বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানি দায়িত্ব

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানি দায়িত্ব

ছবিঃ সংগৃহীত।

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়ে আছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেক জায়গায় পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি এতটাই বিপদসঙ্কুল যে, চোখে না দেখলে মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুসলিম হিসেবে আমাদের ওপর অনেক দায়িত্ব বর্তায়। কোনো পরিবারে কেউ অসুস্থ বা উপার্জনহীন হয়ে পড়লে যেমন অন্যদের ওপর সেবা-শুশ্রূষা ও দুস্থের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব বর্তায়- তেমনি গোটা মানবজাতি, বিশেষত গোটা মুসলিমসমাজ এক পরিবারের মতো। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই মুমিনরা একে অন্যের ভাই। (সূরা হুজরাত, আয়াত ১০) বন্যার্ত বিপদগ্রস্তরাও আমাদেরই ভাই। তাদের কথা ভাবলে কষ্টে বুক ফেটে যায়। তাই আমরা যারা সামর্থ্যবান আছি, আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হলো বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। 

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, যে অর্থ তোমরা উপার্জন করেছ এবং যা কিছু আমি জমিন থেকে তোমাদের জন্য বের করে দিয়েছি, তা থেকে উত্কৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করো। তার পথে ব্যয় করার জন্য তোমরা সবচেয়ে খারাপ জিনিস বাছাই করার চেষ্টা করো না...’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৭)

সহযোগিতা যখন ধর্মীয় দায়িত্ব:

সমাজের বন্যাকবলিত বা দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা শুধু সামাজিক দায়িত্বই নয় এটা একজন মুসলিমের ধর্মীয় দায়িত্বও বটে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের ধন-সম্পদে আছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।' (সুরা: জারিয়াত, আয়াত:১৯) 

রাসুল (সা.) বলে গেছেন, যে ব্যক্তির অতিরিক্ত বাহনজন্তু বা বাহনের খালি জায়গা আছে, সে যেন বাহনহীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। কোনো ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত পাথেয় থাকে, সে যেন পাথেয়হীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। 

বর্ণনাকারী বলেন, নবীজি এভাবে আরও বহু সম্পদের কথা বলেছেন, তাতে আমাদের মনে হতে লাগল যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই।  (মুসলিম, হাদিস: ৪৪০৯)

এটিই ফিতরাত । এটিই ইসলামের শিক্ষা। দুঃখী মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা, বিপদগ্রস্ত লোকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হল ফিতরাত। এটিই মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি। সে-ই প্রকৃত মানুষ, যে অন্য মানুষের দুঃখে দুঃখী হয়। বিপদগ্রস্তের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে আসে।

তাই দুঃখী-দরদী মানুষের সেবায় সহযোগিতায় এগিয়ে আসা মানুষের ফিতরাত তথা স্বভাবজাত বিষয়। 

ইসলাম যেহেতু ‘দ্বীনে ফিতরত’ তথা স্বভাবজাত ধর্ম, তাই মানবতার সর্বোচ্চ শিক্ষা রয়েছে ইসলামে। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানবতার মুক্তির দূত ও রহমাতুল লিল আলামীন। 

তিনি নিজে যেমন পরোপকারে সর্বাগ্রে থাকতেন তেমনি মুসলমানদের জন্য রেখে গেছেন কল্যাণকামিতা ও সহমর্মিতায় উদ্বুদ্ধকারী অনেক অমীয় বাণী। 

যেমন এক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, দয়া, মায়া ও হৃদ্যতায় মুমিনদেরকে দেখবে এক দেহের মতো। কোনো এক অঙ্গ আক্রান্ত হলে তার সারা শরীর নির্ঘুম ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।  (বুখারি, হাদিস ৬০১১)

আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া:

বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধ্যানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের আল্লাহর দিকে রুজু হওয়াও জরুরি। গুনাহ ও পাপাচার থেকে তওবা করে আল্লাহ তাআলার কাছে বিনীত সমর্পিত হওয়া ঈমানের দাবি। 

অন্যের দুঃখ-কষ্ট থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ প্রার্থনা করাও আমাদের আশু কর্তব্য।

কতভাবেই তো মানুষের জীবনে বিপদ আসতে থাকে। যে কোনো বিপদই কষ্টের। কাজেই আসুন আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিরাপত্তা প্রার্থনা করি আর সাধ্যানুযায়ী আমাদের বিপদগ্রস্ত ভাই-বোনের পাশে দাঁড়াই।

 আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দিন, আমিন।

লেখক: ইসমাঈল সিদ্দিকী, শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।