ভারতে উগ্রবাদীদের ভয়ে গ্রাম ছাড়ছে মুসলিমরা

ভারতে উগ্রবাদীদের ভয়ে গ্রাম ছাড়ছে মুসলিমরা

সংগৃহীত

ভারতের বিহার প্রদেশের শুরুগ্রাম। হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে বসবাস করে। অন্যান্য এলাকার মতো এখানেও হিন্দুদের অবস্থান শক্ত। উগ্রবাদীদেরও অভাব নেই। তবুও স্থানীয় মুসলিমরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা এড়িয়ে চলতে বদ্ধ পরিকর। কিন্তু বিজেপীর ধর্মীয় উস্কানিমূলক নানা কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য দিন দিন উগ্রবাদীদের অতিউৎসাহী করে তুলছে।

নানা অজুহাতে শুরু হলো কথিত ‘অবৈধ নির্মাণ’ রোধ অভিযান। এ সময় উগ্রবাদীরা গুঁড়াতে শুরু করে মুসলিমদের বসতঘর। তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে মুসলিমরা। প্রতিবাদে বের করে শান্তিপূর্ণ মিছিল। কিন্তু তাতে হাঙ্গামা বাধায় উগ্রবাদীরা। মিছিলকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে শুরু করে ইট-পাটকেল। এতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

এ সহিংসতায় ছয়জন নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় আরো ৮৮ জন। এ ঘটনায় ২৩০ জনকে আটক করে পুলিশ।

সহিংসতা শুরু হলে পালিয়ে যান ইমরান আলী। দুই সপ্তাহ পর ফেরেন বাড়িতে। তখন পরিবারের লোকজন তাকে খুব অনুরোধ করছিলেন, তিনি যে বাড়িতে না থাকেন। যেখানে ছিলেন, অবিলম্বে যেন সেখানে ফিরে যান।

শহর ছেড়ে যাওয়ার সময় আহমাদ খান নামের এক মুসলিম বলেন, ‘হিন্দু দল প্রকাশ্যে আমাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। শত শত লোকের মধ্যে হিন্দু দলগুলো মুসলমানদের বয়কট করার ঘোষণা দিচ্ছে। আমাদের দোকান থেকে কিছু কিনছে না। বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে না ইত্যাদি। তারা আমাদের ব্যবসা ধ্বংস করে। শত শত মুসলমান ইতোমধ্যে গুরুগ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তাদের মধ্যে কয়েকজন ফিরে আসবে। পুলিশ ও প্রশাসন দেশে মুসলমানদের রক্ষা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হিন্দুরা মনে করে যে এই দেশের সবকিছুই তাদের। পুলিশ, প্রশাসন, এমনকি রাস্তাঘাটেও যেন আমাদের মুসলমানদের কোনো অধিকার নেই।’

নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে অন্য একজন বলেন, ‘অধিকাংশ হিন্দু বিশ্বাস করে যে নূহের লোকেরা দাঙ্গায় জড়িত ছিল। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বক্তব্য। হিন্দুদের মতো আমরা মুসলমানরাও সমানভাবে ভারতীয়, এটা তারা স্বীকার করে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘যাত্রার সময় হিন্দুরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছিল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য একজন বলেন, তখন গুরুগ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। জনতা রাস্তায় তাণ্ডব চালাচ্ছিল। হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্লোগান দিচ্ছিল। মুসলিম ঝুপড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে সহিংসতা চালাচ্ছিল। গুরুগ্রাম পুলিশ দাঙ্গা থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।

উল্লেখ্য, দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর গুরুগ্রামে ঝোপঝাড় ও মুসলমানদের স্ক্র্যাপের দোকানে আগুন দেয়া হয়। গুরুগ্রামের সেক্টর-৫৭-এ একটি নির্মাণাধীন মসজিদকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এ সময় পাঁচজনকে হত্যা করা হয়, যাদের মধ্যে ওই মসজিদের ইমামও রয়েছেন। আরো অনেকেই আহত হয়েছে।

সূত্র : মুসলিম মিরর