মানবপাচার বন্ধে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রয়োজন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মানবপাচার বন্ধে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রয়োজন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মানবপাচার বন্ধে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রয়োজন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কেউ যাতে পাচারের শিকার না হয় সেজন্য ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে। শুধু উদ্ধার, প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়।বুধবার (২ আগস্ট) বিশ্ব পাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ (এমও এইচএ)-এর সহায়তায় বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন (বিডিইউএনএনএম) -এর কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পার্সনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ (সিটিআপি-টিডব্লিউজি) ঢাকায় এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে। ‘পাচারের শিকার সকলের পাশে থাকব, বাদ যাবে না কেউ’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সংলাপটি আয়োজন করা হয়। মানবপাচার মোকাবিলায় একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মানবপাচারসহ সংগঠিত অপরাধ দমনে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও সমন্বিত পদক্ষেপের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, মানবপাচার মামলার অন্যান্য ধরনের দুর্বলতা এবং মূল কারণগুলো মোকাবিলার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা ও তাদের কল্যাণে একটি ভাগ করা দায়িত্ব পালনে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের টেকসই মনোযোগ প্রয়োজন।’সংলাপে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।তিনি বলেন, তারা মানবপাচার প্রতিরোধে তাদের জাতীয় কর্তৃপক্ষকে আরও কার্যকর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এর জন্য তারা সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।

নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, অভিবাসন প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এটিকে সহজ, টেকসই ও সময়োপযোগী করতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ‘আমরা আরও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসহ ই-পাসপোর্ট চালু করেছি।’কোভিড-১৯ মহামারি মানবপাচারকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ সময় এ ধরনের অপরাধ কর্তৃপক্ষের নজরে কম আসায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইউএনওডিসি গ্লোবাল রিপোর্ট অন ট্রাফিকিং ইন পারসন্স-২০২২ অনুসারে, সামগ্রিকভাবে পাচারের শিকার ৪১ শতাংশ ভুক্তভোগী কঠিন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সক্ষম হয়। তারা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছায়। বাকিদের ক্ষেত্রে পাচারবিরোধী প্রতিক্রিয়া কম লক্ষ্য করা যায়।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস সরকারকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাসহ পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া সমস্ত ব্যক্তির জাতীয় সুরক্ষা পরিষেবা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাচারের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্ত করে রেফার করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা তৈরি অব্যাহত রাখা ও পাশাপাশি তদন্ত করার উপর দেন তিনি। একই সঙ্গে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করার উপরও জোর দেন তিনি।

ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা বলেছেন, ‘মানবপাচার সংক্রান্ত ইউএনওডিসির সর্বশেষ গ্লোবাল রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী পাচারের শিকারদের শনাক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে পাচারের সঙ্গে জড়িতদেরও শনাক্ত করতে হবে। এই জঘন্য অপরাধের অবসান ঘটাতে পাচারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সহায়তা করতে এবং বিচারের জন্য আমাদের একসঙ্গে আরও কিছু করতে হবে।’

বিডিইউএনএনএম ও অফিসার ইন-চার্জ, আইওএম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি বলেন, মানবপাচার একটি ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং সংকটের সময়ে পাচারের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্বলদের ক্ষেত্রে।তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২০ সাল থেকে এটি দেখেছি যেহেতু বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারিতে সাড়া দিয়েছে। আমাদের আউটরিচ প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে হবে এবং পাচারের শিকার প্রত্যেকের জন্য সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) মো. খায়রুল আলম শেখ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মীর খায়রুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা(এসবি) অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শ মো. মনিরুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ঈশিতা রনি;  ইউএনওডিসি -এর জাতীয় কর্মসূচি সমন্বয়কারী মাহদী হাসান; সিটিআইপি-টিডব্লিউজি -এর সভাপতি; উইনরক ইন্টারন্যাশনালের ইউএসএআইডির ফাইট স্লেভারি অ্যান্ড ট্রাফিকিং-ইন-পার্সন (এফএসটিআইপি) অ্যাক্টিভিটি পার্টির প্রধান সুসান স্ট্যাম্পারও আলোচনায় অংশ নেন।জাতীয় সংলাপে মানবপাচার এবং অভিবাসীদের চোরাচালান সংক্রান্ত জটিল সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা ও সহায়তার জন্য ব্যাপক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র : ইউএনবি