কক্সবাজারের জেলা জজ ইসমাইলকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত

কক্সবাজারের জেলা জজ ইসমাইলকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত

সংগৃহিত ছবি।

বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠাসহ জামিন দেওয়ার ঘটনায় আলোচিত কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে বদলি করা হয়েছে। তাকে কক্সবাজার থেকে বদলি করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (৯ আগস্ট) আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দারের সই করা প্রজ্ঞপনে এমন তথ্য জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে মারধর ও ভাঙচুরের একটি মামলায় দুই আসামিকে শুনানি ছাড়াই জামিন দেওয়ার ঘটনায় জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে আবারও তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৬ আগস্ট তাকে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ৮ আগস্ট এ আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৭ জুলাই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইনভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আইন লঙ্ঘন করে জামিন দেওয়া ৯ আসামির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে পর পর দুদিন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইনভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার জেলা জজকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট।

গত ২০ জুলাই শুনানিতে কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপলো না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। জেনে শুনে আপনি ক্রাইম করেছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

শুনানিতে জেলা জজের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত। এ পর্যায়ে হাইকোর্ট জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডেকে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন জেলা জজ বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বলেন, ভুলে এটা হয়েছে। তখন আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে-বুঝে ক্রাইম করেছেন।

এসময় তার আইনজীবীরা আবারও ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাচ্ছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়।

গত ২১ জুন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইনভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একইদিনে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেন হাইকোর্ট। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন।