সুন্নত নামাজগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম

সুন্নত নামাজগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম

ছবিঃ সংগৃহীত।

সুন্নত নামাজগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অন্যতম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানরা আবশ্যক হিসেবে এ নামাজ আদায় করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল। সাহাবায়ে কেরামও এ নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতেন। এ নামাজে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রবৃদ্ধি ও প্রশান্তি লাভ হয়। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে এ নামাজ আদায় করা হয় বিধায় একে তাহাজ্জুদ বলে অভিহিত করা হয়। তাহাজ্জুদ নফল পর্যায়ের সুন্নত। যা আমল করতে না পারলে কোনো গোনাহ নেই।
এ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ করা হয়েছে। উম্মতকে যেহেতু রাসুলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেহেতু তাহাজ্জুদের এ তাগিদ পরোক্ষভাবে সমগ্র উম্মতের জন্য করা হয়েছে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে—‘আর রাতের কিছু অংশে আপনি তাহাজ্জুদ আদায় করতে থাকুন। এটা আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পাওনা। আশা করা যায় আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৭৯)
রমজানের চাহিদা তাকওয়া সৃষ্টির মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়া। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তাকওয়ার পথ সবচেয়ে বেশি সুপ্রসন্ন হয়। এজন্য যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদের আমল করে, কোরআনে তাদের মুহসিন ও মুত্তাকি নামে অভিহিত করে তাদের আল্লাহর রহমত ও পরকালে চিরন্তন সুখ-সম্পদের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা রাতের অল্প অংশেই ঘুমাত এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করত।’
মহানবী (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজকে সবচেয়ে উত্কৃষ্ট নামাজ বলে ঘোষণা করেছেন, যা মুসলিম শরিফের সুস্পষ্ট বর্ণনায় রয়েছে। তিনি মদিনায় আগমনের পর তাঁর প্রথম ভাষণেই সফলতার চাবিকাঠি হিসেবে রাত জাগরণের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে লোকসব! ইসলামের প্রচার ও প্রসার কর, মানুষকে আহার দান কর, আত্মীয়তা অটুট রাখ, আর যখন মানুষ রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন তোমরা নামাজ আদায় করতে থাকবে। তবেই তোমরা সফল হবে, নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাহাজ্জুদ সালাতের ব্যবস্থা কর, এটা নেক লোকের স্বভাব, এটা তোমাদের আল্লাহর নৈকট্য দান করবে, গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে, আর শরীর থেকে রোগ দূর করবে।’ (মুসলিম)
তাহাজ্জুদ সালাত দুই রাকাত থেকে বার রাকাত পর্যন্ত পড়ার প্রচলন রয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হজরত নবী করিম (সা.) রমজান এবং রমজানের বাইরে আট রাকাতের বেশি কিয়াম করতেন না।’ হাদিসের ব্যাখ্যাকাররা এই বর্ণনার ব্যাখ্যায় কিয়াম বলতে তাহাজ্জুদের নামাজকেই বুঝিয়েছেন। নবী করিম (সা.) এই আট রাকাত সব সময় শেষ রাতে আদায় করতেন। এটি ‘কিয়ামুল লাইল’ নামে প্রচলিত রয়েছে এবং আল্লাহওয়ালাদের অনেকেই রমজানে ‘কিয়ামুল লাইল’ জামাতের সঙ্গে আদায় করে থাকেন।
তাই তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য শেষ রাতে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। হঠাত্ করে গভীর রাতে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা নিতান্তই কঠিন কাজ। তবে বছরের এগারো মাস শেষ রাতে জেগে তাহাজ্জুদ পড়া কষ্টকর হলেও রমজানে এটি মোটেও কঠিন নয়। রমজান মাসে যেহেতু শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার জন্য জাগতে হয়, তখন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার একটি সুবর্ণ সুযোগ চলে আসে। এ রমজানে অভ্যস্ত হয়ে সারা বছর তাহাজ্জুদের আমল জারি রাখা সম্ভব। এ সুযোগ কাজে লাগানোর বিকল্প নেই।