কোহলি-রোহিতকে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিলো ভারত

কোহলি-রোহিতকে ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিলো ভারত

ছবিঃ সংগৃহীত।

দ্বিতীয় ম্যাচটা হেরে যাওয়ার কারণে তুমুল সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিলো ভারতীয় ক্রিকেট দলকে। এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিলো দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলিকে। কিন্তু তাদের ছাড়া দলের অবস্থা কী হতে পারে সেটা বোঝা গেছে দ্বিতীয় ম্যাচে।

যদিও ভারতীয় দলের যে এটাই আসল চরিত্র নয়, তা এক ম্যাচ পরই বুঝিয়ে দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়ারা। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এসে ঠিকই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আবারও প্রমাণ করলো ভারত। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বলতে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় দল। ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল।

দ্বিতীয় ম্যাচে হারার পর তৃতীয় ম্যাচেও পরীক্ষা-নীরিক্ষার পথ থেকে সরে আসেনি ভারতীয় দল। বিশ্বকাপের আগে জুনিয়রদের সুযোগ দিতে মঙ্গলবারও মাঠে নামলেন না রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। তবুও শাই হোপের দলকে রীতিমত বিধ্বস্ত করে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো ভারত।

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ। তবে ভারতকে অল্প রানে বেধে রাখার আশায় জল ঢেলে হার্দিক পান্ডিয়ার দল তুললো ৫ উইকেটে ৩৫১ রান।

দুই ওপেনার ইশান কিশান এবং শুভমান গিল ওপেনিং জুটিতে তুললেন ১৪৩ রান। ইশানের ব্যাট থেকে এল ৬৪ বলে ৭৭ রানের আগ্রাসী ইনিংস। আটটি চার এবং তিনটি ছক্কা এল তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের ব্যাট থেকে। সিরিজে তিনটি ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করলেন ইশান। সেঞ্চুরি পেলেন না শুভমান। তিনি ৯২ বলে ৮৫ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। ১১টি বাউন্ডারি দিয়ে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি।

তিন নম্বরে নেমে রুতুরাজ গায়কোয়াড় (৮) রান পাননি। চার নম্বরে নেমে সাঞ্জু স্যামসন করলেন ৪১ বলে ৫১ রান। দু’টি চার এবং চারটি ছক্কা মারলেন তিনি। প্রথম দু’ম্যাচে ব্যর্থতার পর ত্রিনিদাদের ২২ গজে রান এল হার্দিকের ব্যাটে। ৫২ বলে ৭০ রান করে অপরাজিত থাকলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। চারটি চার এবং পাঁচটি ছক্কা মারলেন হার্দিক। সূর্যকুমার যাদবও দ্রুত রান তুললেন ছয় নম্বরে নেমে। তাঁর ৩০ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে রয়েছে দু’টি করে চার এবং ছয়। শেষ পর্যন্ত হার্দিকের সঙ্গে ২২ গজে ছিলেন রবীন্দ্র জাডেজা (অপরাজিত ৮)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনোও বোলারই এদিন ভারতীয় ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলতে পারেননি। সকার বলই সহজে খেলেছেন ভারতীয়রা। স্বাগতিকদের সফলতম বোলার রোমারিয়ো শেফার্ড। ৭৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি। একটি করে উইকেট পেয়েছেন অ্যালজারি জোসেফ, গুদাকেশ মোতি এবং ইয়ানিক কারিয়া।

জয়ের জন্য ৩৫২ রান করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৬ সালের পর ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবার এক দিনের সিরিজ জয়ের হোপদের আশা সাত ওভারের মধ্যেই শেষ করে দিলেন মুকেশ কুমার। পশ্চিম বাংলার এই পেস বোলার পরপর ফিরিয়ে দিলেন ব্রেন্ডন কিং (০), কাইল মায়ার্স (৪) এবং হোপকে (৫)। মুকেশের দাপুটে বোলিংয়ে ১৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ইনিংসের শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত সেই চাপ আর সামলাতে পারেনি স্বাগতিকরা। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ এবং সিরিজ হারলেন তারা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও ব্যাটারই ঘরের মাঠের ২২ গজে দাঁড়াতে পারলেন না। ব্যতিক্রম শুধু অ্যালিক আথানাজে। তিন নম্বরে নেমে তিনি কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনও সতীর্থের সহায়তা পেলেন না। কুলদীপ যাদবের বলে আউট হওয়ার আগে তিনি তিনটি চারের সাহায্যে ৫০ বলে করলেন ৩২ রান। তাতে অবশ্য লাভ কিছু হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কেসি কার্টি (৬), শিমরন হেটমেয়ার (৪), শেফার্ডেরা (৮) উইকেটে এলেন যেন নিয়মরক্ষা করতে।

মুকেশের পর জয়দেব উনাদকাট এবং শার্দূল ঠাকুরও ক্রমাগত বিব্রত করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটারদের। কখনও বল সুইং করিয়ে। আবার কখনও গতির হেরফের করে। আবার কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাডেজার স্পিনের সামনেও অসহায় দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ব্যাটারদের। তার মধ্যেও কিছুটা চেষ্টা করলেন কারিয়া (১৯), জোসেফরা (২৬), মোতি ( অপরাজিত ৩৮)।

নবম উইকেটের জুটিতে মোতি এবং জোসেফ যোগ করলেন ৫৫ রান। তাদের জুটি কিছুটা হলেও মান রাখল আয়োজকদের। শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ইনিংস শেষ হল ১৫১ রানে। দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেটারদের মধ্যে যে লড়াকু ক্রিকেট দেখা গিয়েছিল, এদিন এর ধারে কাছে যেতে পারলেন না তারা।

শেষ পর্যন্ত মুকেশ ৩ উইকেট নিলেন ৩০ রান খরচ করে। ভারতের সফলতম বোলার অবশ্য শার্দূল। তিনি ৩৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিলেন। ১৬ রানে ১ উইকেট উদানকাটের। ২৫ রান দিয়ে ২ উইকেট কুলদীপ যাদবের। প্রথম একাদশে না থাকলেও কিছুক্ষণের জন্য ফিল্ডিং করতে নামেন কোহলি।