে করলে মাঠের ভেতরে গিয়ে অবস্থান করতে পারেন। এই সড়কটি জনবহুল, রাস্তায় অবস্থান নিলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। তখন তাদের অতি উৎসাহী ও উচ্ছৃঙ্খল কয়েকজন কর্মী-সমর্থক বিনা উস্কানিতে পুলিশকে বাধা দেয়। আমাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করার চেষ্টা করে। আমরা তখন তাদেরকে নিভৃত করার চেষ্টা করি। তখন তারা আমাদের ওপর নির্বিচারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে ফাঁকাগুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করি।’