নাইজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে আনছে

নাইজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে আনছে

নাইজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে আনছে

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস কর্মীদের একাংশকে সরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে। দেশটিতে গত সপ্তাহে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিল।নাইজার থেকে এরই মধ্যে শত শত বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে গত রবিবার ফরাসি দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালায়।

অভ্যুত্থানের নেতা জেনারেল আবদুরাহমানে টিচিয়ানি তার দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।বৃহস্পতিবার নিজেরের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় অভ্যুত্থানের সমর্থনে অনেক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি আছে।ফ্রান্স হচ্ছে নাইজারের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক। তারা নাইজারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার কাছে তাদের দূতাবাসের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চেয়েছে।

রবিবার বিক্ষুব্ধ জনতা ফরাসি কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালায়। এরপরই ফ্রান্স তাদের নাগরিকদের নিয়ে আসার জন্য উদ্ধারকারী ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে।রাজধানী নিয়ামির একজন বাসিন্দা বিবিসিকে জানিয়েছেন, সেখানে এখনো পর্যন্ত সবকিছু শান্ত বলেই মনে হচ্ছে।“লোকজন অন্যদিনের মতো তাদের কাজ-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে,” বলছেন সিডিন।

তিনি আরও জানান, কিছু দূতাবাসের চারপাশে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি আছে।নাইজারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মারাদির একজন বাসিন্দা সাদিসু জানান, সেখানকার অবস্থাও একই রকম। তবে বাইরে থেকে দেখলে অবস্থা শান্ত মনে হলেও পরিস্থিতি আসলে থমথমে।“পরিস্থিতি বেশ বদলে গেছে, ফলে লোকজন বেশ উদ্বিগ্ন। লোকজন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছে, কী ঘটবে তা নিয়ে চিন্তায় আছে।”

নাইজার বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ। আর এই দেশটির অবস্থানও উত্তর আফ্রিকা এবং ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন রুটের মাঝখানে।এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিন্কেন নাইজারের ক্ষমতা থেকে অপসারিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ বাজুমের সঙ্গে বুধবার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলছে, নাইজারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক, সেটাই তারা চায়।

মার্কিন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, যদিও নাইজারের রাজধানী থেকে দূতাবাস কর্মীদের একাংশকে সরিয়ে আনা হচ্ছে, সেখানে মার্কিন দূতাবাস খোলা থাকবে।“আমরা নিজেরের জনগণের প্রতি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা সেদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আমাদের কথা-বার্তা চালিয়ে যাব।”

নাইজারে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ত্রাণ এবং নিরাপত্তা সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্র তার অন্যতম। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে অভ্যুত্থানের কারণে সেখানে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত রাখা হতে পারে।নাইজারের রাজধানী নিয়ামিতে ব্রিটিশ দূতাবাসও ঘোষণা করেছে যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে তারাও তাদের দূতাবাসে কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনবে।ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে নিজেরে আর্থিক এবং উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেছে।

পশ্চিম আফ্রিকার ১৫টি দেশের অর্থনৈতিক জোট দ্য ইকোনমিক কমিউনিটি অব আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) এরই মধ্যে নাইজারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে আছে নাইজারের সঙ্গে সবধরনের বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ করা, এবং আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোতে দেশটির সমস্ত সম্পদ জব্দ করা।নাইজারের বিদ্যুৎ কোম্পানি জানিয়েছে, প্রতিবেশী নাইজেরিয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, এর ফলে ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নাইজেরিয়া অবশ্য এই খবর নিশ্চিত করেনি।

টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বুধবার জেনারেল টিচিয়ানি বলেছেন, তাদের নতুন সরকার ‘এসব নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে এবং কোন হুমকির কাছে মাথা নত করবে না, সেই হুমকি যেখান থেকেই আসুক না কেন।”তিনি বলেছেন এসব নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য নিজেরের নিরাপত্তা বাহিনীকে অপমান করা এবং দেশটির শাসনকাজ পরিচালনা অসম্ভব করে তোলা।

ইকোওয়াসের সামরিক প্রধানরা বুধবার নাইজেরিয়ায় এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। যদিও তারা বলেছেন, একেবারে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে তারা এরকম সামরিক হস্তক্ষেপের কথা ভাবছেন।জেনারেল টিচিয়ানি ছিলেন মি. বাজুমের প্রেসিডেনশিয়াল গার্ড বাহিনীর প্রধান। তিনি গত ২৬ জুলাই ক্ষমতা দখল করেছিলেন এই বলে যে তিনি নিজেরের ‘ক্রমাগত এবং অবশ্যম্ভাবী বিনাশ’ ঠেকাতে চান।

এই অভ্যুত্থানের পর নিজেরে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বড় বড় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ফ্রান্স এখনো নিজেরের বড় সহযোগী দেশ। এসব বিক্ষোভে রাশিয়ার পক্ষে সমর্থনের প্রকাশ দেখা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব অনেক বেড়েছে।রবিবার শত শত বিক্ষোভকারী রাজধানী নিয়ামির ফরাসি দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয় এবং অনেকে সেখানে ‘রাশিয়া দীর্ঘজীবী হোক’, ‘পুতিন দীর্ঘজীবী হোক’ এবং ‘ফ্রান্স নিপাত যাক’ বলে শ্লোগান দেয়।এরা ফরাসি দূতাবাসের সীমানা দেয়ালে আগুন দেয়।

গতকাল বুধবার একটি উদ্ধারকারী ফ্লাইটে ২৬২ জন প্যারিসে এসে পৌঁছায়। ফরাসি সরকার এদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করেছিল। ইতালিও একটি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে যেটি ৮৭ জনকে নিয়ে রোমে অবতরণ করেছে।নিজেরে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সাহেল অঞ্চলে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজের ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।

সূত্র :  বিবিসি