মহররম মাস: তাৎপর্য, করণীয় ও বর্জনীয়

মহররম মাস: তাৎপর্য, করণীয় ও বর্জনীয়

ফাইল ছবি

আরবি বর্ষের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের অন্যতম একটি ফজিলতপূর্ণ দিবস হলো আশুরা। মুসলিমসমাজে মহররম এবং এ আশুরাকেন্দ্রিক নানা ভ্রান্তি ও রসম রেওয়াজ প্রচলন আছে, যা পরিহারযোগ্য। নিম্নে এই মাসের করণীয় ও বর্জনীয় তুলে ধরা হলো—

নফল রোজা রাখা : নফল রোজা রাখা এ মাসের অন্যতম আমল।

নবীজি (সা.) এই মাসের নফল রোজাকে সর্বোত্তম ঘোষণা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন,  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৪৫)
আশুরার রোজা রাখা : এ মাসের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন হচ্ছে দশম দিন তথা আশুরা। আশুরার রোজা রাখা মুস্তাহাব আমল।

আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আশুরার এক দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে এই আশা করি যে তিনি এ রোজার উসিলায় বান্দার আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)
৯ বা ১১ মহররমের রোজা রাখা : মুসলমানদের জন্য আশুরার রোজা দুটি। মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ কিংবা ১০ ও ১১ তারিখ। তবে কোনো কোনো আলেম এ বিষয়ে বর্ণিত সব হাদিসের ওপর আমলের সুবিধার্থে ৯, ১০ ও ১১ এ তিন দিন রোজা রাখার কথা বলেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিন (মহররমের দশম দিবস) রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো। আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৫৪)

মাতম-মর্সিয়া পরিহার করা : হুসাইন (রা.) শাহাদাতকে কেন্দ্র করে আশুরা নিয়ে বেশ বাড়াবাড়ি রয়েছে। আছে অনেক কুসংস্কার। অন্যতম একটি হলো মাতম মর্সিয়া গাওয়া।

মর্সিয়া মানে নবী দৌহিত্রের শোক প্রকাশে নিজের শরীরে আঘাত করা এবং জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা। ইসলামে এটা নিষিদ্ধ। নবী করিম (সা.) এ ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি (শোকে-দুঃখে) চেহারায় চপেটাঘাত করে, জামার বুক ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো হায়-হুতাশ করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’  (বুখারি, হাদিস : ১২৯৭)

ভিত্তিহীন ঘটনা বলা থেকে বিরত থাকা : আশুরার দিনের গুরুত্ব বোঝাতে অনেকে মিথ্যা ও  জাল হাদিসের আশ্রয় নিয়ে থাকে। যেমন: এদিন ইউসুফ (আ.)-এর জেল থেকে মুক্তি। ইয়াকুব (আ.) এর চোখের জ্যোতি ফিরে পাওয়া। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ। ইদরিস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। আবার এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে এমন ধারণা করা। এসব ঘটনা ও ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। (আল আসারুল মারফুআ, পৃষ্ঠা, ৬৪-১০০)

(মা ছাবাহা বিসসুন্নাহ ফি আয়্যামিস সানাহ, পৃষ্ঠা, ২৫৩-২৫৭)

প্রথা-রসম-রেওয়াজ থেকে বিরত থাকা : রোজা ও তাওবা-ইস্তেগফারের গুরুত্ব ছাড়া বিশেষ কোনো আমল নেই মহররম মাসে। অথচ আশুরাকেন্দ্রিক মনগড়া আমল ও রসম বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত আছে। ধর্মীয় কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের প্রথা, প্রচলন ও কুসংস্কার বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কিছু কুসংস্কার শিরকের পর্যায়েও চলে যায়। আল্লাহ এগুলো থেকে সবাইকে হেফাজত করুন।

আশুরাকে ‘কারবালা দিবস’ মনে না করা : আশুরা মানেই শুধু কারবালা নয়। আশুরার মর্যাদা ও ঐতিহ্য ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই স্বীকৃত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হিজরত করে মদিনায় এলেন এবং তিনি মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখলেন। তাদের এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এটা সেই দিন, যে দিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে মুক্তি দিয়েছেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তাঁর সম্মানার্থে আমরা রোজা রাখি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘আমরা তোমাদের চেয়েও মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৮) 

তাই ফজিলতপূর্ণ ঐতিহ্যের এই আশুরাকে কেবল কারবালা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা অনুচিত। আল্লাহ তাআলা সব ধরনের বিভ্রান্তি ও বিদআত থেকে আমাদের হেফাজত করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।